দেবশ্রী মজুমদার, নলহাটিঃ স্বামী-স্ত্রী’য়ের মধ্যে ঝগড়া। দুজনের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মধ্যে মাঝখানে পড়লেন এক ছাত্রী। ঝগড়া পরিণতি পেল হিংস্রতায়। উত্তেজিত স্বামী, স্ত্রীকে মারতে বন্দুক থেকে চালালো গুলি। আর সেই গুলিতে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন এক ছাত্রী। মৃতা ছাত্রী জেলার এক সম্ভাবনাময় ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত। মঙ্গলবার এই ঘটনা ঘটেছে বীরভূমের নলহাটি পুরসভার তিন ওয়ার্ডের বিধু পাড়ায়। সূত্রের খবর, মৃতা ছাত্রীর সঙ্গে স্বামীকে গল্প করতে দেখেই স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে ঝগড়ার সূত্রপাত।
আর সেই পরিস্থিতি পেল পরিণতি পেল মর্মান্তিক ঘটনায়। ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত। অভিযুক্তের স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। মৃতা ছাত্রীর নাম নিকিতা খাতুন(১৯)। নিকিতা এক প্রতিশ্রুতিময় ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত। মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য দানা বেঁধেছে। কি কারণে বেঘোরে প্রাণ গেল এক জন প্রতিশ্রুতি সমপন্ন ডিস্ট্রিক্ট প্লেয়ারের তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনায় একদিকে হতবাক স্থানীয় মানুষ। অপরদিকে ঘটনা ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। ইতিমধ্যেই পলাতক অভিযুক্তের স্ত্রীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, নিকিতা খাতুনে্র যাওয়া-আসা ছিল অভিযুক্ত যুবক মহিউদ্দিন জামান ওরফে বুলুর বাড়িতে। বুলুর বাড়ি ছিল মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে। তবে নলহাটির বিধু পাড়ায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন বুলু। নিকিতা প্রায়ই আসত বুলুর বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে খেলা করতে। এদিনও আসে। এদিকে বুলুর সঙ্গে নিকিতাকে গল্প করত দেখেই রাগে ফেটে পড়ে তার স্ত্রী। বুলুর সঙ্গে স্ত্রীয়ের শুরু হয় তুমুল ঝগড়া। সেই সময় উত্তেজিত হয়ে স্ত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় বুলু। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সেই গুলি লাগে নিকিতার বুকে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় নিকিতা। এই ঘটনার পরেই পাঁচিল টপকে পালায় বুলু। অভিযুক্ত বুলুর সন্ধানে খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।
গুলিবিদ্ধ নিকিতাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে জানান।
নিকিতা একজন ডিস্ট্রিক্ট ভলিবল খেলোয়ার ছিলেন। নিকিতার কোচ বদরোজ্জা সেখ জানিয়েছন, খুবই সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় ছিল নিকিতা। আমি ট্রেনে ছিলাম। খবরটি পাওয়া মাত্রই খুব আঘাত পেয়েছি। খুব ভালো মেয়ে ছিল নিকিতা।
নিকিতার মা আমিনা বিবি জানিয়েছেন, মেয়েকে বললাম খেয়ে যেতে। ও বলল ওদের বাড়ি থেকে ঘুরে এসে খাচ্ছি। এর পর নিকিতা, বুলুদের বাড়ি না খেয়েই চলে যায়। তার কিছুক্ষণ পর গুলির আওয়াজ পাই। ছুটে গিয়ে দেখি মেয়ের নিথর দেহ মেঝেতে পড়ে আছে।
এদিকে ঘটনায় তদন্তের স্বার্থে পুলিশ মুখ খুলতে নারাজ। স্থানীয়রাও এই বিষয়ে কিছু বলছে না। বুলু ওরফে মহিউদ্দিন জামান কি পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তার কাছে বন্দুক কোথা থেকে এল তারও খোঁজ খবর চালাচ্ছে পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, যে নিকিতা প্রায় প্রতিদিনই বুলুর বাড়িতে আসত, তার সঙ্গে স্বামীকে গল্প করতে দেখে হঠাৎ স্ত্রীয়ের ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠার কারণ কি? কেনই বা স্ত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি চালাল বুলু। নিকিতা ও বুলুর মধ্যে কি সম্পর্ক ছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।