পুবের কলম প্রতিবেদক: করোনা মহামারির ভয়াবহতা এখনও মানুষের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। একদিকে পৃথিবীকে স্তব্ধ করে লকডাউনে গৃহবন্দি বিশ্ব অন্যদিকে বাইরে বের হলেই রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয়। এই উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে সেই সময় সকলের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল কোভিড ভ্যাকসিন। সেই প্রতিষেধকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও বিভিন্ন সময়ে নানা মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, কোভিড ভ্যাকসিনের ক্ষতিকারক প্রভাবের কথা আদালতে স্বীকার করে নিয়েছে প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাস্ট্রোজেনেকা।
ব্রিটিশ-সুইস ওষুধ প্রস্তুত নির্মাতা কোম্পানি অ্যাস্ট্রোজেনেকা সম্প্রতি এক আইনি লড়াইয়ে ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা মেনে নিয়েছে৷ জানা গেছে, জেমি স্কট নামে জনৈক এক ব্যক্তি বহুজাতিক এই ফার্মাসিউটিক্যাল এবং বায়োটেকনোলজি কোম্পানির বিরুদ্ধে গত বছর প্রথম এক মামলা দায়ের করেন। স্কট তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেন যে, ২০২১ সালে এপ্রিল মাসে করোনা প্রতিরোধে অ্যাস্ট্রোজেনেকার প্রতিষেধক নেওয়ার পর থেকেই শারীরিকভাবে বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হন তিনি। অভিযোগকারীর দাবি, এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তাঁর রক্ত জমাট বাঁধে এবং মস্তিষ্কে রক্তপাত হতে শুরু করে। হাসপাতাল থেকেও স্কটের স্ত্রীকে জানানো হয় তাঁর জীবন বিপন্ন। মৃত্যুর মুখোমুখি তিনি। এতদিন প্রস্তুতকারক সংস্থার দাবি ছিল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় তৈরি এই ভ্যাকসিন ক্ষতিকারক নয়।
২০২৩ সালের মে মাসে স্কটের আইনজীবীর কাছে মেইল পাঠিয়ে অ্যাস্ট্রোজেনেকা দাবি করেছিল, জেনেরিক লেভেলের এই টিকার কারণে টিটিএস-এর ঘটনা ঘটেছে এটা স্বীকার করিনা আমরা। তবে গত এক বছর ধরে চলা এই মামলায় জর্জরিত সংস্থা। পঞ্চাশটির বেশি মামলা করা হয়েছে সংস্থার বিরুদ্ধে। অবশেষে প্রথমবারের মতো প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রোজেনেকা স্বীকার করেছে যে, তাদের তৈরি করা করোনা টিকায় খুব বিরল ক্ষেত্রে হলেও টিটিএসের কারণ হতে পারে।
টিটিএস(TTS)-এর সম্পূর্ণ রূপ হল থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম। এটি একটি খুব বিরল সিন্ড্রোম। এর প্রভাবে রক্ত জমাট বেঁধে যায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘থ্রম্বোসিস’ এবং প্লেটলেট সংখ্যা কমে যায়। যাকে বলা হয় ‘থ্রমোসাইটোপেনিয়া’। রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে থ্রম্বোসিস হতে পারে। যা রক্তনালীতে রক্তপ্রবাহের মাত্রা কমিয়ে দেয়। আর থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া শরীরে রক্তের প্লেটলেট সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে হয়।সাধারণত প্লেটলেট অতিরিক্ত রক্তপাত রোধ করতে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। আর সেই প্লেটলেট সংখ্যা কমে গেলে ক্ষতি হওয়া স্বাভাবিক।
অ্যাস্ট্রোজেনেকার এই স্বীকারোক্তির ফলে কোম্পানিকে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত অভিযোগকারীরা সকলেই ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।