পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত পদক্ষেপ নিল নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণ এবং বিভাজনমূলক মন্তব্যের অভিযোগ জমা পড়েছিল কমিশনে কাছে। বিভাজনমূলক মন্তব্যের অভিযোগে বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে বিজেপি ও কংগ্রেস- দুই দলকেই নোটিস পাঠানো হয়েছে।
বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা ও কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেরû কাছ থেকে তাদের দলের নেতাদের ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জবাব চাওয়া হয়েছে। তাদের এমন উদ্যোগ দেখে অবশ্য অনেকে বলেছেন, রাহুলকে নোটিশ দিয়ে আসলে কমিশন ব্যালেন্স করেছে। আগামী ২৯ এপ্রিল, সকাল ১১টার মধ্যে দুই নেতাকে আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নাড্ডাকে পাঠানো চিঠিতে কমিশন জানিয়েছে, তারকা প্রচারকরা সর্বভারতীয় স্তরে উচ্চমানের বার্তা দেবেন বলেই আশা করা হয়। কিন্তু নির্বাচনী উত্তাপে কখনও কখনও চ্যুতি-বিচ্যুতি ঘটে যায়। নাড্ডাকে কমিশন জানিয়েছে, দলের সমস্ত তারকা প্রচারককে মর্যাদার কথা স্মরণ করাতে হবে। কংগ্রেস, সিপিআই এবং সিপিআই (এমএল)-এর তরফে জমা পড়া অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে নাড্ডাকে। কেবল রাজনৈতিক দল নয়, ১৭ হাজার ৪০০ আম-নাগরিকও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণ দেওয়ার অভিযোগ তুলে কমিশনে চিঠি দিয়েছেন।
রবিবার রাজস্থানের একটি সভায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘সরকারে থাকাকালীন কংগ্রেস বলেছিল দেশের সম্পদের উপর মুসলিমদের অধিকার সকলের আগে। অর্থাৎ দেশের সম্পদ বন্টন করা হবে তাদের মধ্যে, যাদের পরিবারে বেশি সন্তান রয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে দেশের সম্পদ। কংগ্রেসের ইস্তেহারেই বলা হয়েছে, মা-বোনদের সোনার গয়নার হিসেব করে সেই সম্পদ বিতরণ করা হবে। মনমোহন সিংয়ের সরকার তো বলেই দিয়েছে, দেশের সম্পদে অধিকার মুসলিমদেরই। আপনাদের মঙ্গলসূত্রটাও বাদ দেবে না।’
রাহুল গান্ধির একাধিক ভাষণ নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, রাহুল ভোটের জন্য উত্তর ভারত-দক্ষিণ ভারত বিভাজন করেছেন। গেরুয়া শিবিরের সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নোটিস পাঠানো হয়েছে কংগ্রেসকেও।
২০০২ সালে গুজরাতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মোদি যে বিদ্বেষ প্রচার শুরু করেছিলেন আজ ২২ বছর পর সেই একই প্রচার শোনা যাচ্ছে তাঁর মুখে। সেই প্রচারের মূল কথা হল মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিষ উগড়ানো। ২০০২-এর সেপ্টেম্বর থেকে গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে নরেন্দ্র মোদির ‘গৌরব যাত্রা’ শুরু হয়েছিল। তিনি প্রথমেই গুজরাতের মুসলিমদের সঙ্গে পাকিস্তান, পারভেজ মুশারফ, পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের যোগাযোগ টেনেছিলেন। প্রকাশ্য জনসভায় মুসলমানদের বংশবৃদ্ধি নিয়ে নরেন্দ্র মোদি কটাক্ষ করেছিলেন। ‘হাম পাঁচ, হামারে পচ্চিস’ বলে হাসতে হাসতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা করেছিলেন।
২০১৯ এ তিনি স্লোগান দিয়েছিলেন ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’। কিন্তু ২০২৪ এর প্রচার শুনে বোঝা গেল বিদেশের মাটি থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে সবার অ্যাকাউন্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির মতোই ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ স্লোগানও আসলে জুমলাই ছিল। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লাগাতার ভোট ব্যাঙ্কের অভিযোগ তুলে মোদি আসলে নিজের একটা পাকাপাকি ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি করতে চাইছেন। এবার ভোট বিজেপি ফের ক্ষময়তায় ফিরলে প্রমাণ হবে বিদ্বেষ ও ঘৃণার সমর্থকদের পাশে পেয়ে মোদি নিজে একটা গরিষ্ঠ ভোটব্যাঙ্ক তৈরিতে সফল হয়েছেন।