পুবের কলম প্রতিবেদকঃ পশ্চিম বাংলায় ওবিসি ‘এ’ এবং ওবিসি ‘বি’-এর জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে সংরক্ষণ রয়েছে। ই সংরক্ষণ রয়েছে ছাত্র ভর্তিতে পিইচডি ক্ষেত্রে এবং শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস বা ওবিসিদের পিছিয়ে পড়া অবস্থার অবসানকল্পে এই সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রায় ক্ষেত্রেই-ই সংরক্ষণ মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে ওবিসি ‘এ’-এর প্রতি বঞ্চনা সমানে চলছে। কেন এই বঞ্চনা এই বিষয়ে প্রশ্ন তুললে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কর্তারা নানা খেল অজুহাত পেশ করে থাকেন।
সম্প্রতি এই চিত্র দেখা যাচ্ছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়েও। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ার মুসলিম প্রধান এলাকাগুলির বেশিরভাগ কলেজই রয়েছে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওবিসি ‘এ’ এবং ওবিসি ‘বি’ এর সংরক্ষণ প্রাপ্তির সম্পূর্ণ চিত্রটির দিকে একবার নজরঘোরানো যেতে পারে।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পিইচডি সহ বিভিন্ন বিভাগের ভর্তিতে ওবিসি সংরক্ষণ কার্যকর করা হয়নি। সেই অভিযোগ বার বার উঠে এসেছে। সে কথা স্বীকারও করে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পুবের কলমের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পিইচডিতে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে রিভিউ কমিটি গঠন করেছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সেই কমিটির সুপারিশে এখনও পর্যন্ত এডুকেশন বিভাগের পিইচডিতে কজনকেও ওবিসি ‘এ’তে ভর্তি নেওয়া হয়নি। এবার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির ক্ষেত্রে ওবিসি-‘এ’ মুসলিমদের কতটা প্রধান্য দেওয়া হয়েছে সেই খতিয়ান প্রকাশ্যে এল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট অধ্যাপক রয়েছেন ২১৭ জন। এর মধ্যে সাধারণ এবং ওবিসি- ‘এ’ মিলিয়ে মাত্র ৫ জন মুসলিম অধ্যাপক রয়েছেন। ছাড়া কল্যাণীতে ২৭ জন অফিসার পদে আছেন। তার মধ্যে একজনও ওবিসি ‘এ’ কিংবা সাধারণ মুসলিম নেই।
এদিকে কল্যাণীতে শিক্ষাকর্মী রয়েছেন ৪০০ জনের বেশি। এখানে একজন ওবিসি ‘এ’ স্থায়ী পদে নেই। অবশ্য অস্থায়ী পদে কিন্তু ২৫০ জনের মধ্যে মুসলিম রয়েছেন মাত্র ৩ জন। দূর শিক্ষা বিভাগে অফিসার বং সহ-অধিকর্তা পদে ৩২ জন নিয়োগ হয়েছেন। এর মধ্যে একজনও ওবিসি ‘এ’ বা মুসলিম নেই।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওবিসি-‘এ’ সংরক্ষণে গাফিলতি রয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়োগের ক্ষেত্রেও গুরুতর বেনিয়মের অভিযোগ উঠছে। খোদ উপাচার্যের বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ এনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক ও আধিকারিকদের একাংশ। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে বলেছেন, রাজ্য সরকারের অর্থ দফতরের অনুমোদন ছাড়া নিয়োগ দেওয়া যাবে না। কিন্তু কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশকে অমান্য করে বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রেখেছে বলে অভিযোগ।
ইতিপূর্বে একশো শতাংশ রোস্টার না মেনেই বাংলা সহ একাধিক বিভাগে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
যেমন প্রচুর ওবিসি ‘এ’ প্রার্থী ইন্টারভিউয়ে অংশ নিলেও তৎকালীন বাংলা বিভাগীয় প্রধান সুখেন বিশ্বাস যোগ্য প্রার্থীদের বিবেচনা না করে নিজের স্ত্রী শ্যামশ্রী বিশ্বাস সেনগুপ্তকে অবৈধভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। এই নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ জমা পড়ে। এই নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিকে ডিন অফ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার পদে উপাচার্যের অধীনে পিইচডি করা ছাত্র গবেষক ছাত্র রানা ঘোষকে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি পিইচডি অর্জন করেছেন ২০২০ সালে। অথচ এই পদের জন্য যে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল, তাতে যোগ্যতা হিসেবে চাওয়া হয়েছিল ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা। তাতে ৭ বছরের অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর এবং ৮ বছরের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের পদে অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি। কিন্তু রানা ঘোষের এই অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু তবুও তাঁকে ডিন অফ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এই নিয়ে উপাচার্য কোনও আপত্তি তোলেননি। এদিকে এডুকেশন সহ একাধিক বিভাগের পিইচডিতে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ৭ জনের একটি কমিটি গঠন করে। কিন্তু সেই কমিটি বিভিন্ন বিভাগে সংরক্ষণ কার্যকর নিয়ে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা জানিয়েছেন।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক অলোক কুমার ঘোষের মন্তব্য যতটুকু জানি তাতে অনেক নিয়োগই আইন মেনে হয়নি। সহ-উপাচার্যকে নিয়োগ কমিটিতে না রাখা অত্যান্ত ভুল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগের অ্যাসিসট্যান্ট ডিরেক্টর পদে আগে থেকেই দু’জন নিয়োগ রয়েছেন। আবার কেন নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে।
এই সমস্ত অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য মানস কুমার সান্যালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কিছুই বলতে চাননি তিনি।