শফিকুল ইসলাম, নদিয়া:গত সোমবার রাতে শিয়ালদহ-লালগোলা শাখায় ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ফলে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল এক যুবকের। সেই ঘটনায় রাজ্য রেল পুলিশ অবশেষে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। কৃষ্ণনগর জিআরপি সূত্রে রবিবার এ কথা জানা গেছে। ধৃতদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখা হয়েছে। তবে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে আরপিএফের বিরুদ্ধে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রেলের পক্ষ থেকে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে– তা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে রেলকে।
একইসঙ্গে মৃত যুবকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। এই চিঠি পাঠিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী আলি আহসান আলমগীর। তিনি জানান– বেলডাঙার বেগুনবাড়ির যুবক নাজিমুদ্দিন সেখের নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে ইস্টার্ন রেলওয়ের আধিকারিকদের চিঠি পাঠানো হয়। ঘটনার নিরিখে রেলের সুরক্ষা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে রেলওয়ে কি পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আগামীতে সাধারণ যাত্রী সুরক্ষার নিরিখে রেলওয়ের পরিকল্পনা জানতে চেয়ে এই চিঠি।
আইনজীবীর বক্তব্য– ‘শিয়ালদহ লালগোলা শাখায় নিত্য যাত্রীদের দ্বারা সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি রোজকার ঘটনা। এর প্রতিকার না পেলে আমরা ইস্টার্ন রেলওয়ের বিরুদ্ধে মামলা করব।’
প্রসঙ্গত– মৃত যুবকের নাম নাজিমুদ্দিন সেখ। তিনি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানার বেগুনবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। সোমবার রাতে শিয়ালদহ থেকে লালাগোলা মেমু ট্রেনে বাড়িতে ফেরার সময় ভেন্ডার কামরায় উঠেছিলেন। সেখানে কয়েকজন নিত্যযাত্রী নিজামুদ্দিনকে দেবগ্রাম স্টেশনের কাছে ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। নিজামুদ্দিনের ভাই আবদুর রহিম ও আতিউর রহমান জানান– প্রচণ্ড ভিড়ের হাত থেকে বাঁচতেই নিজামুদ্দিন ভেন্ডার কামরায় উঠেছিল। সেখানে কয়েকজন নার্সিং ট্রেনিংয়ের তরুণী-পড়ুয়াও উঠেছিল। ব্যবসায়ীরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় প্রতিবাদ জানিয়েছিল নিজামুদ্দিন। এরপরে তাকে রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনায় ট্রেনের চাকায় কেটে তার শরীর দু’টুকরো হয়ে যায়।
উল্লেখ্য– এই শাখায় পরিযায়ী শ্রমিক এবং সাধারণ যাত্রীদের উপর নিত্যযাত্রীদের অত্যাচারের অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। সিট থেকে উঠিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মারধরের অভিযোগ ওঠে নিত্যযাত্রীদের বিরুদ্ধে। তারপরেও রেলের পক্ষ থেকে কোনওরকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। নাজিমুদ্দিনের বড় ভাই আবদুর রহিম জানান– ট্রেনে এক বৃদ্ধার কাছে কিছু ক্যাপসিকাম বা মরিচ ছিল। একই কামরায় ১০-১২ জন ছানা ব্যবসায়ী ছিল। ছিলেন নাজিমুদ্দিন সহ তাঁর কয়েকজন বন্ধুও। ট্রেন বেথুয়াডহরি ছাড়ার পর ওই বৃদ্ধা কান্নাকাটি করে বলতে থাকেন তাঁর কিছু মরিচ কেউ চুরি করে নিয়েছে। বৃদ্ধার কান্নাকাটি শুনে নাজিমুদ্দিন বৃদ্ধাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যান এবং জানতে চান তাঁর কত টাকার মরিচ চুরি হয়েছে। বৃদ্ধা জানান দু-আড়াইশো টাকার মরিচ চুরি হয়েছে। নাজিমুদ্দিন বৃদ্ধাকে দুশো টাকা দিয়ে দেন। তারপর যাত্রীদের মধ্যে কেউ নিয়েছে কি না– তার জানার জন্য খোঁজা শুরু করেন। খোঁজ পাওয়া যায় এক ছানা ব্যবসায়ী মরিচ চুরি করেছে। তখন নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে ছানা ব্যবসায়ীদের বচসা শুরু হয়। এর পর ট্রেন দেবগ্রাম স্টেশনে দাঁড়ালে ছানা ব্যবসায়ীরা নাজিমুদ্দিন ও তাঁর দুই বন্ধু রসিক রাজা ও অমিত কর্মকারকে জোর করে ট্রেন থেকে নামিয়ে নেয়। ব্যাপক মারধর করে। ট্রেন ছেড়ে দিলে রসিক রাজা ও অমিত কর্মকারকে ছেড়ে দেয়। তাঁরা ট্রেনে উঠে পড়ে। নাজিমুদ্দিনকে ট্রেনের চাকার নীচে ফেলে দেয়। ট্রেন নাজিমুদ্দিনের দেহকে দু’টুকরো করে চলে যায়। একদিকে থাকে বুক থেকে মাথা। অন্যদিকে থাকে কোমর থেকে নীচের দিক।
নাজিমুদ্দিনের বাবা অটোরিকশা চালক। নাজিমুদ্দিনরা চার ভাই এক বোন। নাজিমুদ্দিন সবার ছোট। বয়স ২২। দুই সন্তান। নাজিমুদ্দিন চার চাকা গাড়ির চালক। ঘটনা জানার পর এলাকায় যান রেজিনগর এর বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরি। রবিবার বেগুনবাড়িতে নিহত নাজিমুদ্দিনের বাড়িতে যান বেলডাঙার বিধায়ক হাসানুজ্জামান ও তৃণমূল নেতা আবু তাহের খান। তারা পরিবারের সকলের সঙ্গে কথা বলেন।