বিশেষ প্রতিবেদন: ইসরাইলের বন্দিশিবিরে থাকা ফিলিস্তিনিদের নিপীড়ন-নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এল প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের একটি তদন্তে। বন্দিশিবিরের প্রাক্তন বন্দি, সামরিক কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও সেনাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রায় ৩ মাস ধরে এ তদন্তকাজ পরিচালিত হয়েছে। ইসরাইলি শিবিরটিতে বন্দি রয়েছে ৪ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি। ‘এসদে তেইমান’ নামে বন্দিশিবিরের অবস্থান দক্ষিণ ইসরাইলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে। গাজা থেকে দখলদার সেনাদের হাতে আটক ফিলিস্তিনিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের কাজে ব্যবহৃত হয় এটি। ইসরাইলি আইনে এই বন্দিদের বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ৭৫ দিন পর্যন্ত ও কোনও আইনজীবী বা বিচারের মুখোমুখি করা ছাড়া ৯০ দিন পর্যন্ত আটকে রাখার বিধান আছে। এই বন্দিদের অবস্থানস্থল প্রকাশ করে না ইসরাইল, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তদন্ত চলাকালে শিবিরটির প্রাক্তন বন্দিরা ইহুদি সেনাদের হাতে বেধড়ক মারধর, বৈদ্যুতিক শক, অমানবিক আচরণ, ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়ার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। প্রাক্তন ফিলিস্তিনি বন্দিরা জানান, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ঘুষি ও লাথি মারা হয়েছে তাদের। পেটানো হয়েছে লাঠি-রাইফেলের বাঁট ও ধাতব দ্রব্য দিয়ে। সেনাদের মারধরে পাঁজরের হাড় ভেঙে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন দুই বন্দি। একজন দাবি করেছেন, তাকে হাঁটু দিয়ে বুকে আঘাত করা হয়েছে। অন্যজন বলেছেন, তাকে রাইফেল দিয়ে মারা হয়েছে। সাত বন্দি জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের শুধু ডায়পার পরে থাকতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার দাবি করেছেন ৩ ফিলিস্তিনি বন্দি। নিউইয়র্ক টাইমসের এ তদন্তে ফিলিস্তিনিদের ওপর যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের চিত্রও উঠে এসেছে। ফিলিস্তিনি বন্দিরা জানান, চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে, অন্তর্বাস ছাড়া সব পোশাক খুলতে বাধ্য করা হতো তাদের। দিনে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত হাতকড়া পরা অবস্থায় চুপ করে বসে থাকতে বাধ্য করা হতো। বন্দিরা ঘুমে ঢলে পড়লে শুরু হতো প্রহার। বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে এক বিশেষ কক্ষে নিয়ে যাওয়া হতো, যার নাম ‘ডিসকো রুম’। সেখানে রাতে অতি উচ্চশব্দে বাজানো হতো গান। এটা ছিল নতুন ধরনের নির্যাতন। তবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এসদে তেইমান বন্দিশিবিরে আটক ফিলিস্তিনিদের ‘পদ্ধতিগত উপায়ে নির্যাতনের’ এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।