পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ বাংলার রাজধানী কলকাতা মিছিল নগরী বলে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তো বাংলায় ভারতকে পথ দেখিয়েছিল। বাংলার রাজনীতি সচেতনতা শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক মঞ্চেও স্বীকৃতি। অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে দেশের মধ্যে রাজনৈতিক প্রচারে প্রথম স্থান অধিকার করে নিল পশ্চিমবঙ্গ। রাত পোহালেই ভোট পার্বনীর শেষ দফার ভোট গ্রহণ শুরু হবে। সারা দেশের সঙ্গে রাজ্যের নয়টি আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হবে।
বর্তমানে বাংলার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে বিরোধীরা বারবার প্রশ্ন তুললেও নির্বাচন কমিশনের তথ্য কিন্তু তা বলছে না। বরং তথ্য বলছে চলতি বছরের ১৬ মার্চ নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর ভোট প্রচারের মিটিং মিছিলে এগিয়ে বাংলা। এরমধ্যে ছিল প্রবল তাপপ্রবাহ, সাইক্লোনের ভ্রুকুটি। তা উপেক্ষা করেও নির্বাচনী প্রচারে ঝড় তুলেছে সব রাজনৈতিক দলগুলি।
নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে বৃহস্পতিবার শেষ দফার প্রচার পর্ব পর্যন্ত মোট ৭৫ দিনের প্রচার পর্বের পরে কমিশন প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এ রাজ্যে প্রায় ১ লক্ষ সভা, মিছিল-সহ নানা কর্মসূচি হয়েছে। শুধুতাই নয় বাংলা ছাড়া দেশের এর কোনও রাজ্যে ভোটের প্রচারে এত বেশি সভা, মিছিল হয়নি। কমিশন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে কর্মসূচি করতে চেয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের তরফ থেকে ১ লক্ষ ১৯ হাজার ২৭৬টি আবেদন জমা পড়ে। তার মধ্যে ৯৫ হাজার আবেদনের অনুমতি দেওয়া হয়। রাজ্যের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি প্রচার হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। সেখানে ১০ হাজার ৬৮৮টি কর্মসূচি হয়েছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগণা।
রাজ্যের শাসক তৃণমূল তো ছিলই। সমগ্র রাজ্য প্রায় চষে ফেলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সবস্তরের নেতারা। পাশাপাশি ভোট প্রচারে সব দলের সর্বভারতীয় নেতাদের আনাগোনা প্রচার লেগেই ছিল এই পর্ব। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দল বিজেপির প্রচারও নজর কেড়েছে। এবারের বাংলায় বিজেপির হয়ে প্রচারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ছাপিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বালুরঘাট , মালদহ, বাঁকুড়া, বীরভূম-সহ ১৫টি আসনে প্রচার করেছেন তিনি। পারফরম্যান্সের বিচারে প্রধানমন্ত্রীর পরেই আছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। প্রচার শেষের আগের দিন কলকাতা দক্ষিণে একটি রোড শো করেছেন তিনি। আর সেই দিনেই ভোট ঘোষণার পরে নিজের উনিশতম সভাটি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদি প্রথম সভা করেছিলেন উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে। আর শেষ করলেন রাজ্যের দক্ষিণতম প্রান্ত কাকদ্বীপে। উল্লেখযোগ্য বিষয় এবারের ভোট প্রচারে এসে কলকাতায় রাত্রিযাপন করেছেন মোদি। আবাহাওয়া খারাপ থাকার কারণে ঝাড়গ্রামের সভা থেকেই হলদিয়ার সমাবেশের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ-সহ বিজেপি শাসিত ছয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাংলায় ভোট প্রচার করে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার এসেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। রাজ্যের বিজেপি নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নিজে প্রার্থী হওয়ায় তিনি নিজের কেন্দ্রে প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। তবে তৃতীয় দফায় তাঁর ভোট হয়ে যাওয়ার পর প্রচার করেছেন।
বামেদের হয়ে প্রচারে এসেছেন সীতারাম ইয়েচুরি, বৃন্দা কারাতরা। তেমনি এসেছেন জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।
অষ্টাদশ লোকসভার সপ্তম তথা শেষ প্রচারে ঝড় তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার বুকে বৃহস্পতিবার টানা ১২ কিলোমিটার পদযাত্রা করে সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন।