নিজস্ব প্রতিনিধি: হার, হার, হার, হার…..। বঙ্গ বিজেপির মুখিয়ার দায়িত্ব নেওয়ার পরে দলকে এখনও পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখাতে পারলেন না সুকান্ত মজুমদার। সোমবার চার পুরনিগমের ভোটের ফলাফলেই স্পষ্ট বঙ্গ বিজেপির নয়া মুখিয়ার জমানায় ক্রমশই তলানিতে গিয়ে ঠেকছে দলের জনসমর্থন। আসানসোল ও শিলিগুড়ি পুরসভায় ভোট শতাংশের নিরিখে কোনওক্রমে দ্বিতীয়স্থান দখল করতে পারলেও বিধাননগর ও চন্দননগরে তৃতীয়স্থানে নেমে গিয়েছে। দুই পুরসভায় শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে পদ্ম শিবিরকে। আসানসোল ও শিলিগুড়িতে ফলাফল যথেষ্টই হতাশাজনক।
আর দলের ভরাডুবির পরেই ফের একবার বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সুকান্ত মজুমদারের অপসারণের দাবি উঠেছে। সদ্য দল থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত বিদ্রোহী বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার খোলাখুলিইভাবেই রাজ্য বিজেপির মুখিয়াকে নিশানা করে বলেছেন, ‘দলের ভরাডুবির দায়িত্ব অসহায় মজুমদারকে কী নেবেন?’ যদিও একের পর এক ভোটে তাঁর ‘সুযোগ্য’ নেতৃত্বে দলের ভরাডুবি ঘটলেও সভাপতির পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে যে যাবেন না তা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন বঙ্গ বিজেপির মুখিয়া সুকান্ত মজুমদার। ‘ফলাফলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই’ বলে দলীয় নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা চালিয়েছেন।
গত বছর বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পরেই রাজ্য বিজেপির সভাপতির পদ থেকে দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে প্রধান সেনাপতির দায়িত্বে নিয়ে এসেছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। দলের ভাঙন রোখার গুরুদায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু দলের ভাঙন তো রুখতে পারেননি, উল্টে তাঁর একাধিক সিদ্ধান্ত ভাঙনকে আরও ত্বরাম্বিত করেছে। দলের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার পরে ভবানীপুর সহ তিন বিধানসভা আসনের ভোট প্রথম অগ্নিপরীক্ষা ছিল বঙ্গ বিজেপির নয়া মুখিয়ার। সেই অগ্নিপরীক্ষায় ডাহা ফেল করেছেন তিনি। কয়েক মাসের মধ্যে দলের জেতা দিনহাটা, শান্তিপুর সহ চার বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়েছিল বিজেপি। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে শুধু জেতা আসন দলের হাতছাড়াই হয়নি, ভোট শতাংশের হারেও বামেদের কাছে দ্বিতীয়স্থান হারাতে হয়েছিল। বিধাননগর সহ চার পুরনিগমের ভোটে অন্তত শিলিগুড়িতে জয় পাওয়া যাবে আশাবাদী ছিলেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। কিন্তু চার পুরভোটেই চরম লজ্জার স্বাদ পেতে হয়েছে দলকে।
অথচ গত বিধানসভা ভোটে শিলিগুড়িতে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী শঙ্কর ঘোষ। এমনকী ভোটের নিরিখে পুরনিগমের ৩০টির বেশি আসনেও এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। এমনকী আসানসোলে দুটি বিধানসভায় জয়ী হয়েছিলেন পদ্ম শিবিরের প্রার্থীরা। ফলে ওই দুই পুরনিগমে মুখরক্ষার আশা করেছিলেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। শিলিগুড়িতে ৪৭টির মধ্যে পাঁচটিতে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থীরা। প্রাপ্ত ভোটের হার ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। চন্দননগরে ৩২টি আসনের মধ্যে একটিতেও জিততে পারেননি পদ্ম প্রার্থীরা। মাত্র ৯ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বিধাননগরের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটিতেও পদ্ম ফোঁটেনি। মাত্র ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আসানসোলে ১০৬টি আসনের মধ্যে মাত্র সাতটি আসনে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। প্রাপ্ত ভোটের হার ১৭ দশমিক ০২ শতাংশ। অর্থাৎ বিধানসভায় প্রাপ্ত ভোট ধরে রাখতে পারেননি বিজেপি প্রার্থীরা। ২২৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে মধ্যে মাত্র ১২টি ওয়ার্ডে জিততে সক্ষম হয়েছেন পদ্ম শিবিরের প্রার্থীরা।