পুবের কলম প্রতিবেদক বিক্ষিপ্ত অশান্তির মধ্যে রবিবার সম্পন্ন হয় রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার দ্বিতীয় দফায় পুর-নির্বাচন। এদিন সকাল ৭টা থেকে ২০টি জেলায় শুরু হয়েছে ভোটাভুটি। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জেলা থেকে টুকটাক অশান্তির খবর ছড়ায়। কোথাও কোথাও ছাপ্পা ভোট ও মারধরের অভিযোগ তুলে সরব হয় বিরোধীরা। যদিও শাসকদলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়- কোথাও তৃণমূলের পক্ষ থেকে গণ্ডগোল করা হয়নি। বিরোধীরাই অশান্তি করেছে। অবশ্য ১০৮টি পুরসভার ৪টিতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে শাসক দল।
উলুবেড়িয়া মোটের উপর উলুবেড়িয়া পুরসভার ভোটপ্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবেই মিটল। ভোটের দিন দলীয় রঙ ভুলে সৌজ্যেনের ছবি দেখা যায় জেলায়। যেমন- উলুবেড়িয়া পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী ইনামূর রহমান ও ওই ওয়ার্ডের ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী অনন্ত সাঁতরা– কংগ্রেসের রওসান আলি শা ভোটকেন্দ্রের বাইরে বসে পারস্পরিক সৌজন্য বিনিময় করেন। এই রকম দৃশ্য দেখা গেল উলুবেড়িয়া পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের চেঙ্গাঈল হাইমাদ্রাসার বুথেও। একই ক্যাম্পাসে ৭টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ৫ জন প্রার্থী। এই রকম আরেকটি সৌজন্যের ছবি ধরা পড়ে পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে।
সৌজন্যের এই ছবির মাঝেও ভোটদানকে কেন্দ্র করে অভিযোগ-পালটা অভিযোগে শামিল হল— তৃণমূল থেকে শুরু করে কংগ্রেস– বিজেপি– সিপিএম। এদিন সকাল থেকে উলুবেড়িয়া পুরসভার ৩২টি ওয়ার্ডে ভোটদান শুরু হয়। দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন বুথ থেকে অভিযোগ আসতে শুরু করে। উলুবেড়িয়া পুরসভা ২৭ নং ওয়ার্ডের বিডিও অফিসের ২০৭ নং বুথে ইভিএম ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে কংগ্রেসের দিকে।
কাঁথি মহিলা ক্যাডার দিয়ে ছাপ্পা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে। এমনকী কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে কাঁথির একের পর এক ওয়ার্ডে ঘুরে শুভেrদু অধিকারীর ছোট ভাই সৌম্যেrদু অধিকারী সন্ত্রাসের চেষ্টা চালায় বলেও অভিযোগ। যদিও কোনও বড়সড় অশান্তি ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে কাঁথিতে। শাসকদলের অভিযোগ– সামান্য যেটুকু উত্তেজনা ছড়িয়েছে তার জন্যে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেrদু অধিকারীর ভাই ও বিজেপি কর্মীরাই দায়ী। সকাল থেকে একডজন জওয়ান এবং গাড়ি নিয়ে এলাকায় এলাকায় ঘোরা নিয়ে সৌম্যেrদু এবং তাঁর দেহরক্ষীদের সঙ্গে বচসা বাধে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরির। অখিলকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। অখিল গিরির দাবি– সকাল থেকে বিজেপি প্রার্থীর ব্যবহারের গাড়ি নিয়ে অবৈধভাবে ঘুরছেন সৌম্যেrদু। উনি নিজে প্রার্থী হননি– তার পরেও বুথে গিয়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। যুব তৃণমূল নেতা তথা কাঁথি পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সুপ্রকাশ গিরির অভিযোগ– ‘পরাজয় বুঝে শুভেrদু অধিকারী নয়া কৌশল নিয়েছেন। মহিলা ক্যাডারদের দিয়ে বুথ জ্যাম করে ছাপ্পা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
ডায়মন্ড হারবার সংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থকরা মিলিত হয়ে যেন পুরভোটে সৌজন্য দেখাল ডায়মন্ড হারবার। কোনও ঝগড়া নয়– ঝঞ্ঝাট নয় বরং এক দেহে হল লিন। ভোটের ময়দানে সবাই প্রয়োগ করুক গণতান্ত্রিক অধিকার এটাই নির্বাচন কমিশনের দাওয়াই। তাই মেনে সিপিএম– কংগ্রেস– বিজেপি প্রার্থীরা ভোটের সময় যে যার কাজ সেরে একসঙ্গে বসে বার্তা দিলেন কোনও সংঘর্ষ বা সংঘাত নয়– ভোট সবার যে জিতবে ওই সিকেন্দার। বিজেপির শুকদেব হালদার– সিপিএমের সুব্রত বসু– তৃণমূলের প্রণব দাস– অরুময় গায়েন– জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ উমাপদ পুরকাইত– মহিলা নেত্রী মনমহিনীরা এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন। নির্বাচন দফতর সূত্রে জানা যায়–ডায়মন্ড হারবার পুরসভায়১৬টি ওয়ার্ডে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশ। কোনও রকম অশান্তি ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে ভোটাভুটি।
হুগলি কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে হুগলি জেলার ১২টি পুরসভায় নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবেই হয়। আরামবাগ পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুপাড়ায় বিজেপি কর্মীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল। ওই পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের দু’টি বুথে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার পালটা অভিযোগ ওঠে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ তোলেন নির্দল প্রার্থী লুৎফা বেগম। পাশাপাশি তারকেশ্বর পুরসভায় বিরোধীদের কোনও অস্তিত্ব ছিল না। তৃণমূলের আরামবাগ জেলা সাংগঠনিক সভাপতি তথা তারকেশ্বরের বিধায়ক রামেrদু সিংহরায় বলেন– পুরসভাগুলিতে বিরোধীদের কোনও অস্তিত্ব নেই। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য আরামবাগ মহকুমা শাসকের অফিসের সামনে বিজেপি অবস্থান-বিক্ষোভের নামে নাটক করেছে।