পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: মুসলিমদের নিশানা করেই চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে তিনি কংগ্রেস সহ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘তুষ্টিকরণ’ (মুসলিম তোষণ)-এর অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কংগ্রেস নাকি হিন্দুদের সম্পত্তি মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করে দিতে চায়। এমনকী মঙ্গলসূত্রকেও নাকি এর থেকে বাদ দেওয়া হবে না। এই নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস, সিপিএমও। এমনকী দিল্লি পুলিশ কমিশনারের কাছেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশন এখনও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি। এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ হওয়া সত্ত্বেও তাতে গুরত্ব দিতে নারাজ মোদি।
এরপরও তিনি তাঁর এই ‘মুসলিম-টার্গেট’ ভাষণ অব্যাহত রেখে চলেছেন। সংরক্ষণ ইস্যু নিয়ে বলেছিলেন, ‘ইন্ডি’ (ইন্ডিয়া) জোট এসসি-এসটি-ওবিসি সংরক্ষণ তুলে দিয়ে তা তাদের ভোটব্যাঙ্ক (মুসলিমদের)-কে দিতে চেয়েছিল। ভোটের দফা যত এগোচ্ছে প্রধানমন্ত্রী তত চড়া সুরে মুসলিমদের টার্গেট করে চলেছেন। আর রবিবার তাতে ‘নতুন মাত্রা’ যোগ করেছেন মোদি। এই ইস্যুতে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধিকেও আক্রমণ করেছেন তিনি।
বেঙ্গালুরুর সভা থেকে রাহুলকে ‘শাহজাদা’ বলে কটাক্ষ করে মোদি এদিন বলেন, ‘কংগ্রেস যুবরাজ শিবাজি মহারাজ ও কিত্তুর চেন্নাম্মার মতো ভারতের মহান রাজা ও রানিদের অপমান করেছেন। কংগ্রেস যুবরাজ বলেছিলেন যে, অতীতের রাজা-মহারাজারা নিষ্ঠুর শাসক ছিলেন, যাঁরা সাধারণ মানুষের সম্পত্তি কেড়ে নিয়েছিলেন। তাঁরা নিয়মিত তাঁদের প্রজাদের শোষণ করতেন। এটার মানে কি? এর অর্থ কেবল তিনি শিবাজি মহারাজের মতো মহান রাজা এবং কিত্তুর চেন্নাম্মার মতো রানিদের অপমান করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি রাজপুত্রকে জিজ্ঞেস করতে চাই, আপনি রাজা-রানিদের অপমান ও সমালোচনা করেন, কিন্তু আপনি বহু শতাব্দী ধরে নবাব, নিজাম, সুলতান ও বাদশাদের অত্যাচারের কথা বলেন না। আপনি রাজা-রানিদের অবদান সম্পর্কে অবগত নন বলেই নাকি, তুষ্টিকরণের রাজনীতিতে লিপ্ত হতে চান বলে?’ মুসলিমদের নিশানা করতে আরও একবার রাহুলকে শিখণ্ডি করে মোদি বলেন, ‘মহীশূরের জনহিতৈষী রাজাদের অবদানের কথা যুবরাজ জানেন কি? রাজা-রানিদের সুশাসন ও দেশপ্রেম ঐতিহাসিক ও প্রেরণাদায়ক।
বেনারসের রাজার সমর্থন ছাড়া বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হয়নি। রানী অহল্যাবাই হোলকারই মন্দিরগুলিকে পুনর্র্নিমাণ করেছিলেন। বরোদার রাজা স্বীকৃতি দিয়েছিলেন ড. বি আর আম্বেদকরের প্রতিভাকে। আম্বেদকরের সাথে দেখা করে তাঁকে তাঁর দরবারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। রাজা তাঁকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠান। কংগ্রেসের যুবরাজ এ বিষয়ে কিছু জানেন কি? আমার মনে হয় কংগ্রেস যুবরাজের শুধু সাহস আছে কেবল রাজাদের বিরুদ্ধে কথা বলার, কিন্তু সুলতান ও নবাবদের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো সাহস নেই। উনি কি জানেন যে, নবাবরা দেশ ভাগ করার ষড়যন্ত্র করেছিল। এমন শাসকদের কথা এলে যুবরাজদের মুখ বন্ধ থাকে।’
এরপর মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবকে টেনে এনে কংগ্রেসকে নিশানা করে মোদি বলেন, কংগ্রেস নেতারা আওরঙ্গজেবের নৃশংসতার কথা মনে রাখেন না। যে দলগুলো আওরঙ্গজেবের প্রশংসা করে চলেছে তাদের সঙ্গে কংগ্রেস জোটবদ্ধ। তারা সুলতানদের সমালোচনা করে না যারা মন্দির ধ্বংস করেছিল এবং গো- হত্যায় লিপ্ত ছিল। কংগ্রেস নেতারা তুষ্টিকরণ নীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত। এসবই হচ্ছে ভোটব্যাংকের রাজনীতির কারণে।
আমরা কিত্তুর রানি চেন্নাম্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত। এনডিএ সরকার মহিলাদের জন্য সেনাবাহিনীর অনেক শাখা খুলেছে। এটি সৈনিক স্কুলে ছাত্রীদের ভর্তির অনুমতি দিয়েছে। সাঙ্গোল্লি রায়ান্নার নামে বেলগাভিতে একটি সৈনিক স্কুল রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, মুসলিমদের নিশানা করার যে পলিসি নিয়ে মোদি দীর্ঘকাল গুজরাতে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন, সেই একই নীতি তিনি দেশজুড়ে চালাতে চাইছেন। দেশজুড়ে ‘গুজরাত মডেল’ চালাচ্ছেন মোদি।