পুবের কলম ডেস্ক : মোদি সরকার বনাম রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্ঘাত এবার নতুন মাত্রা পেল। তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রের কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ দফতর (ডিওপিটি) শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটছে তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সেন্ট্রাল অ্যাডমেনেস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের (ক্যাটের) দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। আর এই পদক্ষেপের পরে কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাত আরও তীব্র হল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। আরও স্পষ্ট করে বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বনাম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্ঘাত।
ঘটনার সূত্রপাত গত মে মাসের ২৮ তারিখে। ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ এর ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কলাইকুণ্ডায় তিনি এক লোকদেখানো পর্যালোচনা বৈঠক ডেকেছিলেন। ওইদিন আগেভাগেই দিঘায় ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে কলাইকুণ্ডায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কলাইকুণ্ডার বৈঠকে যোগ না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করেছেন বলে অভিযোগ তুলে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৩১ মে কর্মজীবনের শেষদিনে দিল্লিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয় মোদির অধীনস্ত কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ দফতর। কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁকে রিলিজ না করায় কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে দিল্লি যেতে পারেননি আলাপন।
দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক সেবায় থাকার পরে তাঁকে যেভাবে মোদি সরকার সামান্য অছিলায় ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করেছে, তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই দিনই অবসর নেন দক্ষ আমলা হিসেবে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। অবসরের পরেই অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপদেষ্টা হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একজন বাঙালি আধিকারিকের এমন শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলার ক্ষমতা হজম হয়নি মোদি সরকারের শীর্ষ কর্তাদের। অবসর নেওয়ার পরেও কেন তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ ধরানো হয় প্রাক্তন মুখ্যসচিবকে। তার জবাব দিতে গিয়ে ফের শিরদাঁড়া টানটান রেখে আলাপন সপাট জবাব দেন, ‘যেহেতু মুখ্যসচিব হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীই তাঁর সর্বময় কর্ত্রী, তাই ওইদিন কলাইকুণ্ডার পরিবর্তে দিঘার বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।’
ওই জবাবও হজম হয়নি মোদি সরকারের। বাঙালি আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে সবক শিখিয়ে বাংলার আমলাকুলকে বিশেষ বার্তা দিতে কোমর কষে ঝাঁপান কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ দফতরের বিজেপি ‘বান্ধব’ আধিকারিকরা। প্রাক্তন মুখ্যসচিবের অবসরকালীন প্রাপ্য আটকানোর ছক কষেন তাঁরা। কেন্দ্র বনাম রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিবের সঙ্ঘাত চরমে পৌঁছয়।
বেশ কয়েক মাস বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে থাকার পরে গত ১৩ অক্টোবর আচমকাই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেন্দ্রের সঙ্ঘাতের বিষয়টি অন্যমাত্রা নেয়। ওইদিন রাজ্যের বিজেপি বিধায়কদলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী টুইট করে জানান, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য একজন আধিকারিক নিয়োগ করা হয়েছে। ওই টুইটে রাজ্যের বাকি আমলাদেরও তিনি পরোক্ষে হুঁশিয়ারি দেন।
শিশিরপুত্রের এমন গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লগিরিতে বেজায় ক্ষুব্ধ রাজ্যের আমলারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমলার কথায়, ‘হুমকি দিয়ে কেন্দ্রের আমলাদের মতো রাজ্যের আমলাদের বিজেপির পোষাভৃত্যে পরিণত করা যাবে না।’ সূত্রের খবর, মোদি সরকারের এক্তিয়ারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গত জুন মাসেই সেন্ট্রাল অ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব। দেশের শীর্ষ আদালত বিভিন্ন সময়ে যে রায় দিয়েছেন, সেই রায়ের কথা উল্লেখ করে আবেদনে তিনি বলেছেন, ‘রাজ্য সরকারের অধীনস্ত কোনও আমলার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার নেই। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র বড়জোড় রাজ্য সরকারের কাছে সংশ্লিষ্ট আমলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।’