পুবের কলম প্রতিবেদকঃ পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন আর এক পুলিশকর্মী তথা জাতীয় ফুটবলার সুরাফ হোসেন এবং তাঁর স্ত্রী তানিয়া পারভিন। সেই ঘটনায় সোনারপুর থানার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর বেশ কয়েক মাস কেটে গেলেও তদন্ত সেভাবে এগোয়নি। কলকাতা হাইকোর্টে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সুরাফ হোসেনের স্ত্রী। সেই মামলার প্রেক্ষিতে সোনারপুর থানার পুলিশের উপর অনাস্থা প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত নির্দেশ দিয়েছে– সুরাফ হোসেন নির্যাতন মামলায় সোনারপুর থানার উপর আর তদন্তভার রাখা যাবে না। বারুইপুর পুলিশ জেলার অন্য কোনও থানার পুলিশ অফিসার দিয়ে তদন্ত করতে হবে। প্রয়োজনে বাইরের দক্ষ ও নিরপেক্ষ পুলিশ অফিসার দিয়ে তদন্ত করতে হবে– নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপারকে এই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার আদালতে মামলাটি উঠলে দেখা যায়– ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া তেমনভাবে কিছুই এগোয়নি। এভাবে যদি সোনারপুর থানার হাতেই তদন্ত প্রক্রিয়া থাকে– তাহলে কতদূর কাজ হবে– তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্ট। ঠিক সেই কারণেই বারুইপুরের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে– তদন্ত প্রক্রিয়া সোনারপুর থানার বদলে অন্য থানার কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
প্রসঙ্গত– পাঁচজন পুলিশ আর প্রায় পনেরোজন সিভিক ভলান্টিয়ার মিলে সুরাফ হোসেনকে উলঙ্গ করে ফুটবল খেলার মাঠজুড়ে প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে পেটাচ্ছে। সেই ভিডিয়ো রাজ্যজুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ভাইরাল হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটে ৬ আগস্ট দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সোনারপুর থানার অন্তর্গত বেনিয়াবউ গ্রামে। পুলিশ শুধু সুরাফ হোসেনের উপর বর্বরোচিত নির্যাতন করেই থেমে থাকেনি। সুরাফ হোসেনের স্ত্রী তানিয়া পারভিনের উপরেও চড়াও হয়। অভিযোগ– পুলিশের মারের ফলে তানিয়ার গর্ভস্থ সন্তান মারা যায়। পুলিশ সুরাফ হোসেন– তানিয়া পারভিন-সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। দীর্ঘ ছয়দিন জেলে থাকার জন্য সুরাফ হোসেনকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড হতে হয়। এ নিয়ে পুবের কলম-এর প্রথম পাতায় বিশেষভাবে সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
হাড়হিম করা সেই পুলিশি তাণ্ডবের বিরুদ্ধে বিশিষ্ট আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মী আনিসুর রহমান-এর নেতৃত্বে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর– সেভ ডেমোক্রেসি– অধিকার– পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া– একুশের ডাক– আইসা– বন্দিমুক্তি কমিটি– এসিজেপি– জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ-সহ প্রায় ১৭টি মানবাধিকার সংগঠন ও গণসংগঠন দু’মাস ধরে লাগাতার আন্দোলন করেছে। কিছুদিন আগে সুরাফ হোসেনের উপর আরোপিত সাসপেনশন প্রত্যাহার করা হয়। গত ৪ অক্টোবর তিনি পুনরায় কাজে যোগ দিয়েছেন।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়ে আন্দোলনকারী ও সুরাফ হোসেনের আইনজীবী আনিসুর রহমান বলেন– আদালতের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশকে স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করব– এবার সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। তিনি আরও বলেন– সোনারপুর থানার পুলিশ যা করছে তা বিস্ময়ের। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সুরাফ হোসেনের উপর আক্রমণ চালিয়েছে– মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। আদালতের উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে– নির্যাতিত পরিবার ন্যায়-বিচার পাবে বলেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।