পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দিলেন। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অর্থনীতিবিদ আন্দ্রে বেলোসভকে। ৬৮ বছর বয়সী শোইগু ২০১২ সাল থেকে একটানা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ক্রেমলিন সূত্রের উল্লেখ করে সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, খুব শিগগিরই তাকে এই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান নিযুক্ত করা হবে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয় ২০২২ সালে। তার দু’বছর পর এই পরিবর্তন সবাইকে অবাক করেছে। যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
শোইগু ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করছেন।
রাশিয়ার বিভিন্ন সরকারি সূত্রের খবর শোইগু রাশিয়ার শক্তিশালী নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব নিক এটাই ইচ্ছা পুতিনের। বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্বে রয়েছেন নিকোলাই পাত্রুশেভ। এই পদ থেকে সরিয়ে তাকে নতুন কোনও দায়িত্বে দেওয়া হবে কি-না, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, শোইগু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ। এমনকি তিনি পুতিনকে প্রায়ই নিজের জন্মভূমি সাইবেরিয়ায় মৎস্য শিকারে নিয়ে যেতেন। তাদের ঘনিষ্ঠতা এমনই ছিল যে, পূর্ব কোনও সামরিক অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও শোইগুকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বে দিয়েছিলেন পুতিন। পেশাগত জীবনে শোইগু ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে জরুরি ও দুর্যোগ ত্রাণ মন্ত্রকের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
রাশিয়ার যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়কে কেন্দ্র করে ২০২৩ সালে তিনি ভাড়াটে সামরিক বাহিনী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের সঙ্গে প্রকাশ্য বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। প্রিগোজিন পরবর্তীতে মস্কোর বিরুদ্ধে একটি স্বল্পস্থায়ী বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তখন ভাইরাল হওয়া অডিওবার্তায় রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগুকে “ময়লার থলে” এবং “বয়স্ক ভাড়” বলে অভিহিত করেছিলেন প্রিগোজিন।
২০২৩ সালের অগাস্টে সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কো যাওয়ার সময় ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের প্রধান প্রিগোজিন একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।
তার মৃত্যুর জন্য অনেকে ক্রেমলিনকে দায়ী করলেও রুশ সরকার সেটি অস্বীকার করেছে।
শোইগুর স্থলাভিসিক্ত হতে চলেছেন বেলোসভ। তিনি নিজে একজন অর্থনীতিবিদ। পূর্বসূরির মতো তাঁরও সামারিক অভিজ্ঞতা সামান্য। তবে বিশ্লেষকদের মতে, রুশ প্রসিডেন্টের এই পদক্ষেপটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, রাশিয়ার অর্থনীতিকে তিনি তার যুদ্ধ প্রচেষ্টার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত করতে চাইছেন। চলতি বছরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট আসনে বসে অনন্য রেকর্ড গড়েছেন পুতিন।
ভ্লাদিমির পুতিন ২০০০ সালের মে মাস থেকে টানা প্রায় দুই যুগ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে আসীন। প্রায় ৮৭% ভোট পেয়ে পঞ্চমবারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও সর্বশেষ এই নির্বাচনে তাঁকে বিশ্বাসযোগ্য তেমন কোনও প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হয়নি। এরফলে আরও ৬ বছরের জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাচ্ছেন পুতিন। গোটা দেশের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিক সম্মলনে বলেন, “এই একজন যিনি নতুন ভাবনা সামনে নিয়ে আসবেন আবার একজনই যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হবে।” আসলে খরচে লাগাম পড়াতেই এই সিদ্ধান্ত পুতিনের বলে মনে করা হচ্ছে।