পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ সমাজ যতই ঘটা করে নারী দিবস পালন করুন, আধুনিক হয়েছে বলে সোচ্চার হোক, তাও প্রতিনিয়ত সমাজে ঘটে চলেছে নারকীয় ঘটনা। দুদিন আগেই দিল্লির মতো জায়গায় গণধর্ষণের পর নির্যাতিতাকে মাথা মুড়িয়ে, গলায় জুতোর মালা পরিয়ে ঘোরানো হয়েছিল। আজ বর্বরোচিত ঘটনার সাক্ষী থাকল বর্ধমানের কালনা। এখনও একশ্রেণির মানুষ যে নারীকে শুধু ভোগ্য পণ্য বলেই মনে করে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকল কালনার এই ঘটনা।
বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন কারণে শুরু হয় মারধর। এরপর পর পর দুবার কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়া। তাই স্ত্রীয়ের পর পর দু’বার কন্যার জন্ম দেওয়া অপরাধ বলেই গণ্য হয়েছিল শ্বশুরবাড়ির কাছে। বেড়েছিল অত্যাচারের সীমা। চলত মারধর থেকে শুরু করে শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা। কখনও আবার যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে স্ত্রীকে ‘শাস্তি’ দিয়েছে স্বামী। কখনও যৌনাঙ্গের পাশে সিরিষ কাগজ দিয়ে ঘষে এবং গৃহবধূর বুকের ওপর মারধর করে বেশ কয়েক মাস ধরেই পাশবিক অত্যাচার চালাচ্ছিল স্বামী। মুখ বুজে সব অত্যাচারই সহ্য করে আসছিলেন স্ত্রী। যার ফলে বেড়েছে অত্যাচারের মাত্রা। স্বামীর পুত্রসন্তানের চাহিদা না মেটায় চলেছে নিত্য নতুন শারীরিক অত্যাচার। শনিবার গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কালনা হাসপাতালে ভর্তি করে গৃহবধূর পরিবারের লোক। সেখানেই চিকিৎসা চলছে ওই মহিলার। গৃহবধূর শরীরের অবস্থা দেখে শিউরে উঠেছেন চিকিৎসকেরাই। গৃহবধূর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পরিবার সূত্রে খবর, ২০১৬ সালে ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় গৃহবধূর। বিয়ের পরপরই দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। একজন শিশুর বয়স পাঁচ অপর শিশুর বয়স দুই বছর। বারবার কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ায় শুরু হয় অত্যাচার। এমনকি স্বামী তাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করবে এমনও জানিয়েছিল।
ঘটনার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মহিলার বাবা ও ভাই। তবে এখনও অধরা অভিযুক্ত। ওই গৃহবধূর বাবা জানান, আমার দুই নাতনি হয়েছে। জামাই চেয়েছিল ওর ছেলে হবে। শ্বশুরবাড়ি থেকে বলা হয় মেয়ের যেন আর সন্তান না হয়। সেই চিকিৎসা করিয়ে তবেই শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আমার মেয়ের ওপর এত অত্যাচার কর হত, তা বলে বোঝানো যাবে না। ওরা এত মেরেছে তারপরও চিকিৎসা করায়নি। সারা শরীর ক্ষত বিক্ষত। এরপর আমি সকালে গিয়ে মেয়েকে নিয়ে চলে আসি। আর তারপর চিকিৎসা করাই।”
অন্যদিকে, নির্যাতিতা জানিয়েছেন, পরপর দু’বার কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য আমার স্বামী আমাকে মারধর করত। কখনও রড দিয়ে মারত। আবার কখনও রড যৌনাঙ্গের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হত’।