পুবের কলম প্রতিবেদকঃ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগে স্নাতক– স্নাতকোত্তর– পিএইচডি’তে ওবিসি সংরক্ষণ গাইডলাইন সম্পূর্ণভাবে মানা হচ্ছে না বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ উঠছে। এই নিয়ে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক মহলও ক্ষুব্ধ। এই অভিযোগ প্রসঙ্গে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইকুয়্যাল অপরচুন্যাটি সেল-এর অন্যতম এবং সোসিওলজি বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান– উচ্চশিক্ষা দফতরের নিয়মানুসারে সংরক্ষণ কার্যকর করা হচ্ছে। জেনারেল ক্যাটাগোরি– এসসি– এসটি– ওবিসি প্রার্থীদের সংরক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তবে সংরক্ষণ নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখবে বিশ্ববিদ্যালয়। সংরক্ষণ নিয়মানুসারে হলে প্রার্থীদের ভর্তি নেওয়া হবে। আর সংরক্ষণ আওতায় না এলে ওই প্রার্থীর ভর্তি বাতিল করা হবে।
অভিযোগ উঠেছে– সাধারণ ক্যাটাগোরির যোগ্য প্রার্থীর মধ্যে যারা অনাসায়েই জেনারেল ক্যাটাগোরিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যেত– তাদের ওবিসিতে আবদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে তাদের থেকে কম নম্বর পাওয়া অন্যান্য প্রার্থীরা যারা জেনারেল ক্যাটাগোরিতে সুযোগ না পেয়ে ওবিসিতে সুযোগ পেত– তারাও ওবিসি সংরক্ষণ অনুসারে ভর্তি হতে পারছেন না। ওবিসি প্রার্থীরা ভর্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাড়াও শিক্ষা দফতর– অনগ্রসর কল্যাণ দফতর সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে– কিন্তু তাতেও দেখানো গিয়েছে– অভিযোগ নিয়ে আধিকারিকদের কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে।
সংরক্ষণ আইন অনুসারে ভর্তির প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে– ওই দফতরের আধিকারিকরা বলছেন– অভিযোগ আসলে খতিয়ে দেখা হবে। এই অভিযোগ সম্পর্কে একাধিকবার জিজ্ঞাসা করতে চাইলে ফোন ধরেননি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাই সাহা।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যাচ্ছে– স্নাতকোত্তরে ফর্ম পূরণের সময় একটি অপশন দেওয়া হয়েছিল- জেনারেল– অন্যটি ওবিসি। আর এই জায়গাতেই পাতা ছিল ফাঁদ। সব প্রার্থীরা কিছু না বুঝতে পেরে ওবিসি-এ সিলেক্ট করে দেয়। এর ফলে কেউ জেনারেল কাট অফ মার্কস পেরিয়ে গেলেও ওবিসি-এ হিসেবেই অ্যালোকেট করা হয়েছে। এর ফলে ওবিসি-এ’র কাট অফ– জেনারেল কাট অফ থেকে বেশি হয়ে গিয়েছে।
সাধারণ নিয়মানুসারে ওবিসি’র কেউ যদি জেনারেল কাট অব-এর মধ্যে থাকে– তাহলে তাকে জেনারেল প্রার্থী হিসেবেই সিলেক্ট করা হয়। যারা ওবিসি-এ হিসেবে অ্যালোকেট করা হয়েছে তারা সবাই অসংরক্ষিত হিসেবে পেয়ে যেত।
বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন– এইভাবে নিজেদের ইচ্ছা অনুসারে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হলে সংরক্ষণ কেন রাখা হয়েছে। জেনারেল ক্যাটাগোরিতে যেসব ছাত্রছাত্রী সুযোগ পায়নি– তাদের জন্যই সংরক্ষণ। বেশি নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা যদি আগেই ওবিসি আসন দখল নেয়– তাহলে কম নম্বর পাওয়া পড়ুয়াদের সুযোগ থাকছে না। এতে সংরক্ষণের আসল উদ্দেশ্য নষ্ট হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি– সংরক্ষণ আইন হয়েছে– তা সঠিকভাবে লাগু হচ্ছে কি না– এই নিয়ে একটি অভিজ্ঞ সেল থাকা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেল থাকলেও তাতেও সংরক্ষণ নিয়ম লাগু করা নিয়ে বহু অভিযোগ উঠছে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আবেদনকারীর বক্তব্য– তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু সেই তালিকায় সংরক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তৎক্ষণাত তালিকা বদল করে নতুন তালিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কায়দা করে সংরক্ষণ নিয়মে কারচুপি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে প্রার্থীদের।
২০১৪ সালে পাস হওয়া সংরক্ষণ বিলে বলা হয়েছে– রাজ্য সরকার পরিচালিত এবং অনুমোদিত সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে সংরক্ষণ নিয়ম ২০১৪-১৫ সাল থেকে কার্যকর করতে হবে। নিয়মে বলা হয়েছে– কোনও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ৩৮টি আসন থাকে– তাহলে ২২ শতাংশ হারে ৮টি আসন এসসি– ৬ শতাংশ হারে ২টি আসন এসটি– ১০ শতাংশ হারে ৪টি আসন ওবিসি-‘এ’ এবং ৭ শতাংশ হারে ৩টি আসন ওবিসি ‘বি’ ক্যাটাগোরিতে ভর্তি করতে হবে। ৩৮টি আসনের মধ্যে সংরক্ষিত ১৭টি বাদে বাকি ২১টি সিট অসংরক্ষিতদের জন্য রাখতে হবে।
বিলের ৪ নম্বর রুলের ২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে– প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ২০১৪ সাল থেকে আসন সং্যূা বাড়িয়ে সংরক্ষণ পুরোপুরি কার্যকর করতে হবে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত আসন বাড়ানোর মেয়াদ দেওয়া হয়েছিল। অথচ বিলে বলা হয়েছে– এই আসন বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে ‘ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট’-এর মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠাতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে। কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই আসন বাড়ানোর জন্য কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ। আসন না বাড়ানোয় ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ম কার্যকর হচ্ছে না। আবেদনকারীদের অভিযোগ– এই ব্যাপারে পুরোপুরি গাফিলতি রয়েছে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। বিল অনুসারে– কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিকাঠামোর অভাব দেূালে– সেটাও বিস্তারিতভাবে শিক্ষা দফতরে পাঠাতে হবে। শিক্ষা দফতর পরিকাঠামো পূরণ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান সেই চেষ্টাই করেনি বলে শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন।
সংরক্ষণ আসনগুলিতে কোন কোন গ্রাউন্ডে ভর্তি নিচ্ছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান– তার জন্য কোর্স অনুসারে ‘রেজিস্টার মেইনটেন’ করতে হবে। ৯ নম্বর রুলে বলা হয়েছে– কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কীভাবে সংরক্ষণ নিয়ম কার্যকর করেছে– সেই তথ্য বিস্তারিতভাবে ‘জয়েন্ট কমিশনার ফর রির্জারভেশন’কে পাঠাতে হবে। কিন্তু রাজ্য অনগ্রসর দফতর জানিয়েছে– এই সংরক্ষণে তাদের কোনও ভূমিকা নেই। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষণ নিয়ম কার্যকরের ক্ষেত্রে অনগ্রসর দফতর– শিক্ষা দফতর এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষদের গাফিলতি কেন– তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে।
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান মমতাজ সঙ্ঘমিতা বলেন– ছাত্রছাত্রীদের সংরক্ষণ পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ উঠছে– সেই প্রসঙ্গে সংখ্যালঘু দফতরে কোনও অভিযোগ জমা পড়লে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ– অনগ্রসর শ্রেণি দফতর– শিক্ষা দফতরে লিখিতভাবে জানতে চাওয়া হবে।
আরও খবর পড়ুনঃ
- পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে ১৪ হাজীর মৃত্যু, নিখোঁজ ১৭ জন
- কোটায় ফের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার
- সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে পুনরায় নিট পরীক্ষা, জানালেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান
- আটকে পড়া পর্যটকদের সাহায্য করতে সিকিমে হেল্পডেস্ক চালু নবান্নের, দেওয়া হল হেল্পলাইন নম্বর
- অস্ত্রোপচার শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন অভিষেক