পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : গুরগাঁওয়ের 12 A সাইটে পুলিশি প্রহরায় চলছিল জুম্মার নামায। নামায চলাকালীন সেখানে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা বাধায় সংযুক্ত হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি।নামাজের জায়গায়তেই তারা গোবর্ধন পুজো শুরু করে। এই পুজোয় আমন্ত্রিত ছিলেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। গুরগাঁওয়ে দু’সপ্তাহ ধরে স্থানীয় মুসলিমদের জুম্মার নামাজে নানা অশান্তি বাধানো হচ্ছিল বলে খবর।
গত মাসে কট্টর হিন্দুসংগঠনের ২৬ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এরা নামায চলাকালীন অশান্তি বাধায়। নামাজ পন্ড করার চেষ্টা করছিল। তাদের এই আটককে ‘আইওয়াশ’ বলছেন অনেকে। কারণ পুলিশ যেসব তাণ্ডবকারীদের গ্রেফতার করেছিল তারা গ্রেফতারির দিনই জামিন পেয়ে যায়।
সরকারি যে জায়গায় নামায হচ্ছিল তার ঠিক উল্টোদিকে গোবর্ধন পুজোর জন্য বায়না ধরেছিল তারা। হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির এই আবদার শুনে এলাকার মুসলিমরা অনেকেই বলেছিলেন, তাহলে তাদের আলাদা জায়গা দেওয়া হোক। সেখানেই তারা নামায পড়বেন। কিংবা ওয়াকফ বোর্ডের যে জায়গা জবরদখল করে আটকে রাখা হয়েছে, সেখানে তাদের নামাজ পড়তে দেওয়া হোক।
জুম্মার নামাজের অনুমুতি দেওয়ার পরও গুরগাঁওয়ের ৮ টি জায়গা থেকে নামাযের অনুমতি ফিরিয়ে নেয় প্রশাসন। নামাযের অনুমতি দেওয়ার পর ফের তা ফিরিয়ে নেওয়া হল কেন? এ বিষয়ে গুরগাঁও প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয়দের এবং ওয়েলফেরায় এসোসিয়েশনের বাসিন্দাদের আপত্তির কারণেই প্রশাসন নামায পড়ার অনুমতি দিয়েও তা ফিরিয়ে নেয়।’প্রশাসনের তরফে পরে বলা হয়েছে হিন্দু, মুসলিম এবং সামাজিক সংগঠনের লোকেদের নিয়ে কেটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তারা সম্মিলিতভাবে ঠিক করেছে ভবিষ্যতে কোথায় কোথায় জুম্মার নামাযের অনুমতি দেওয়া হবে।
বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র এদিন নাম না করে ধর্মীয় বিভাজন করতে ভোলেননি।। দিওয়ালির বাজি নিয়ে আদালত যে রায় দিয়েছে তা নিয়ে ক্ষোভ ঝরে পরে কপিল মিশ্রের গলায়। তিনি বলেন, ‘গতকাল দিওয়ালি ছিল। দেশের হিন্দুদের ওপর নানা বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। এর ফল কি হল? আমদের যতই দেবে রাখার চেষ্টা করো, আমাদের ওপর যতই অত্যাচার করো, আমরা শান্তি বজায় রাখব।আমাদের যদি দাবিয়ে রাখ, তাহলে গোটা দেশে যা হয়েছে তাই হবে।আমাদের যদি দেওয়ালে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা কর, তাহলে তার পাল্টা ধাক্কা আমরা মারবই।’
বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র যে কাদের উদ্দেশে হুঙ্কার দিয়েছেন তা বুঝতে কারও বাকি থাকেনি। কারণ এমন কাজ তিনি আগেও করেছেন। জুম্মার নামাজের কথা মুখে উল্লেখ না করে কপিল বলেন, ‘রাস্তা আগলে রাজনীতি কোরো না,আমরা শাহিনবাগ দেখেছি। শাহিনবাগে রাস্তা আগলে কারা তামাশা করেছিল, তাও দেখেছি। তাতে কি সিএএ প্রত্যাহার হয়েছিল? স্নায়ু এবং ধমনী বন্ধ করে রাখলে মানুষের মৃত্যু হয়, তেমনি রাস্তা অবরোধ করে রাখলে শহর এবং দেশ থমকে যায়।
কপিল মিশ্র আরও বলেন, সংবিধান সকলকে একই অধিকার দিয়েছে। রাস্তা বন্ধ করে রাখাটা কারও ধর্ম হতে পারে না। গুরগাঁও একটি মহানগর। গোটা বিশ্বে এই শহর সমাদৃত। তাছাড়া যদি স্থানীয়রা আপত্তি করে তাতে তো কারও কিছু বলার নেই। রাস্তা আটকে রাখার অধিকার কারও নেই। কপিল মিশ্র এদিন সমানে বোঝাতে চেষ্টা করলেন, রাস্তা আটকে মুসলিমরা নামায পড়েন তাই আপত্তি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে রাস্তা কি কেবল মুসলিমরাই আটকান। তাছাড়া গুরগাঁওয়ে নামায পড়ার জায়গা তো প্রশাসন ঠিক করেই দিয়েছিল, পরে তা প্রত্যাখ্যান করা হল কেন ? দ্রবমূল্য যখন আকাশছোঁয়া, কর্মসংস্থান যখন তলানিতে, তখন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র কেবল রাস্তায় খোলামেলাভাবে হাঁটার ‘আজাদি’ চাইছেন। তবে তাঁর বক্তব্যের মূল সুর কি তা বুঝতে বাকি থাকেননি কারও।