পুবের কলম ডেস্ক : যে দেশে উর্দি পরা ‘রাউডি রাঠোর’ ও ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’দের নায়ক মনে করা হয়, যেখানে আইন-শৃঙ্খলা হাতে তুলে নেওয়া পুলিশদের মহিমান্বিত করা হয় ছায়াছবিতে, সেখানে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে?
উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্জের এসপি এই সপ্তাহে দাবি করেন যে, মহম্মদ আলতাফ নামে তরুণ পুলিশি হেফাজতে থাকাকালে শৌচাগারে গিয়ে কলের পাইপে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন। ইউপি পুলিশকে কে জিজ্ঞাসা করবে, নিহত আলতাফের উচ্চতা কি দুই ফুট? কিন্তু এই ঘটনা গণ-স্মৃতি থেকে দ্রুত মুছে যাচ্ছে কারণ অধিকাংশই পুলিশের এই বয়ানকেই স্বীকৃতি দিতে চাইছে। নানা মিডিয়া প্রতিবেদন, মাঝে মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, আদালত কর্তৃক বিরল ‘সিবিআই তদন্তে’র রায় ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরিমাণ প্রভৃতি হেফাজতে মৃত্যুর লজ্জাকে ঢাকতে ব্যর্থ। সেই সঙ্গে থানা ও জেলগুলিতে পুলিশ ও জেল কর্তৃপক্ষের ন্যাক্কারজনক আচরণের কোনও লাগামও নেই যেন। চলতি বছরের আগস্ট মাসে লোকসভাকে জানানো হয়েছে যে, গত তিন বছরে ৫২২১ জন মারা গিয়েছে কারাগারে। এই সময়কালেই পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ৩৪৮ জনের। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রিপোর্ট করেছে যে, ২০২১ সালের প্রথম পাঁচ মাসেই পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ১০৬৭ জনের।
আইন মোতাবেক, কোনও হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে জানানোর নিয়ম। কিন্তু এই রিপোর্ট করার পদ্ধতি একেবারে ভেঙে পড়েছে। ন্যাশনাল ক্যাম্পেন এগেনস্ট টর্চার (এনসিএটি) দেখিয়েছে যে, ২০২০ সালে সারা দেশ যখন লকডাউনে গৃহবন্দি সেই সময়ই হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অদ্ভুত ব্যাপার হল, অধিকাংশ হেফাজতে মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বা ‘স্বাভাবিক কারণে’ মৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও দায়বদ্ধতার অভাবে হেফাজতে থাকাকালীন আত্মহত্যা করে মৃত্যুর দাবিটি সন্দেহজনক। অনেকে আবার পুলিশের ‘থার্ড ডিগ্রি’র নামে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মারা গিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে এনসিএটি। আশ্চর্যের কিছু নয় যে, হেফাজতে যাদের মৃত্যু হচ্ছে তারা মূলত ও ঘটনাচক্রে দরিদ্র, দলিত ও সংখ্যালঘু। অবহেলিত ও অত্যাচারিত শ্রেণি। পুরুষদেরই মৃত্যু হয়েছে বেশি বলে এটা মনে করার কারণ নেই যে মহিলারা নিরাপদ। হেফাজতে বহু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে কিন্তু সেগুলি রিপোর্ট করা হয় না।