ইনামুল হক, বসিরহাটঃ দেশ বিদেশের প্রখ্যাত ক্বারী ও আলেমদের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ক্বেরাত সম্মেলন হয়ে গেল বসিরহাটের মাওলানাবাগ দরবার শরীফে। অবিভক্ত ভারতের অন্যতম আলেম, পীরে কামেল, শাহ সুফি আলহাজ হযরত আল্লামা মাওলানা রুহুল আমিন রহ.এঁর ৭৭ তম ওফাৎ স্মরণে শুক্র ও শনি দু’দিন ধরে এই সম্মেলনে কোরআন প্রিয় মানুষের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়ার মতো। এই ক্বেরাত সম্মেলনে কোরআনের বহু খ্যাতনামা ক্বারীদের সম্মিলন ঘটে। দেশ বিদেশের ক্বারীদের কন্ঠে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শোনার জন্য শুক্রবার সকাল থেকে করোনাবিধি মেনে মুসল্লিদের সমাগম ঘটে।
আল্লামা রুহুল আমিন রহ.ফাউন্ডেশন “আরাফ” এর পরিচালনায় এই আন্তর্জাতিক ক্বেরাত সম্মেলনের সুচনা হয় শুক্রবার সকাল ১১ টায় মাওলানাবাগ দরবার শরীফের মুখ্য পরিচালক পীরজাদা শরফুল আমিনের সভাপতিত্বে।
উদ্বোধনী ক্বেরাত পাঠ করেন ক্বারী আতাউর রহমান। এরপর একে একে বিশিষ্ট ক্বারী ও ওলামারা কোরআন তেলাওয়াত করেন। এছাড়াও আল্লামা রুহুল আমিন রহ. এর জীবনাদর্শের ওপর সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আল্লামা হুজুর রহ.র অগণিত ভক্ত ও মুসল্লিরাও যোগ দেয় বাংলার এই বৃহৎ ক্বেরাত সম্মেলন সেমিনারে।
প্রসঙ্গত, এদিন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্নন ক্বারী সায়েক সালাহউদ্দীন সাহেব জুমা নামায পড়ান। ক্বেরাত সম্মেলন এর মঞ্চ থেকেই এদিন প্রকাশিত হয় আরাফ এর বিশেষ স্মারক পত্রিকা। এছাড়াও বাচিকশিল্পী আবেদিন হক আদির পরিচালনায় প্রামাণ্য তথ্যের নির্ভর আল্লামা রুহুল আমিন রহ. এর জীবন ইতিহাস নিয়ে নির্মিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
বলাবাহুল্য, ফুরফুরা শরীফের মোজাদ্দেদে জামান দাদা হুজুর পীর আবু বকর সিদ্দিকী রহ. এঁর যোগ্য খলিফা অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী আল্লামা রুহুল আমিন বসিরহাট মহকুমার টাকির একটি বর্ধিষ্ণু গ্রামে ১৮৮২ মতান্তরে ১৮৮৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। গ্রামের লেখাপড়া শেষ করে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে সাফল্য অর্জন করেন। তিনি স্থায়ীভাবে বসিরহাটের সাঁইপালা এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। বর্তমানে যেটি মাওলানা বাগ হিসেবে পরিচিত। এখানেই রয়েছে তার সমাধিক্ষেত্র। আল্লামা রুহুল আমিন রহ. যুবক বয়স থেকেই দ্বীন প্রচারের পাশাপাশি শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
অবিভক্তত বাংলা সহ আসাম, ত্রিপুরাতেও বহু মাদ্রাসা তিনি নিজ হাতে প্রতিষ্ঠা করেন। কোরআন ও হাদিসের আলোকে তার যুক্তিনিষ্ঠ বক্তব্য সহ রচিত শতাধিক কেতাব পরিপূর্ণ ইসলামের পথে জীবন যাপনের ক্ষেত্রে আজও সমান জনপ্রিয়। শেষ জীবনে তার নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত বসিরহাট আমিনিয়া মাদ্রাসা আজও স্বমহিমায় বিরাজমান। ক্বেরাত সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কারিগরি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ড. হুমায়ুন কবীর, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান, কারী শাইখ মোঃ আব্দুর রউপ, কারী শাইখ তায়েব জামাল, পীরজাদা নুরুল আমিন, পীরজাদা সিরাজুল আমিন, পীরজাদা মনিরুল আমিন সহ তাদের আওলাদেরা। এছাড়াও বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক ডা. সপ্তর্ষি ব্যানার্জি, শিক্ষাবিদ মাসুদুর রহমান, বসিরহাট সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ বাকিবিল্লাহ, অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মাওলানা আবু সালে নাদভী, আবেদিন হক আদি ও দ্বীন ইসলাম বৈদ্য প্রমুখ।
তেলাওয়াতে ক্বেরাত অংশগ্রহণ করেন মুম্বাই থেকে আগত ক্বারী শায়েখ আফজাল হোসাইন, হায়দ্রাবাদ থেকে আগত ক্বারী শায়েখ জিয়াউর রহমান, রাজস্থান থেকে আগত কারী হেদায়েতুল্লাহ ফোরকানী প্রমুখ। এছাড়াও মুর্শিদাবাদ থেকে আগত ক্বারী শায়খ রুহুল আমিন এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্বারী শায়েখ ইকরামুল ইসলাম সহ এরাজ্যের বিশিষ্ট ক্বারী সাহেবরা তেলাওয়াতে অংশগ্রহণ করেন। বিদেশ থেকে ভার্চুয়ালি ক্বেরাত পাঠে অংশগ্রহণ করেন মিশরের ক্বারী মোহাম্মদ আবু সেরি আব্দেল আজিজ আল মুরিজী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্বারী শায়েখ আব্দুল বাসিত সাহেবের পুত্র কারী শাইখ মুহাম্মদ আহমেদ মোহাম্মদ আব্দেল হাফেজ দারাঙ্কী, বাংলাদেশ থেকে ক্বারী হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী , ক্বারী সাদিকুর রহমান আজহারী, কারী হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী প্রমুখ।
আরাফ এর পরিচালক তথা আন্তর্জাতিক কেরাত সম্মেলন এর আহ্বায়ক পীরজাদা খোবায়েব আমিন জানান, বাংলার এই বৃহৎ কেরাত সম্মেলন শুরু হয় ২০১৯ সালে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস এর ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে গতবছর এই সম্মেলন করা না গেলেও এবছর কোভিদ বিধিনিষেধের সরকারি নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে এই আন্তর্জাতিক ক্বেরাত সম্মেলন এর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কোরআনের বিশ্বব্যাপী প্রচারের পাশাপাশি এশিয়া মহাদেশের অন্যতম প্রখ্যাত পীর ফুরফুরা শরীফের মোজাদ্দেদে জামান দাদা হুজুর রহ. প্রদত্ত ‘বড় মাওলানা’ উপাধিতে ভূষিত আল্লামা রুহুল আমিন রহ. এর জীবন ও আদর্শ নিয়ে শিক্ষামূলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দুই বাংলার বিশিষ্ট বক্তারা। শনিবার রাতে আখেরি মোনাজাত করেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা সাহিম সিদ্দিকী সাহেব।