সুবিদ আবদুল্লাহ্: মাটির আশ্রয়ে চলে গেলেন বর্ষীয়ান কবি ও সাহিত্যিক ফিরোজউদ্দিন আহমদ। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে প্রবীণ সাহিত্য সাধক ইন্তেকাল করেন। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তাঁর ইন্তেকালের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের লিটিল ম্যাগাজিন আন্দোলনের একটি যুগের অবসান হল।
জন্মেছিলেন ১৯৪০ সালের ৩১ অক্টোবর। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া ব্লকের পশ্চিম নেকড়া গ্রামে। পড়াশোনাও পাঁশকুড়ায়। গত শতকের ষাটের দশকের মাঝামাঝি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির সূত্রে চলে আসেন হাওড়ার বাঁকড়া অঞ্চলে। শিক্ষকতা করতেন বাঁকড়া প্রহ্লাদ দাস বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাইমারি বিভাগে।
প্রথম লেখা প্রকাশ স্কুল ম্যাগাজিনে। পাঁশকুড়া ব্রাডনীবার্ট হাইস্কুলের দেওয়াল পত্রিকা সম্পাদনা দিয়ে তাঁর পত্রিকা সম্পাদনার হাতে খড়ি। সম্পাদনা করেছেন ‘প্রতিধ্বনী’ ‘জনকথা’ ও ‘বনমহুয়া’। পরে ‘সাহিত্যের সকাল’ সম্পাদনা করে তিনি স্থায়ী হন বাঁকড়ায়। হাওড়া জেলায় লিটিল ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের রেওয়াজ শুরু হয় ফিরোজ সাহেবের হাত ধরেই। তিরিশ বছর ধরে ‘সাহিত্যের সকাল’ বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশ করেই তিনি দ্রুত বিদগ্ধজনের নজরে আসেন।
নয়ের দশকে রাজ্যজুড়ে লিটিল ম্যাগাজিন আন্দোলন শুরু হলে তিনি হন হাওড়া জেলা প্রতিনিধি। হাওড়ার বস্ত্র শিল্পাঞ্চল নামে খ্যাত বাঁকড়ায় সাহিত্যসকালের সূচনাও তাঁর হাত ধরে। পত্রিকা সম্পাদনা ও সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পান ‘নতুন গতি’ লিটিল ম্যাগাজিন পুরস্কার– ‘সংহতি’ সাহিত্য পুরস্কার ও ‘সৌরভ’ সাহিত্য পুরস্কার। এ ছাড়া সম্মানিত হন– ‘বঙ্গীয় কবি পরিষদ’– ‘শব্দের ঝংকার’ ও ‘গ্রামীণ সাহিত্য সম্মিলনী’ থেকে। পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের অন্যতম সমস্য ফিরোজউদ্দিন আহমদের উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সৃষ্টির অন্যতম ‘মাটির কাছাকাছি’– ‘মরুর কাসুম’– ‘ছড়ায় মোড়া দেশ’– ‘নদী মায়ের কাছে’– ‘নবী জীবন কাহিনী’, ‘পৌষালী ধান রূপসালী ধান’ প্রমুখ।
সাহিত্যচর্চা ও সম্পাদনার পাশাপাশি তিনি ছিলেন বাঁকড়া অঞ্চলের পরিচিত সমাজকর্মী। বাঁকড়া জামে মসজিদের উন্নয়নে তাঁর অবদান স্থানীয় মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এ ছাড়া বাঁকড়া সাধারণ পাঠাগার– লিটিল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান ইতিহাস হয়ে থাকবে।
সেলাই মেশিনের ঘর ঘর শব্দের ভেতর থেকে তিনি খুঁজে নিতে পারতেন কবিতা অথবা সাহিত্যের মননশীল শব্ধ। ফিরোজ সাহেবের স্নেহভাজন সাহিত্যিক ইসমাইল দরবেশ এক শোকবার্তায় জানান– তাঁর ইন্তেকালে সাহিত্যের স্থায়ী ক্ষতি হল। জেলার মানুষ হিসেবে আমরা হারালাম আমাদের সাহিত্য অভিভাবককে।
বর্ষীয়ান কবি ও সাহিত্যিক ফিরোজউদ্দীন আহমদ-এর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান। তিনি বলেন– তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। খুবই অমায়িক ছিলেন বাঁকড়ার এই মানুষটি। তাঁকে কেন্দ্র করেও কবি-সাহিত্যিকদের একটি গ্রুপ গড়ে উঠেছিল। সাহিত্যিপ্রেমী ফিরোজ ভাই সব মুসলিম পরিচালিত পত্রিকায় দেদার হাতে লিখতেন। আমি আল্লাহর কাছে তাঁর জান্নাত প্রার্থনা করছি। আল্লাহ্ যেন তাঁর পরিবারকে সবর দেন।