পুবের কলম প্রতিবেদক: গত বিধানসভা নির্বাচনে নজরকাড়া কেন্দ্র ছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম। এখানে তৃণমূলের হয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে জয়ের শিরোপা ছিনিয়ে এনেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। একপ্রকার বলা চলে নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিজের শক্তি প্রদর্শন করেছিলেন তিনি। তবে ভোট মিটতেই এবার সেই শক্তি খর্ব হচ্ছে ক্রমশ।
রবিবারই নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের হরিপুর অঞ্চলের প্রায় প্রায় ৩৬০ জন বিজেপি নেতা কর্মী তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূল সূত্রের দাবি– আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নন্দীগ্রামের আরও দশটি অঞ্চল থেকে বিজেপির বহু নেতা কর্মী তৃণমূলে যোগদান করতে চলেছেন।
এখানেই শেষ নয়– শনিবার দলের বিধায়কদের নিয়ে এক প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছিল বঙ্গ বিজেপি। সেই বৈঠকে গরহাজির থেকেছেন পাঁচ জন বিধায়ক। অন্যদিকে– বিজেপির বিধায়ক সাংসদদের নিয়ে তৈরি হোয়াটসঅ্যাপ গ্র&প ছেড়েছেন বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। শোনা যাচ্ছে তিনিও নাকি ঘাসফুলের দিকে পা বাড়িয়ে রয়েছেন।
উল্লেখ্য– রবিবার নন্দীগ্রামে যারা তৃণমূলে যোগদান করেন যাদের মধ্যে অনেকেই বিজেপির সাংগঠনিক পদে ছিলেন। একইসঙ্গে সিপিআইয়ের প্রাক্তন এলসিএম বাদল দুয়ারি ও সিপিএমের শিক্ষক সংগঠনের নেতা প্রদীপ জানা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এ দিন তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপির মহিলা সভানেত্রী অনিন্দিতা জানা ও বিজেপির আর্মি সেলের নেতা শুভাশিস জানা বিজেপি ছেড়েছেন। এদের তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি স্বদেশ দাস।
স্বদেশ দাস বলেন– বিজেপি নেতা কর্মীরা দলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে এবং বিজেপির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের প্রতিবাদে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তৃণমূলে যোগদান করলেন। সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কর্মকাণ্ড যুক্ত হতে চেয়েছেন।
অন্যদিকে– তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সহ সভাপতি প্রলয় পালের পালটা প্রতিক্রিয়া– এখানকার তৃণমূল নেতারা আর কালীঘাটে পৌঁছতে পারছেন না। তাই ওনারা বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকদের ধরে নিয়ে এসে ফোটোসেশন করছেন– ফোটো দেখিয়ে কালীঘাট যাওয়ার জন্য। এসব নাটক করে কোনও লাভ হবে না।
এ দিকে বিধানসভায় দলের কৌশল ঠিক করতে শনিবার বিধায়কদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির করে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। ওই বৈঠকে নবনির্বাচিত বিধায়কদের রীতিনীতি– রণকৌশল সহ একাধিক বিষয়ে সম্যক ধারণা দিতে আলোচনা হয়। দলীয় বিধায়কদের ক্লাস নেন দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারী। ছিলেন শিবপ্রকাশ– অশোক লাহিড়ী– বঙ্কিম ঘোষ– মনোজ টিগগারা। সেখানেই অনুপস্থিত থেকেছেন পাঁচ পাঁচজন বিধায়ক। যা নিয়ে দলের অন্দরেও জল্পনা শুরু হয়েছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছুই বলছে না বিজেপি নেতারা।
কিছুদিন আগেই পদ্ম শিবির ছেড়ে ঘাসফুলে গিয়েছেন মুকুল রায়। এ দিকে সাংসদ পদ ধরে রাখতে পদত্যাগ করেছেন নিশীথ প্রামাণিক ও জগন্নাথ সরকার। ফলে খাতায় কলমে বর্তমানে রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির বিধায়ক কমেছে।
জানা গিয়েছে– বিজেপির প্রশিক্ষণ শিবিরে অনুপস্থিত ছিলেন বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস সহ আরও ৪ জন। সেই তালিকায় রয়েছেন– তন্ময় ঘোষ এবং ধীরজ তামাং জিম্বা। অনুপস্থিত বিধায়কদের মধ্যে শুধুমাত্র বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ কারণ স্পষ্ট করলেও বাকিরা নিশ্চুপ। সন্দীপ কুমার মুখোপাধ্যায়– কুলটির বিধায়ক অজয় কুমার পোদ্দার এবং ভাটপাড়ার বিধায়ক পবন সিং বৈঠকে উপস্থিত হননি।
অন্যদিকে– বিজেপির দুটি হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্র&প থেকে নাকি বেরিয়ে গিয়েছেন হিরণ চট্টোপাধ্যায়। সূত্রের খবর– ওয়েস্ট বেঙ্গল বিজেপি এমপি এমলএলএ এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল বিজেপি এমপিএমলএলএ সোশ্যাল মিডিয়া গ্র&প থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন বিজেপির তারকা বিধায়ক হিরণ। স্বাভাবিকভাবেই হিরণ দলত্যাগ করতে পারে বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তিনি বিধানসভা ভোটের মুখে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছেড়ে যাওয়া আসন খড়গপুর সদর থেকে জিতেছেন হিরণ।