পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বাংলার ক্রিকেট তথা ভারতীয় ক্রিকেটে প্রকৃত ‘কুল’ ক্রিকেটার হিসেবে ঋদ্ধিমান সাহাকে সবাই চেনেন। যদিও বর্তমান সময়ে ঋদ্ধি আর কুল নেই। তাঁর ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে মারাত্মক একটা ঝড়। নির্বাচক কমিটির তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বয়সের কারণে তাকে ভবিষ্যতে ভারতীয় দলে ভাবা হবে না। বাদ পড়েন ঘরের মাঠে আসন্ন শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকেও। আর তাতেই হঠাৎ প্রশ্নের মুখে পড়ে যায় ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক ঋদ্ধির ক্রিকেট কেরিয়ার। এরপর বুকে একরাশ অভিমান নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তিত্বকে সামনে রেখে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন তিনি। যেটা আবার পছ¨ হয়নি দেশের স্বনাম ধন্য এক ক্রীড়া সাংবাদিকের। তিনিই ঋদ্ধিকে নিজের ক্ষোভের কথা শুধুমাত্র তার পছন্দের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে, তার মতো করে তুলে ধরতে বলেছিলেন। যেটাতে ঋদ্ধি সহমত না হওয়ায় তাঁকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি পর্যন্ত দিয়ে বসেন সেই সাংবাদিক। সে ব্যাপারেই খোলা মনে পুবের কলম পত্রিকার সাংবাদিক সেখ আবুল হোসেনকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিলেন ঋদ্ধিমান সাহা।
প্রশ্ন : কেমন আছেন?
ঋদ্ধি : সবই তো জানেন, ঠিকই আছি।
প্রশ্ন : রঞ্জিতে খেলছেন না, শ্রীলঙ্কা সিরিজেও ভারতীয় দলে নেই, এখন কিভাবে সময় কাটাচ্ছেন?
ঋদ্ধি : এখন সময় পেলে কালীঘাট ক্লাবে চলে আসি। নিজে অনুশীলন করি। এখনকার বাচ্চাদের সঙ্গে সময়ও কাটাই। বাকিটা সময় পরিবারকে দিই।
প্রশ্ন : যখন শুনলেন আপনাকে টেস্ট দলে নেওয়া হচ্ছে না, শ্রীলঙ্কা সিরিজে দলে আপনার নাম নেই, পরিবারের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল ?
ঋদ্ধি : কেউ ভারতীয় দল থেকে বেরোতে চায় না। যেখানে আমি দীর্ঘদিন ভারতীয় দলে ছিলাম, হঠাৎ করে দলের বাইরে, বিষয়টা পরিবারের লোক মেনে নিতে পারছিল না। আমি অবশ্য এ নিয়ে খুব বেশি ভেঙে পড়িনি। কারণ, আমি এই ফিল্ড’টাকে ভালো করে জানি।
প্রশ্ন : জাতীয় দলের ফেরার মতো ফিট কি আপনি এই মুহূর্তে রয়েছেন?
ঋদ্ধি : দেখুন, জাতীয় দলে আমার আর ফেরার কোনও সুযোগ নেই। কারণ, তারা আমাকে জানিয়ে দিয়েছে, ভারতীয় দল গড়া নিয়ে তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় আমি নাকি নেই। তাই কতটা ফিট আছি, এই বিষয়টা তাদের কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়।
প্রশ্ন : বোর্ডের নির্বাচক কমিটির প্রধান চেতন শর্মা তো যারা বাদ পড়েছেন, তাদের সবাইকে রঞ্জির মাধ্যমে জাতীয় দলে আসার পরামর্শ দিয়েছেন।
ঋদ্ধি : এ কথাটা উনি অনেক পরে বলেছেন। তবে আমার সঙ্গে ওদের যা কথা হয়েছে, সেখানে ওরা জানিয়েছেন, জাতীয় দলে আমার আর কোনও চান্স নেই।
প্রশ্ন : এর মাঝে আবার একজন সাংবাদিকের সঙ্গে আপনি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন, বিষয়টা একটু খুলে বলবেন?
ঋদ্ধি : বিষয়টা তেমন কিছু নয়। ওটা সংঘাত নয়। আসলে উনি আমার একটা সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওনার সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্ল্যাটফর্ম ছিল ‘জুম’ কিংবা ‘স্কাইপি’। তার ওপর আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। রাস্তায় ছিলাম। ওই অবস্থায় সেটা সম্ভব ছিল না। আমি আসলে এই ক্লাব প্রাঙ্গনে সবার সঙ্গে খোলা মনে কথা বলতে পছন্দ করি। এখানে অনুশীলন করার পর কেউ যদি কথা বলতে চান, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলি। বাড়িতে গিয়ে আর ওসব ভালো লাগে না। ওই সাংবাদিককেও সেটাই বলেছিলাম। উনি মানতে চাইছিলেন না। উনি বলছিলেন, ‘জুম’ কিংবা ‘স্কাইপি’ তেই সাক্ষাৎকার নেব। অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে হবে না, শুধু আমাকেই সাক্ষাৎকারটা দাও। আমি আসলে সব সাংবাদিককে সমান নজরে দেখি। তাই ওনার ক্ষেত্রে আলাদা কিছু করিনি। তবুও বলেছিলাম, বাড়িতে গিয়ে যদি পরিস্থিতি ঠিকঠাক মনে হয় আমি দেব, নইলে সম্ভব হবে না। তার মধ্যে উনি আমাকে হুমকি দিয়ে বসলেন।
প্রশ্ন : আপনি কি সবার সামনে ওই সাংবাদিকের নাম আনবেন?
ঋদ্ধি : একেবারেই না।
প্রশ্ন : বোর্ড তো আপনার কাছ থেকে ওই সাংবাদিকের নাম জানতে চাইছে?
ঋদ্ধি : জানি সেটা। তবে আমি সেটা করতে চাই না। আমার এথিক্স সেটা মানা করে। আমার বাবা-মা কাউকে ক্ষতি করতে শেখায়নি। তাই আমি কারোর কেরিয়ার নষ্ট হয়ে যাক, সেটা আমি করবো না।
প্রশ্ন : সেহওয়াগ, হরভজন, রবি শাস্ত্রীরা চাইছেন, আপনি ওই সাংবাদিকের নাম সবার সামনে আনুন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমনটা করার সাহস না পায়।
ঋদ্ধি : এমন কথা শুনেছি। কিন্তু ওই যে বললাম, আমি ওই সাংবাদিকের নাম বলে তার পবিবারের কোনও ক্ষতি করতে চাই না। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে সে এমন কাজ আর করবে না। ভবিষ্যতে ফের এমন কিছু করলে, তার নাম আমি সবার সামনে আনব।
প্রশ্ন : এই সাংবাদিকের হুমকি দেওয়ার প্রসঙ্গটা কি আপনার জাতীয় দল থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টিকে ঢাকা দিয়ে ফেলছে না?
ঋদ্ধি : একদম ঠিক বলেছেন। আমার তো মনে হয় সেটাই হচ্ছে। এই ঘটনাটি সবার সামনে চলে আসার পর ওই বিষয়টি একেবারে পিছনে চলে যাচ্ছে। জানি না, এটা কেন হচ্ছে।
প্রশ্ন : এই কঠিন সময়ে কাকে কাকে পাশে পাচ্ছেন?
ঋদ্ধি : আমি ট্যুইট করার পর বিষয়টি সামনে চলে আসায় বহু মানুষ আমাকে সাপোর্ট করেছেন। প্রচুর সিনিয়র, জুনিয়র ক্রিকেটার আমাকে সমর্থন করেছেন। বহু সাংবাদিক রয়েছেন যারা এদেশে কিংবা বিদেশে থাকেন, তারাও আমার পাশে থেকেছেন। বড় বড় সেলিব্রিটিরাও আমাকে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। অনেকে সমর্থন করেছে, আবার অনেকেই সাপোর্ট করেনি। নিজেদের কথা রাখেননি।
প্রশ্ন : এ ব্যাপারে সিএবি আপনাকে সার্পোট করছে না।
ঋদ্ধি : সেটা সিএবি’র ব্যাপার। তারা আমার হয়ে বোর্ডের কাছে তদ্বির করবে, কি করবে না, সেটা তারাই জানে। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।
প্রশ্ন : এ বছরে কি রঞ্জি খেলা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?
ঋদ্ধি : এ বছর আমি রঞ্জি খেলবো না, সেটা জানিয়ে দিয়েছি। এ বছরটা পরিবারকে দেব। আমার স্ত্রী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এখনও পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। আমার দুটো বাচ্চা রয়েছে। তাদেরকে এখন সময় দেওয়াটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : তাহলে পরের মরশুমের রঞ্জি খেলবেন?
ঋদ্ধি : নিশ্চয় খেলবো। বাংলা টিম যদি সুযোগ দেয় খেলবো।
প্রশ্ন : আইপিএল মঞ্চকে কি কাজে লাগাবেন, জাতীয় দলের ফেরার জন্য?
ঋদ্ধি : আমি অবশ্য এই বিষয়টাকে কখনই এভাবে ভাবিনি। আইপিএলে ভালো খেললে জাতীয় দলে সুযোগ পাব, এমন ভাবনা আমার মনে কখনই আসেনি। আমার মাথায় একটা বিষয় থাকে, যে দলের হয়ে খেলি, সেখানে দলের জন্য কোনটা জরুরি, সেটাই করি।
প্রশ্ন : সামনের মাসে আইপিএল, তার আগেই এই সব ঝামেলায় কি আপনার প্রস্তুতিতে খারাপ প্রভাব ফেলছে?
ঋদ্ধি : একদমই নয়। আমরা পেশাদার খেলোয়াড়। অন্য কোনও বিষয়ের ভালো কিংবা খারাপ প্রভাব আমাদের পারফরম্যান্সে পড়তে দিই না। মাথায় রাখি, যে প্রতিযোগিতাতে অংশগ্রহণ করছি, সেখানে নিজের একশো শতাংশ উজাড় করে দিতে হবে। আর আমি সেটাই করি।
প্রশ্ন : বিসিসিআই সভাপতি তো আপনাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, জাতীয় দল থেকে নাকি আপনাকে বাদ পড়তে হবে না?
ঋদ্ধি : হ্যাঁ, বলেছিলেন। এর পাশাপাশি আপনাকে বুঝতে হবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা আমি কেন বলেছি? আমাকে ভালো পদের কেউ বিষয়টা জানতে চেয়েছিল। আমি তাকে সত্যিটাই জানিয়েছি। উনি যেটা আমাকে বলেছেন, সেটাই বলেছি। এতে অন্যায়ের কি আছে? উনি আমাকে মেসেজ করে জাতীয় দলে থাকার ব্যাপারে বলেছিলেন। খুব খুশি হয়েছিলাম। পরে সেটা না হওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছি। উনি তো আমাকে একবার মেসেজ করে বলতে পারতেন, এবারে না হলেও অন্য কোনও সময়ে ঠিক হবে। কিন্তু উনি আমাকে কিছুই জানাননি। তা সত্ত্বেও বলবো, বোর্ড সভাপতির প্রতি আমার কোনও অভিযোগ কিংবা ক্ষোভ নেই। শুধু উনি কেন, কারোর প্রতি আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমার নিজের ওপর বিশ্বাস আছে। আমি আবারও নিজেকে প্রমাণ করব।