রেজাউল করিম, মুসরত আরা পারভিন– বুধবার মালদহ জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রায় ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৭ টি প্রকল্পের উদ্বোধন– ৪৫৯ কোটি টাকার ৫৯ টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তিনি।
উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন– জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র– পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া সহ বিভিন্ন দপ্তরের সচিব– জেলার বিধায়ক– বিডিও– বিভিন্ন থানার ওসি– আইসি এবং দফতরের আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা।
মালদহ বিমানবন্দরকে নতুন করে গড়ে তোলার কথা তিনি বলেছেন। তিনি বলেন – ‘মালদহ বিমানবন্দরের প্রায় ১ হাজার মিটার রানওয়ে বাড়ানো দরকার। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার– বালুরঘাটে বিমানবন্দর প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। মালদার হয়ে গেলে উত্তরবঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়ে যাবে।’এদিন মুখ্যমন্ত্রী আঞ্চলিক ভাষাকে জানার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। চাকরি করার কথার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন–
‘কর্মসৃষ্টির মাধ্যমে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা যেন চাকরিটা পায়। বাংলায় যারাই বসবাস করুক– বাংলা হতে পারে– রাজবংশি হতে পারে– কামতাপুরি হতে– আমার সেই ক্ষেত্রে আপত্তি নেই। বাংলা ভাষা তাঁকে জানতেই হবে। বাংলায় তার ঠিকানা হতে হবে। চাকরির জন্য অনেক রাজ্যে সর্ভিস কমিশন আছে। সরকারি চাকরি করার ক্ষেত্রে কাজটা করছে– দেখা যায় স্থানীয় ভাষাটা জানে না। ফলে মানুষ যখন বিডিও অফিসে যায় বা এসডিওর কাছে যাচ্ছে– সে বাংলায় কথা বলছে– অথচ অফিসাররা বাংলাটাই বোঝে ননা।
ফলে সমস্যার সমাধানও হচ্ছে না ওই মানুষের।’এদিন মুখ্যমন্ত্রী পৌনে ১টা নাগাদ মালদা কলেজ অডিটোরিয়ামের দুর্গাকিঙ্কর সদনে বৈঠক করতে আসেন। ২.২০ নাগাদ বৈঠক শেষ করে হেলিকপ্টারে করে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে উড়ে যান। সোমবার মালদায় এসে ছিলেন পুরাতন মালদার মহানন্দা ভবনে।
মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুরের কর্ণজোড়ায় উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর দুই জেলার আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন। বুধবার দুপুরে মালদা কলেজ অডিটোরিয়ামে জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে এদিন জেলার ৩৭ টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৫৯ টি প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়
জন্ম থেকে মৃত্যু বিভিন্ন প্রকল্প সুবিধা মানুষ পাচ্ছিনা তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন বিভিন্ন ব্লকের বিডিও কে। জেলার উন্নয়নে কি কি প্রকল্প প্রয়োজন তা তিনি জানতে চান জেলাশাসক এবং অন্যান্য আধিকারিকদের কাছে।
তিনি সাফ জানিয়ে দেন সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিতে হবে। গরিব মানুষ যাতে কোনো প্রকল্প থেকে বঞ্চিত না হয়।
জানুয়ারি থেকে আবার শুরু হবে দুয়ারে সরকার। প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চ থেকে মালদা জেলার নেতা নেত্রীদের গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দেন তিনি।
মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জযüন্ত কুন্ডুর কাছে তিনি জানতে চান হরিশ্চন্দ্রপুর এবং চাচলে মাখনা চাষে কি পদক্ষেপ নিলে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে।
এর পাশাপাশি মালদা জেলার সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে আমসত্ত্ব এবং রসকদম্ব মিষ্টি তুলে দেওয়া হয়। এদিন রাস্তার দুধারে কর্মী সমর্থক থেকে সংগঠনের ছাত্র ছাত্রীরা স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন। মালদার জন্য সকল জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় কাজ করার আবেদন জানান।
মালদা জেলা পরিষদের উদ্যোগে কলকাতার সল্টলেকে এককোটি টাকা দিয়েযে মালদা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে সেই ভবনের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । জেলাশাসক জানিয়েছেন– এই প্রকল্পটির জন্য ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং কে এম ডি এর অধীনে সেই প্রকল্পের কাজ চলছে. মালদার সিল্ক পার্কে কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যে শিল্ক বস্ত্রের পাশাপাশি বস্ত্রশিল্প গড়ারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ বিষয়ে মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের প্রস্তাব তিনি ভেবে দেখবেন বলে জানান। এছাড়াও গাজোলে একটি অগ্নি নির্বাপন কেন্দ্র নির্মাণের কথা বলা হয় । মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হলে হরিশ্চন্দ্রপুরে মাখনা প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এর ফলে সত্তর থেকে আশি হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানা গিয়ে ছে। ম্যাংগো ভ্যালি বলে পরিচিত মালদায় ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতিবছর ৩ লক্ষ ৩২ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদন হয় । সেখানে প্রাপ্য ষাট শতাংশ আমগাছ পুরনো হয়ে যাওয়া সেগুলি আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে কেটে ফেলে নতুন করে চারা গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ভাঙ্গন পীড়িত বৈষ্ণবনগর এলাকায় ১৩৯ পরিবারের জন্য পাট্টা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জেলাশাসক জানান। আরো পরিবারকে পাট্টা দেওয়া হবে বলেও জানা গিয়েছে।