পুবের কলম প্রতিবেদক: অবশেষে জল্পনার অবসান। করোনা ভাইরাস (corona virus) সংক্রমণের কারণে এবারেও রেড রোডে রাজ্য সরকার আয়োজিত চোখধাঁধানো দুর্গাপুজোর শোভাযাত্রা বা কার্নিভাল (puja carnival) হচ্ছে না। শুধু তাই নয়– কলকাতা ও জেলার সর্বজনীন পুজো কমিটিগুলিকেও জাঁকজমকের সঙ্গে পুজোর উদ্বোধন ও বিসর্জনের ক্ষেত্রে নিষেধ করা হয়েছে। মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন এড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তৃতীয়া থেকেই সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য পুজোমণ্ডপ খুলে দেওয়ার জন্যও উদ্যোক্তাদের অনুরোধ জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
গত বছর করোনার প্রকোপের কারণে রেড রোডে পুজো কার্নিভাল স্থগিত রাখা হয়েছিল। চলতি বছরে অবশ্য রাজ্যে মারণ ভাইরাসের বেলাগাম সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তাই পুজোর সময়ে রাত জেগে যাতে দর্শনার্থীরা মণ্ডপ ও প্রতিমা দর্শন করতে পারেন– তার জন্য নাইট কারফিউ শিথিল করেছে রাজ্য সরকার। পুজো কার্নিভাল নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে অনেকেই এক বছর বাদে ফের পুজো কার্নিভাল দেখার আশায় বুক বেঁধেছিলেন।
কিন্তু মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আসন্ন শারদোৎসবকে কেন্দ্র করে যে ১১ দফার গাইডলাইন (corona guidelines) বা নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে– তাতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে– করোনা সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে কোনওভাবেই দুর্গাপুজোর কার্নিভাল আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। পুজো মণ্ডপেও কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা চলবে না।
নির্দেশিকায় (corona guideline) বলা হয়েছে—
১) সাধারণ দর্শনার্থীরা যাতে দূর থেকে প্রতিমা দর্শন করতে পারেন– তার জন্য খোলামেলা মণ্ডপ করতে হবে। ভিড় এড়াতে প্রবেশ ও বাহির পথ আলাদা করতে হবে। শারীরিক দূরত্ব যাতে বজায় রাখা যায়– তার জন্য মণ্ডপে পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে হবে।
২) প্রতিটি মণ্ডপে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক। বেশি সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে। তাঁদেরও মাস্ক পরা ও দর্শকদের মতো শারীরিক দূরত্ব রাখা বাধ্যতামূলক।
৩) অঞ্জলি দেওয়া যাবে। তবে অঞ্জলির ফুল বাড়ি থেকে নিয়ে যাবেন পুণ্যার্থীরা। সিঁদুর খেলা কিংবা দেবীবরণের রীতি পালন করা যাবে। কিন্তু ছোট-ছোট দলে ভাগ হয়ে করতে হবে। অঞ্জলির মন্ত্রোচ্চারণের ক্ষেত্রে পুরোহিতদের মাইক ব্যবহার করতে হবে। যাতে পুণ্যার্থীরা দূর থেকে শুনতে পান।
৪)পুজো মণ্ডপে কোনও জলসা কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না।
৫) মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড় এড়াতে সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি বৈদ্যুতিন মিডিয়ায় পুজো সম্প্রচারের উপরে জোর দিতে হবে।
৬) অনেক সংস্থাই পুরস্কার দেয়। সেই পুরস্কার দেওয়া সংস্থাগুলির বিচারকরা মণ্ডপে ভিড় জমাতে পারবেন না। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টে পর্যন্ত বিচারকরা মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারবেন।
৭) জাঁকজমকের সঙ্গে পুজোর উদ্বোধন কিংবা বিসর্জন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। উদ্বোধনের ক্ষেত্রে সম্ভব হলে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় মেনেই নদী কিংবা পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। প্রতিমা নিয়ে কোনও শোভাযাত্রা করা যাবে না।
৮) পুজো সংক্রান্ত যাবতীয় অনুমতি নিতে হবে অনলাইনে।
৯) ভিড় কমাতে তৃতীয়া তিথি থেকেই দর্শনার্থীদের জন্য মণ্ডপ খুলে দিতে হবে।
সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে এক জনস্বার্থ মামলায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল– ‘গতবছর আদালত পুজো আয়োজনের ক্ষেত্রে যে বিধি জারি করেছিল– এ বছরেও তা মেনে চলতে রাজ্যের কোনও আপত্তি নেই।’ তার পরেই কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল জানিয়ে দিয়েছিলেন– ‘গতবছর পুজো উপলক্ষ্যে জারি করা বিধিনিষেধ এ বছরেও জারি থাকবে। পুজোমণ্ডপে প্রবেশ করতে পারবেন না দর্শকরা।’ হাইকোর্টের ওই নির্দেশের পরে পুজো উপলক্ষ্যে রাজ্য সরকার কী বিধিনিষেধ জারি করে– তার উপরে নজর ছিল সাধারণ মানুষের। এ দিন সব সংশয়– জল্পনার অবসান ঘটল।