লেখা ও ছবি অর্পিতা লাহিড়ী
শহর জুড়ে যখন করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক থাবা বসিয়েছে,তখন কেমন আছেন এই শহরের চীনে পাড়ার বাসিন্দারা। যদিও করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে সেরকম কোন ধারনা গড়ে না উঠলেও আতঙ্কের পালে ভিড় করে ছড়িয়ে পড়েছে গুজব।
যদিও তখনও অতিমারী গ্রাস করেনি আমাদের আর্থ সামাজিক জীবনকে। সেরকম এক সময়ে হাজির হয়েছিলাম টেরিটি বাজারের চিনে পাড়ায়।
তবে মধ্য কলকাতার চৈনিক প্রাতরাশের বাজার কিন্তু জমজমাট। চিকেন, ফিস, পর্ক মোমো, ধোঁয়া ওঠা গরম মোমো শীতের আলসেমি আরও একটু বাড়িয়ে দেয়।
রবিবাসরীয় সকাল, শহর ঘিরে আলতো আদরের মতই একরাশ আলস্য। সকাল বলব না ভোরবেলা বলাই বোধহয় যুক্তিসঙ্গত।রাস্তার পাশে রাতজাগা সারমেয়টা হটাৎ পায়ের শব্দে একটু সচকিত, হয়ত বা বিরক্ত। মাথা তুলে দেখে নিয়ে আবার ঘাড়গুঁজে দিল।
নিজের বড্ড আপন ঝোলাটা নিয়ে পায়ে পায়ে সটান বাস স্ট্যান্ড, ঘড়ির কাঁটা বলছে, ৫.৫৫। আমার গন্তব্য টি বোর্ড। সকাল বেলা যাত্রী উঠবেনা বুঝেই বাসটাও ” নড়ে ভোলার ” মত নড়েনড়ে চলেছে।হাওড়া ব্রিজ পেরতেই তার নাভিশ্বাস ওঠার যোগার।অবশেষে পৌছনো গেল টি বোর্ড।
আমার গন্তব্য মধ্য কলকাতার সুবিখ্যাত চৈনিক প্রাতরাশের ঠিকানা টেরিটি বাজার।একটা সময় প্রায় এখানে ২০০০০ চীনা বসবাস করতেন তবে সময়ের সঙ্গে সেই গৌরব আজ অস্তমিত। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই আমেরিকা বা ইউরোপের নানা দেশে চলে গিয়েছেন।
যারা রয়ে গিয়েছেন কলকাতাই তাদের আপন জন্মভূমির থেকেও বেশি প্রিয়।কথিত আছে ইতালিয় এডওয়ার্ড টেরিটি নাকি এই বাজারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তাঁর নামানুসারেই এই বাজারের নাম টেরিটি বাজার।
কি মেলেনা এই প্রাতরাশ বাজারে, চিকেন, ফিস, পর্ক এই তিন ধরনের মোমো, সুপ, চিকেন স্প্রিং রোল, পর্ক রোল, পর্ক প্যাটি, পর্ক চপ, মিট বল, প্রন কেক, প্যানকেক, নানা ধরনের চাইনিজ পাও, প্রতিদিন ভোর ৫ টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকে।রবিবারে ভিড়টা একটু উপচে পড়া হয়।
চিকেন ফ্রায়েড মোমো খেতে খেতে কথা হচ্ছিল স্যামসাং ও এলিজার সঙ্গে দুই প্রবীণ নাগরিক জানালেন পাঁচপুরুষ ধরে কলকাতায় তাঁদের বাস। এই শহরই তাদের সবকিছু, দিব্য হিন্দি, ইংরেজিতে কথা বলে জানিয়ে দিলেন কলকাতাতেই শেষ নিশ্বাস ফেলতে চান।
চেহারায়, নামে শারিরীক গঠনেই শুধু তিনি চৈনিক আদতে তিনি আদ্যপান্তো একজন ভারতীয় তথা কলকাতার বাসিন্দা।বিদায় নিলাম বৃদ্ধের কাছ থেকে
মনে পড়ল
কবিগুরুর সেই কবিতা
” দিবে আর নিবে
মিলাবে, মিলিবে যাবে না ফিরে
এই ভারতের মহামানবের সাগর তীরে।”
এটাই বোধহয় শাশ্বত ভারতের সংস্কৃতি।
কিছু জরুরী তথ্য:
এই বাজারে সব খাদ্য বস্ত মোটামুটি ২০ টাকা থেকে দাম শুরু, তবে পাওরুটি গুলো পাঁচ টাকা প্রতি পিস।
কিভাবে যাবেনঃ সবচেয়ে কাছের মেট্রো স্টেশন সেন্ট্রাল,টি বোর্ডে নেমে পায়ে হেঁটে পাঁচ মিনিট,পোদ্দার কোর্টের পাশে।