পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ জন বার্লা থেকে নিশীথ প্রামাণিক গেরুয়া শিবিরের একাধিক হেভিওয়েট নেতা উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবি জানিয়েছিলেন। তা নিয়ে রাজ্যজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে বিজেপির অন্দরেও দ্বিমত ছিল। কিন্তু ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এই ইস্যুটিতে নতুন করে হাওয়া দিল বিএসএফ।
প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে তারা। সেই ভিডিয়োতে পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাভাষাকে ব্রাত্য করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলার মানচিত্র থেকে উত্তরবঙ্গকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সব থেকে বড় কথা, উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর এই নিয়েই নতুন করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। শুরু হয়েছে সমালোচনা। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূলও। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একাধিক নাগরিক সংগঠনও এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। এমনিতেই রাজ্যে বিএসএফের সীমানা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল তৃণমূল। এবার বিএসএফের এই ভিডিয়ো নিয়েও সরব হল তারা।
কি রয়েছে ভিডিয়োতে? সেখানে প্রত্যেক রাজ্যের একজন করে জওয়ানের ভিডিয়ো ক্লিপিং রয়েছে। ভিডিয়ো ক্লিপিংয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নামও লেখা রয়েছে। সেখানে তাঁরা সবাইকে প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। এমনই একটি ক্লিপিংয়ে রাজ্যের জায়গায় লেখা রয়েছে— উত্তরবঙ্গ।
সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথে ব্রাত্য করা হয়েছিল বাংলার ট্যাবলোকে। সেই আবহে আরও একবার ব্রাত্য করা হল বাংলাকে। বলা ভালো— ব্রাত্য করা হল বাংলা ভাষাকে। এবার বিএসএফের তরফে ‘বঞ্চিত’ করা হল বাংলাকে।
২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে বিএসএফের পোস্ট করা একটি ভিডিয়ো ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের ভ্যারিফায়েড পেজ থেকে ওই ভিডিয়োটি শেয়ার করা হয়েছিল। ভিডিয়োতে দেশের বিভিন্ন প্রধান ভাষার ব্যবহার করা হলেও নাম-গন্ধ থাকল না বাংলার। সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হল বাংলাকে। ২০১১ সালের সেনসাস অনুযায়ী বাংলা ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা। তারপরও কেন বাংলাকে বাদ দেওয়া হল সেই প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরা।
ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, ছত্তিশগড়– পঞ্জাব– রাজস্থান– গুজরাত– ওড়িশা– অসম– জম্মু-কাশ্মীরের মতো রাজ্যের বিএসএফ কর্মীরা সকলকে সাধারণতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। এমনকী, একই রাজ্যের একাধিক অঞ্চলকেও দেখানো হয়েছে। অথচ, ব্রাত্য রাখা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে। সব থেকে বড় কথা– পশ্চিমবঙ্গকে ব্রাত্য রেখে ‘উত্তরবঙ্গ’কে আলাদা রাজ্য হিসেবে দেখানো হয়েছে। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে এক বিএসএফ জওয়ান প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। আর সেখানে রাজ্যের জায়গায় লেখা রয়েছে উত্তরবঙ্গ। ‘উত্তরবঙ্গ’ নামের এই ‘কাল্পনিক’ রাজ্যেও বাংলা ভাষার কোনও ছিটেফোঁটা দেখা যায়নি ভিডিয়োতে। দেখা যায়নি কোনও জওয়ানকে বাংলায় শুভেচ্ছাবার্তা দিতে। স্বাভাবিকভাবেই ভিডিয়োকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে– কেন বাংলাভাষা ও পশ্চিমবঙ্গকে এভাবে ব্রাত্য করে রাখা হল? তাছাড়া উত্তরবঙ্গকে কীভাবে আলাদা রাজ্য হিসেবে দেখানো হল? তাহলে কি কেন্দ্রীয় সরকার উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করতে চায়? আর সেক্ষেত্রে বাংলা হবে না তার প্রধান ভাষা? এই সবেরই কি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বিএসএফের পোস্ট করা ওই ভিডিয়োতে? ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা ইতিমধ্যেই দাবি তুলতে শুরু করেছে– অবিলম্বে এই ভুল সংশোধন করুক বিএসএফ। যদিও বিএসএফের পোস্ট করা এই ভিডিয়ো নিয়ে তাদের তরফে এখনও কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দাযের করেছেন তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন। বিধাননগর পুলিশ কমিশনার সুপ্রতিম সরকারকে চিঠি দিয়ে দোলা অভিযোগ করেছেন– পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র থেকে উত্তরবঙ্গকে বাদ দিয়েছে বিএসএফ। তাঁর আরও অভিযোগ– এটা একটা ‘ইচ্ছাকৃত বিকৃতি’ দেশকে– পশ্চিমবঙ্গকে– দেশবাসীকে অমর্যাদা করার। বাংলার একটি সংগঠন ‘বাংলা পক্ষ’ বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। তারা ২৫ জানুয়ারি বিএসএফের অফিসিয়াল টু্যইটার হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার হওয়া এই ভিডিয়ো নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে।
সংগঠনটির দাবি– এই ভিডিয়োর মাধ্যমে বিএসএফ বাংলা ও বাঙালির বিরুদ্ধে ভয়ংকর বার্তা দিচ্ছে। পুরো ভিডিয়োতে পশ্চিমবঙ্গের কোনও উল্লেখ নেই। বরং– উত্তরবঙ্গ নামে একটি কাল্পনিক রাজ্যের কথা বলা হচ্ছে। ভিডিয়োতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ভাষাকে দেখানো হয়েছে কিন্তু কেন বাংলাভাষা নেই?