পুবের কলম ডেস্ক : দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আসবাবপত্র তৈরির দোকানের মালিক সাজ্জাদ ওয়ানি। প্রচুর কাজের বরাত পেয়েছেন, কিন্তু কারিগর নেই। রাশি রাশি কাঠের গুঁড়ি পড়ে রয়েছে আর তার তাঁর যন্ত্রপাতিতে জমে রয়েছে করাতকলের গুঁড়ো। কয়েক দিন আগেও তাঁর দোকান ছিল গমগমে। ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় সাজ্জাদের এক কর্মচারী সাগির আহমেদকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। সাগির উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের বাসিন্দা। কাজের খোঁজে দুই বছর আগে তিনি কাশ্মীরে এসেছিলেন। সাগিরের এই নৃশংস মৃত্যুর পর সাজ্জাদের কারখানার বাকি মিস্ত্রিরা প্রাণের ভয়ে উপত্যকা ছেড়ে পালিয়েছেন। তাঁরাও উত্তরপ্রদেশেরই বাসিন্দা।
কয়েক কিলোমিটার দূরে কৃষিজীবী ফারুক মির পরিবারের লোকজন নিয়ে ধান ঝাড়াই মাড়াই করছেন। অথচ এই কাজ মূলত করে থাকে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা শ্রমিকরা। মির জানান, যদি ওই শ্রমিকরা পরের বছর না আসেন তাহলে ফসল চাষ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। গত দুই দশকে কাশ্মীরের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে এই পরিযায়ী শ্রমিকরা। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে দলে দলে তাঁরা আসেন কাশ্মীরে। যদিও কাশ্মীর প্রশাসনের কাছে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই এঁদের সংখ্যা বিষয়ে। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলেন যে, দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা এই শ্রমিকদের সংখ্যা দুই থেকে চার লাখের কাছাকাছি। যাইহোক, ২০১১ সালের জনগণনা ও গবেষকদের মত অনুযায়ী, কাশ্মীর উপত্যকায় শুধু ১১ লাখের বেশি ভিন রাজ্যের শ্রমিকরা কাজ করেন। কৃষি, নির্মাণ, ইঁটভাটা, কারিগরি প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁরা ছড়িয়ে রয়েছেন। অনেকে এখানে নাপিত বা হকার হিসাবেও জীবন কাটিয়ে দেন। কাশ্মীরি নাপিত পাওয়া প্রায় অসম্ভব। অধিকাংশ শ্রমিকরাই প্রতি বছর নভেম্বরের শেষের দিকে, নাহলে ডিসেম্বরে বাড়ি চলে যান এবং ফিরে আসেন পরের বছর মার্চ মাস নাগাদ। তবে, নাপিতরা থেকেই যান। কিন্তু এবার তাঁরাও পালিয়েছেন। এমনটাই জানালেন পুলওয়ামায় এক বেকারির মালিক শামিম ওয়ানি। অন্য রাজ্যের শ্রমিকদের উপর অনেকখানি নির্ভর করে থাকে কাশ্মীরের অর্থনীতি। ফলত, তাঁদের পলায়নে অচলাবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে কাশ্মীরের নৈমিত্তিক জীবন।