পুবের কলম প্রতিবেদক: মাদ্রাসার ছাত্র বা ছাত্রী শুনলে সমাজের তথাকথিত নাকউঁচুরা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে দেখে। তাঁদের সেই প্রচলিত ধারণাকে কুঠারাঘাত করেছেন ড. মঈনুদ্দিন। সব বাধা ঠেলে আপনি তখনই এগোতে পারবেন, যখন শুধুমাত্র শিক্ষাই আপনার ধ্যান-জ্ঞান হবে। শিক্ষাই আপনার জীবনে অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও সাফল্য এনে দিতে পারে। মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করলে যে আপনি সাফল্য থেকে বহু যোজন দূরে থাকবেন, সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন ড. মঈনুদ্দিন। মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করে এখন তিনি কৃষিবিজ্ঞানী। তাঁর কথায়, শিক্ষা আল্লাহ্র নিয়ামত। তাই শিক্ষার জন্য সংগ্রাম করা প্রত্যেক যুবকের কর্তব্য। শিক্ষা অর্জনই একটা মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং যুব সমাজ গড়ে তুলতে পারে। বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি গেস্ট লেকচারার হিসেবে কাজ করেছেন। এখন তিনি দেরাদুন উত্তরাখণ্ডের শ্রী গুরু রাম রাই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস-এ সহযোগী অধ্যাপক। ড. মঈনুদ্দিন তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা, মেধা ও গবেষণা দিয়ে মানুষের হৃদয় ও মননে জায়গা করে নিয়েছেন। এ কারণেই এত কমবয়সে বেশকিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারও অর্জন করেছেন।
কৃষিবিজ্ঞানী ড. মঈনুদ্দিনের শিক্ষা-অর্জনের পথে বহু বাধা এসেছে। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আজ শ্রী গুরু রাম রাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিজ্ঞান বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক। নিদা হক মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। উত্তরপ্রদেশের জালালপুর শহরের আম্বেদকরনগরে জন্ম। পড়াশোনা করে সফল হওয়ার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন ড. মঈনুদ্দিন। তিনি কম বয়সেই সাফল্যকে মুঠোয় করতে পেরেছিলেন।
দীনদয়াল উপাধ্যায় গোরখপুর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এনপিজি কলেজে পড়াশোনা করার সময় একের পর এক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। হার মানেনি মঈনুদ্দিন। তাঁর কথায়, ওই এলাকায় কেউ আমাকে বাড়ি ভাড়া দিতে চায়নি। দরজায় দরজায় ঘুরেছি একটা ভাড়া বাড়ি পেতে। প্রায় দু’বছর পর একটি হিন্দু পরিবার আমাকে বাড়ি ভাড়া দিতে রাজি হয়। শিক্ষা ছাড়া জীবনে সফল হওয়ার অন্য কোনও পথ নেই। শিক্ষাই আপনাদের মধ্যে লড়াই করার শক্তি যোগায়। তাই সবার ক্ষেত্রেই শিক্ষাই একমাত্র অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
ড. মঈনুদ্দিন স্যাম হিগিনবটম ইনস্টিটিউট অফ এগ্রিকালচার, টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস, এলাহাবাদ থেকে ‘প্রবৃদ্ধি, ফলন এবং চিনাবাদামের তেলের উপাদানের উপর নাইট্রোজেনের বিভিন্ন জৈব উৎসের প্রভাব’ বিষয়ে পিএইচডি করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই তিনি এমএসসিতে ‘বিভিন্ন বপন পদ্ধতি এবং সালফারের মাত্রার অধীনে সরিষার বৃদ্ধি ও ফলন আচরণ’ বিষয়ে তাঁর থিসিস কমপ্লিট করেছেন। কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক অভিজ্ঞতার ধারক ড. মঈনুদ্দিন। গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষকতাকেও তিনি গুরুত্ব দেন। তিনি প্রথমে প্রায় দু’বছর উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনের মায়া কলেজ অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে কৃষি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. মঈনুদ্দিনের গর্বিত বাবা হাজী মুনির আহমদ সাহেব জালালপুরের মির্জা গালিব ইন্টার কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। গর্বিত বাবার কথায়, ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক ছিল মঈনুদ্দিনের। অন্যান্য ছেলেদের মতো বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা মেরে সময় নষ্ট করত না। পড়াশোনা ছাড়া ও কোনও কিছু নিয়েই ভাবত না। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ও মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছে। ম্যাট্রিকুলেশনের পর আমার এক বন্ধু মঈনুদ্দিনকে কৃষি নিয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দিয়েছিল। ছেলেকে কৃষি নিয়ে পড়াশোনা করার ব্যাপারে বললে ও রাজি হয়ে যায়। ছেলের কঠিন পরিশ্রমে আজ সে একজন বিজ্ঞানী এবং দেশের সেবা করছে।