সেখ কুতুবুদ্দিন
গ্রাম থেকে শহর। বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি, খুন , ছিনতাই অহরহ ঘটার অভিযোগ ছিল। রাস্তাঘাটে যানজট তৈরি হত। সেই অভিযোগের নিরসন ঘটাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়োগ করেছেন ‘সিভিক ভলেন্টিয়ার’। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে বিশেষজ্ঞ মহল। সিভিক ভলান্টিয়ারা রাত-বিরেতে রাস্তার মোড়ে-মোড়ে থাকার ফলে সুবিধা হয়েছে সাধারণ মানুষের। গভীর রাত পর্যন্ত যাতায়াতের সুযোগ হয়েছে।
সিভিক-ভলান্টিয়ারদের কোনও ট্রেনিং ছাড়াই নিয়োগ করা হলেও জেলা পুলিশ দফতরগুলিতে তাদের মৌ’িকভাবে কিছু টিপস দেওয়ার ব্যবস্থা করে জেলা পুলিশ দফতর। তাতেই গর্ব-সিভিক ভলান্টিয়ারদের। এতে পুলিশ সিভিক ভলান্টিয়াররা। সিভিকদের বক্তব্য, মু’্যমন্ত্রী আমাদের বেতন বাড়িয়েছেন, জেলাপুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে বিশেষ কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই আমরা ‘পুলিশকর্মীদের থেকেও কম নয়’ বলেও এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বক্তব্য।
ভালো কাজের পাশাপাশি বেআইনি কাজের অভিযোগ উঠছে সিভিকদের বিরুদ্ধে। অধিকাংশ সিভিক ভলান্টিয়াররা এ’ন স্থানীয় পুলিশ অফিসারদের থেকেও বেশি ‘পাওয়ার’ দেখাতে শুরু করেছে। যা সাধারণ মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই সাধারণ মানুষরা এ’ন দাবি করতে শুরু করেছে, সিভিক ভলান্টিয়ারদের এলাকা বদলি চালু করা হোক।
সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিজ এলাকাতেই ডিউটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিজের থানা এলাকা অথবা গ্রাম সংলগ্ন ক্যাম্প বা ফাঁড়িতে ডিউটি দেওয়া হয় তাদের। স্থায়ী পুলিশ কর্মীদের অনেকটা কাজই অলিখিতভাবে সিভিকদের দিয়ে করানোর অভিযোগ রয়েছে। বহু থানা বা ফাঁড়ির পুলিশ অফিসাররা অনেকটাই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে তাদের উপর। সিভিকদের বক্তব্য, গ্রামে কী ঘটছে, সমস্ত তথ্য পাঠাতে হয়। গ্রুপে আপলোড করতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিভিক কর্মী বলেন, পাঁচটার মধ্যে একটা খারাপ থাকলে সমস্ত দলটারই বদনাম হয়ে যায়। অনেকে গ্রাম বা এলাকা-ঘটিত আক্রোশ মেটানোর জন্য পুলিশ অফিসারদের ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সিভিকদের বিরুদ্ধে।
আরও অভিযোগ, গ্রামের মধ্যে বা আশপাশে ডিউটি করার ফলে প্রভাব কাটাচ্ছে তারা।
একটি ঘটনার দৃষ্টান্তের কথা উল্লে’ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, সিভিক ভলান্টিয়াররা এ’ন বহু এলাকা বা গ্রামের ‘বস’ হয়ে উঠেছে। যে পরিবারে সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছে। সেই পরিবার শত অপরাধ করলেও সব ‘মাফ’। তাছাড়া ভুল তথ্য দিয়ে পুলিশ অফিসার বা পুলিশকর্মীদের প্রভাবিত করে গ্রামের পছ¨ের পরিবারের অভিযোগ ‘সেভ’ করার কাজেও পিছপা না হওয়ার অভিযোগ ওঠে বারবার।
গ্রামের এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বক্তব্য, পুলিশ-অফিসার বা কর্মীদের ‘তাঁবেদারি’ করেই আমাদের টিকে থাকতে হয়। এতে অফিসাররা যা বলেন করতে হয়।
হাওড়া স্টেশন থেকে রামপুরহাট যাচ্ছিলেন এক পুলিশ কর্মী। তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। কিছু কথা বলতে না চাইলেও আলোচনার ফলে সব কথাই বললেন। সিভিকদের জন্য সাধারণ মানুষ গ্রামেগঞ্জে রাত-বিরেতে চলাফেরা করতে পারছেন। তবে কিছু সিভিক, তারা নিজেদের পুলিশ দাবি করে গ্রামে গ্রামে এমন ভাব দেখান যেন, তারাই গ্রাম বা এলাকাকে পরিচালনা করেন। পুলিশ কর্মী হয়েও তিনি বলেন, সিভিকদেরও বদলি চালু করা উচিত। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় চাকরি করার ফলে সিভিকের মধ্যেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অস্বচ্ছতা প্রবল হয়ে উঠছে। য’ন-ত’ন,যেখানে সেখানে বিভিন্ন কাণ্ড ঘটিয়ে বসছে। এতে প্রশাসনেরই বদনাম হচ্ছে। তাই অবিলম্বে এই বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শুক্রবার রাজ্য পুলিশের দফতর লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা পুবের কলমকে বলেন, সিভিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিনের দিন প্রকট হয়ে উঠছে। অবিলম্বে তা নিরসণের পদক্ষেপ প্রয়োজন। সিভিক ভলেন্টিয়ারদের সম্পর্কে বলেন, ওদের কোনও কন্ট্রোল পদ্ধতি নেই। ওরা অন্যায় করলে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তার সঠিক নির্দেশিকা নেই। সিভিকরা শুধু মাত্র ভলেন্টিয়ার, কোনও অনুষ্ঠান হলে যেমন ভলেন্টিয়ার থাকেন। এটা কোনও ‘চাকরি’ও নয়, শুধুমাত্র সেচ্ছাসেবক মাত্র। কোনও কনস্টেবল-এর বিরুদ্ধে অন্যায় করলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। পুলিশ কোনও অন্যায় করলে দায় থাকে। কিন্তু কোনও সিভিক অন্যায় করলে দায় কার থাকবে?
শুক্রবার রাজ্য পুলিশের দফতর লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা পুবের কলমকে বলেন, সিভিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিনের দিন প্রকট হয়ে উঠছে। অবিলম্বে তা নিরসণের পদক্ষেপ প্রয়োজন। সিভিক ভলেন্টিয়ারদের সম্পর্কে বলেন, ওদের কোনও কন্ট্রোল পদ্ধতি নেই। ওরা অন্যায় করলে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তার সঠিক নির্দেশিকা নেই। সিভিকরা শুধু মাত্র ভলেন্টিয়ার, কোনও অনুষ্ঠান হলে যেমন ভলেন্টিয়ার থাকেন। এটা কোনও ‘চাকরি’ও নয়, শুধুমাত্র সেচ্ছাসেবক মাত্র। কোনও কনস্টেবল-এর বিরুদ্ধে অন্যায় করলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। পুলিশ কোনও অন্যায় করলে দায় থাকে। কিন্তু কোনও সিভিক অন্যায় করলে দায় কার থাকবে?