পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: প্রবল তাপে পুড়ছে বাংলা-সহ পূর্ব ভারতের চার রাজ্য। সাত সকালেই দুপুরের অনুভূতি। বেলা বাড়তেই রোদ্দুর যেন আগুন ঢালছে। সকলের একটাই চিন্তা- এই দহন জ্বালা থেকে মুক্তি কবে? তবে সে আশায় জল ঢেলে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের চার রাজ্যে আগামী দু’তিন চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করল হাওয়া অফিস। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডের একাংশে পয়লা মে পর্যন্ত, আবার কোথাও কোথাও ২ মে পর্যন্ত তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি বজায় থাকবে বলেই জানা গেছে । তবে শুধু বাংলা নয়, এপ্রিলের দহন দানব কার্যত গিলে খাচ্ছে গোটা দেশকে! গতকাল কেরলে হিট স্ট্রোক মৃত্যু হয়েছে দুজনের। লাক্ষাদ্বীপের সমুদ্র উপকূলেও তাপপ্রবাহ জারি রয়েছে। অন্য দিকে, রায়লসীমা, অভ্যন্তরীণ কর্নাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশে ৩ মে পর্যন্ত তাপপ্রবাহ চলবে। তেলঙ্গানা এবং সিকিমের কিছু অংশেও তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন।
সোমবার দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল পশ্চিমবঙ্গের কলাইকুন্ডায় (৪৫.৪ ডিগ্রি)। তার পরই ছিল অন্ধ্রপ্রদেশের নান্দিয়াল (৪৫ ডিগ্রি), তৃতীয় স্থানে ছিল ওড়িশার বারিপদা এবং পশ্চিমবঙ্গের পানাগড়।
সোমবার ওই দুই জায়গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন ৪৪ ডিগ্রির উপরে ছিল পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, পানাগড় এবং সিউড়ি। অন্য দিকে, বিহারের শেখপুরা, ভাগলপুর এবং পূর্ণিয়া, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ, ওড়িশার আঙ্গুল এবং অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের তাপপ্রবাহ থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলছে না রাতেও। গুমোট গরমে প্রায় বিনিদ্র রাত কাটছে।
এ বার সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বেলাগাম। বিশেষ করে কলকাতা ও উপকূলের জেলায়। রেকর্ডভাঙা গরম আলিপুর-দমদমে। ১০-২০ বছরের রেকর্ড নয়, ভেঙে চুরমার সর্বকালীন নজির। মঙ্গলবার আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিলের রাতে এত গরম শেষ বার ১৯৮৭ সালে সয়েছিল মহানগর। এতদিন সেটাই ছিল এপ্রিলে কলকাতার উষ্ণতম রাত। সেই রেকর্ড আজ ছুঁয়ে ফেলল আলিপুর। দমদমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও বেশি, ৩০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বকালীন রেকর্ড। এপ্রিলের রাতে দমদমের পারদ এই প্রথম ৩০ ডিগ্রির ঘরে।
২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল ২৯.৫ ডিগ্রিতে পৌঁছেছিল দমদমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সেই নজির আজ থেকে দ্বিতীয় স্থানে চলে গেল! ডায়মন্ড হারবারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দমদমের চেয়েও সামান্য বেশি, ৩০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রি বেশি। হাওড়া, সল্টলেক, সব জায়গাতেই এক দশা। বলা ভালো, দুর্দশা! দিনের তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে যাওয়ায় রাতে তাপমাত্রা খুব একটা কমতে পারছে না।
দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬-৭ ডিগ্রি বেশি থাকছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও। দ্বিতীয়ত, উপকূল ও উপকূল লাগোয়া জেলাগুলিতে সন্ধের পর থেকে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। আকাশ একটু হলেও মেঘলা হয়ে থাকছে। ফলে দিনে যে তাপ ঢুকছে, সেটা পুরোপুরি বেরোতে পারছে না। তাছাড়া শুকনো বাতাসের চেয়ে জলীয় বাষ্পের তাপ ধরে রাখার ক্ষমতাও বেশি।
হিট আইল্যান্ডের চেহারা নিচ্ছে শহর। অপরিকল্পিত নগরায়নের ঠেলায় সব বড় এবং ছোট শহর কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত। কংক্রিট তাপ শুষে রাখছে, ফলে দিন শেষ হলেও অনেকটা তাপ থেকে যাচ্ছে আমাদের আশপাশেই। গাছপালা কম, জলাশয় কম, তারও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সঙ্গে বিপদ বাড়াচ্ছে হাজারে হাজারে এয়ার কন্ডিশনড যন্ত্রের ব্যবহার। এসি ঘর ঠান্ডা করছে, কিন্তু গরম হাওয়া বাইরে বের করে দিচ্ছে। সবমিলিয়ে রাতে তাপমুক্তির তেমন সুযোগই পাচ্ছে না নগর, মহানগর।
বীরভূম, পুরুলিয়ার উদাহরণ টানলেই বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। দুই জেলাতেই আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫ ডিগ্রির ঘরে। অর্থাৎ, কলকাতা-দমদমের চেয়ে ৫ ডিগ্রি কম। একে পশ্চিমের জেলায় উপকূলের মতো মেঘের বালাই নেই। দ্বিতীয়ত, গ্রামীণ জেলায় হিট আইল্যান্ডের কুপ্রভাব এখনও তেমন নয়। তাই পুরুলিয়ার পারদ সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি থেকে সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রিতে নেমে যেতে পারলেও, কলকাতা-দমদমে সেটা একেবারেই হচ্ছে না।
আবহবিদরা বলছেন, দিনে-দিনে নগরে রাত আরও গুমোট হবে। গত বছর জুন, জুলাই, অগাস্টে রেকর্ডভাঙা উষ্ণতম রাত পেয়েছিল কলকাতা। এ বার গ্রীষ্মের শুরুতেই বেনজির গরম। শুধু তাই নয়, এপ্রিলের উষ্ণতম তালিকার প্রথম দশে চলতি এপ্রিলের একাধিক দিন।
তবে পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারত যখন রোদে পুড়ছে, তাপপ্রবাহের দাপটে যখন নাভিশ্বাস উঠছে, উত্তর-পশ্চিম ভারতে বিপরীত ছবি ধরা পড়ছে। পূর্ব আফগানিস্তান এবং উত্তর-পশ্চিম রাজস্থানের উপর দু’টি ঘূর্ণাবর্তের জেরে ওই অঞ্চলে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। পঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড় এবং উত্তরপ্রদেশে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বজ্রবিদ্যুতের পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন। আবার হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে শিলাবৃষ্টি এবং জম্মু-কাশ্মীরে ভারীত থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর-পূর্ব অসমের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হওয়ায় অরুণাচল প্রদেশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবং তুষারপাত হতে পারে। অন্য দিকে, অসম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজ়োরাম এবং ত্রিপুরায় ৩ মে পর্যন্ত বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি এবং ঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে।