নয়াদিল্লি: ভার্চুয়াল জগতে চরম হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন মুসলিম মহিলারা৷ সেখানে তাদের নিলামে তোলা হয়েছিল৷ এই ন্যক্কারজনক কাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে৷ তাদের সকলেরই বয়স কম৷ এদের একজন ২৫ বছর বয়সি ওমকারেশ্বর ঠাকুর৷ সুল্লি ডিলস অ্যাপের কথিত স্রষ্টা যাকে দিল্লি পুলিশ রবিবার ভোরে ইন্দোরে তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করেছে৷ তবে তার পরিবার ভাবতেই পারছে না তাদের ঘরের ছেলে এমন কাজ করতে পারে! সে অত্যন্ত ধার্মিক ও অন্তর্মুখী ছেলে৷ বাড়ি থেকে তেমন বের হয় না৷ কুকুর নিয়ে মাঝে মাঝে হাঁটতে বেরোয়৷ আর যায় মুদির দোকানে৷ না হলে সে বাড়ি থেকে তেমন কোথাও যায় না বলে জানাচ্ছে পরিবারের সদস্যরা৷ ঠাকুর ইন্দোর প্রফেশনাল স্টাডিজ অ্যাকাডেমি (আইপিএস) থেকে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে স্নাতক সম্পন্ন করেছে এবং একটি আইটি ফার্মে কাজ করে।
দিল্লি পুলিশের মতে, ওমকারেশ্বর সুল্লি ডিল অ্যাপের মাস্টারমাইন্ড যেটি মুসলিম মহিলাদের নিলামে তুলেছিল৷ গত বছরের জুলাই মাসে অ্যাপটির সঙ্গে যুক্ত একটি এফআইআরের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ ওমকারেশ্বরের বাবা অখিলেশ ঠাকুর বলছেন, তার ছেলের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ করা হয়েছে। যদি আমার ছেলে অ্যাপটি তৈরি করে, তবে অন্য কেউ থাকবে যারা তাকে এই সমস্ত জিনিস শিখিয়েছে, তাকে এটি করতে বলেছে। তার কোনও বন্ধু ছিল না যার সঙ্গে সে ফোনে কথা বলত৷ তিনি আরও বলেন যে সুল্লি ডিলস অ্যাপ সম্পর্কে তার কিছু জানাই ছিল না৷ সম্প্রতি তিনি বুল্লি বাই সম্পর্কে জানতে পেরেছেন৷ তিনি আরও বলেন, যাকে অসম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই নীরজ আমার ছেলের নাম বলেছে। এ সবই ষড়যন্ত্র। ও কোডিং জানে৷ কিন্তু আমরা ভাবতেই পারি না যে সে এত জঘন্য কিছু করবে৷
তিনি বলছিলেন যে তার ছেলেকে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল তখন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তিনি বলেন, আমার ছোট ছেলে আমাকে ফোন করে বলে যে ওমকারেশ্বরকে সিভিল ড্রেস পরা দুজন লোক তুলে নিয়ে গেছে। পুলিশের সঙ্গে যাওয়ার আগে আমার ছেলে বলেছিল, মা আমি কিছু ভুল করিনি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে৷ আমরা কী করব জানি না। কার কাছে সাহায্য চাইতে হবে জানি না৷ তিনি বলেন যে তার ছেলে কখনই বাড়িতে কোনও পুজোর অনুষ্ঠান বা স্থানীয় মন্দিরে যাওয়ার সুযোগ মিস করত না। তার কখনই কোনও বন্ধু ছিল না৷ তাই আমরা জানি না কিভাবে সে এই সবের সঙ্গে জড়িত হল, যদি সে এই অ্যাপটি আদৌ তৈরি করে থাকে। সে তার মাকে খুব ভালোবাসে। সারাদিন তার সঙ্গে কথা বলা, সিনেমা দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। আমরা একটি আবাসিক এলাকায় থাকি। এখানে যে কেউ আমার ছেলের পক্ষে কথা বলবে। নব্বই শতাংশ লোক বলবে যে সে কখনও কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি৷
অন্যদিকে পুলিশের মতে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ‘ট্র্যাডমহাসভা’ নামে একটি কট্টরপন্থী ‘ট্র্যাড’ টুইটার গ্রুপে যোগ দেওয়ার পরে সুল্লি ডিলস অ্যাপটি তৈরি করেছিল। পুলিশ আরও বলেছে যে ওমকারেশ্বর সাতটি ভিন্ন টুইটার হ্যান্ডেল ব্যবহার করেছে অ্যাপটিকে আরও উন্নত করার জন্য৷ এই সমস্ত হ্যান্ডেলগুলি এখন সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ অভিযুক্ত তার সমস্ত অনলাইন অ্যাকাউন্ট, ফুটপ্রিন্ট মুছে ফেলেছে যখন সুল্লি ডিলস অ্যাপটি গত বছর সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ঠাকুরের ল্যাপটপ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সে সমস্ত তথ্য মুছে ফেলেছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।