সামিম আহমেদ, পাথরপ্রতিমা: নৌকার উপরে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলল বাঘে মানুষে রুদ্ধশ্বাস লড়াই। লড়াইয়ের অস্ত্র শুধু লাঠি আর গাতি। সেই লড়াইয়ে শেষমেষ হার মানলো বাঘ। সঙ্গীদের নিয়ে বাঘের উপর ঝাপিয়ে পড়ে স্ত্রীকে বাঁচালেন স্বামী। আঘাত সহ্য করতে না পেরে শিকার ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় বাঘ। গুরুতর জখম স্ত্রীকে তড়িঘড়ি নৌকা করে দ্রুত নিয়ে আসা হয় পাথরপ্রতিমা ব্লক হাসপাতালে।
জানা গিয়েছে, রবিবার পাথর প্রতিমার জি প্লট গ্রাম পঞ্চায়েতের সত্যদাসপুর গ্রামের ৬ জন মৎস্যজীবী কলস দ্বীপের জঙ্গল লাগোয়া বাঘের খালে ছিপ, দোন ফেলে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল। ভোর রাতে নৌকোতে খাওয়া দাওয়া করার সময় আচমকা জঙ্গল থেকে একটি বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে নৌকার ধারে বসে থাকা বছর চল্লিশের কাজলের ওপর। থাবা বসিয়ে দেয় তার মাথায় ও গালে। তারপর টানতে টানতে নৌকা থেকে টেনে-হিঁচড়ে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কাজলের স্বামী সুবল মল্লিক লাঠি দিয়ে বাঘের উপর আক্রমণ শুরু করে। অন্যেরা বাঘের পিঠে লাঠি ও কাঁকড়া ধরার গাতি দিয়ে মারতে থাকে। আঘাত সহ্য করতে না পেরে শিকার ছেড়ে নৌকা থেকে লাফ দিয়ে পালায় বাঘটি। বাঘের থাবার আঘাতে অচৈতন্য হয়ে পড়ে কাজল। তড়িঘড়ি তাকে নিয়ে আসা হয় পাথরপ্রতিমা ব্লক হাসপাতালে। সোমবার দুপুরের পর জ্ঞান ফেরে কাজলের।
কাঁপা গলায় কাজল জানায়, অভাবের সংসার। স্বামীর আয়ে সংসার চলে না। তাই আমিও স্বামীর সঙ্গে গভীর জঙ্গলে মাছ ধরতে যাই। বাঘটা যেভাবে আমাকে ধরেছিল সেটা মনে উঠলেই শরীর কাঁপছে। আমার স্বামী ও বাকি সঙ্গীরা যেভাবে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এল, তা বলে বোঝানো যাবে না।
স্বামী সুবল মল্লিক জানান, ছোট থেকেই বাবার সঙ্গে জঙ্গলে মাছ ধরতে গিয়েছি। কিন্তু কোন সময় বাঘের সামনে পড়িনি। কিন্তু এবার যা হল তা কোনদিন ভুলতে পারবো না। বাঘের সঙ্গে লড়াই করে স্ত্রীকে বাঁচাতে পারব ভাবতে পারে নি।