পুবের কলম প্রতিবেদকঃ বুধবার অনুষ্ঠিত হল ‘বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চ’ এর রাজ্য কমিটির বৈঠক। সংগঠনের রাজ্য কার্যালয় মৌলালির ওই বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় যেমন উঠে এসেছে বিএসএফের এলাকাবৃদ্ধির বিষয়টি– তেমনই গুরুত্ব পেয়েছে পিছিয়ে পড়া মানুষদের স্বার্থরক্ষার দিকটি।
সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ওয়ায়েজুল হক বলেন– ‘সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে থাকতে হবে। গুরুত্ব দিয়ে তাদের সমস্যা শুনতে হবে। সরকারের প্রকল্পগুলিকে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দিতে হবে’।
কেন্দ্র হঠাৎ করে পশ্চিমবঙ্গ– অসম ও পঞ্জাবে বিএসএফের এলাকাবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সীমান্ত থেকে ৫০ কিমি ভিতর অবধি এলাকায় তল্লাশি– কিছু বাজেয়াপ্ত করা ও গ্রেফতারির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বিএসএফকে। অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুযায়ী– ওই ৩ রাজ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের ৫০ কিমি ভেতর পর্যন্ত তল্লাশি– অবৈধ কিছু বাজেয়াপ্ত করতে পারে বিএসএফ। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের জোর সমালোচনা করেছেন। এমনকী সম্প্রতি দিল্লি সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছেও নিজের আপত্তির কথা তুলে ধরেছেন। ‘বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চ’এর অনুষ্ঠানে ওয়ায়েজুল এই দিকটিতেও আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেন– ‘বিএসএফ-এর এলাকাবৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে এর সমস্যার কথা।’
এ দিন বৈঠকে রাজ্যের সাংগঠনিক দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন ওয়ায়েজুল। বার্তা দিয়েছেন– আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার।
সংগঠনের রাজ্য সভাপতি আরও জানিয়েছেন– ২০২২ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রিতে সব বিষয়ের ওপর পূর্ণাঙ্গ মক টেস্ট নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে সংগঠনের তরফে।
ওয়ায়েজুল হক সাহেবের নেতৃত্বাধীন কমিটি রাজ্যব্যাপী এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। করোনাকালে পড়ুয়ারা এতে বিশেষ উপকৃত হবেন বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞ কমিটির মূল্যবান পরামর্শ ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তরফে কৌশলগত দিক নির্দেশনা অনুসরণ করেও পড়ুয়ারা উপকৃত হবেন বলেও আশা ব্যক্ত করেছেন জনাব ওয়ায়েজুল হক। ১৮ ডিসেম্বর ‘সংখ্যালঘু অধিকার দিবস’। পুরসভা নির্বাচনের জন্য এবার ওই দিনের অনুষ্ঠিত করা হচ্ছে বর্ধমান শহরে। জানিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি।
সংগঠনের অন্যতম অ্যাডভাইজার জনাব আহমদ হাসান ইমরান বলেন– ‘গত ১৫ বছরে ভারত ও রাজ্যের পরিস্থিতিতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতাকে হাতিয়ার করে দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি বিনষ্ট করা হচ্ছে। প্রচার করা হচ্ছে পারস্পরিক ঘৃণার। আমাদের রাজ্যেও বেশ কিছু সমস্যা খাড়া হয়েছে। বিএসএফের সীমানা বৃদ্ধির জন্য পশ্চিমবাংলার কোটি কোটি মানুষ আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। এতে হিন্দু-মুসলিম সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আমাদের সম্প্রীতির প্রচারে এগিয়ে আসতে হবে। সীমান্তে বিএসএফের এলাকাবৃদ্ধি নিয়েও প্রতিবাদে সরব হতে পারে।’ বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সদস্যরা মানুষের সেবায় আরও সক্রিয় হবেন। ইমরান এই আশাও প্রকাশ করেন।
এ দিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন– সহ সভাপতি সেলিম শাহি– সাধারণ সম্পাদক আলমগির মোল্লা ও মহামুদুল হক (টুটুল), রাজ্য কমিটির সদস্য শিক্ষাবিদ দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সহ সভাপতি ডা. হাসান জামিল– কোষাধ্যক্ষ শেখ হান্নান– সহ সাধারণ সম্পাদক জিয়াবুর রহমান ও বিভিন্ন জেলার সভাপতি।