পুবের কলম প্রতিবেদক: ক্বারী মুহাম্মদ ইসমাইল জাফর। পশ্চিমঙ্গের ইসলামি সংস্কৃতির আঙিনায় এই নামটি দারুণভাবে পরিচিত। রাজ্যের বিভিন্ন ইসলামি প্রতিষ্ঠান, যেমন মুসলিম ইন্সটিটিউট, হজ্জ কমিটি, ওয়াকফ বোর্ড, মুসলিম পার্সেনোল ল বোর্ড, রাবতা আদাব-এ-ইসলামি-সহ বিভিন্ন সংস্থার স্বীকৃতি দানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। সঙ্গে লখনউয়ের নাদমাতুল উলেমার এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বাগ্মীতা ছিল অসাধারণ। দেশ জুড়ে দারসে কুরআনের মত বিষয় নিয়ে ধর্মীয় বক্তব্যে তিনি সবার মন কেড়ে নিয়েছিলেন। চলতি বছরের ২৭ মার্চ তিনি ইন্তেকাল করেন। ক্বারী মুহাম্মদ ইসমাইল জাফরের সুযোগ্য পুত্র ড. মাওলানা সাবাহ ইসমাইল নাদভি পুবের কলমকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তাঁর পিতার অনেক অজানা দিক আলোকপাত করলেন। শুনলেন পুবের কলমের প্রতিবেদক শাহরিয়র হোসেন।
আপনার পিতা ক্বারী মুহাম্মদ জাফর ইসমাইল কোথায় ও কবে জন্মগ্রহণ করেন?
সাবাহ ইসমাইলঃ আমার আব্বা ক্বারী মুহাম্মদ ইসমাইল জন্মেছিলেন ১৯৩৯ সালে। তাঁর জন্মস্থান এন্টালির মৌলালিতে
কবে তিনি ক্যালক্যাটা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন? বাবুল উলূম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আপনার পিতার সফর কেমন ছিল, তা নিয়ে যদি কিছু বলেন।
সাবাহ ইসমাইলঃ আজমাতিয়া মাদ্রাসা থেকে নিজের হাফিজ-এ-কুরআন সম্পন্ন করেন আমার আব্বা ক্বারী মুহাম্মদ জাফর ইসমাইল। তাঁর শিক্ষক ছিলেন ক্বারী আবদুল কোয়াই সাহেব। তিনি আবার ক্বারী ফজলুর রহমানের পিতা। আমার আব্বা ক্বারী মুহাম্মদ জাফর ইসমাইল নিজের শিক্ষকতা শুরু করেন আলিয়া মাদ্রাসা থেকে। সেটা ছিল ১৯৬৮ সাল। এরপর ১৯৭২ সালে তিনি নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাবুল উলূম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষকতার এক নয়া জগৎ উন্মোচন করলেন তিনি।
তাঁর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ভাষায় যেমন হিন্দি, বাংলা, আরবি, উর্দু ও ইংরেজিতে ছাত্রদের শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করেন। শিক্ষাক্ষেত্রের বিভিন্ন অংশে তাঁর হাজার হাজার ছাত্র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭২ সালে মৌলালি মসজিদের ইমাম হাজী মুহাম্মদ ইয়াসিনের মৃত্যুর পর আমার আব্বা ক্বারী মুহাম্মদ জাফর ইসমাইল এই মসজিদের ইমামের পদ অলংকৃত করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর বর্তমানে আমার ওপর এই মসজিদের ইমামের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বাবুল উলূম মাদ্রাসার দেখভাল করছি।
আপনার পিতার সঙ্গে আপনার কোনও উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা পালনের কথা কিছু বলবেন?
সাবাহ ইসমাইলঃ ক্বারী মুহাম্মদ ইসমাইল জাফর ছিলেন পবিত্র কুরআনের একনিষ্ঠ সেবক। তাঁর জ্ঞান ও কর্ম ছিল উল্লেখ করার মতো। ছোট থেকেই আমাকে কুরআনের প্রতি আকৃষ্ট করিয়েছিলেন আমার আব্বা। আমাকে আব্বা বলতেন, কুরআন তোমাকে জানতেই হবে। আমি যখন মাত্র ১০ বছরের, তখনই তিনি আমাকে ধর্মীয় জ্ঞাণ অর্জনের জন্য লখনউয়ের নাদওয়াতুল উলেমা কলেজে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
এরপর আমি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজের স্নাতোকোত্তর শেষ করি। তাফসির-এ কুরআন লিখতে তিনি আমায় নির্দেশ দিয়েছিলেন। আলহামদুইল্লাহ, তা অবশেষে শেষ করে উঠতে পেরেছি। ২৬ টা বছর লেগে গেল এটা শেষ করতে। ১২৬২ টি কলম আছে এতে। আমার আব্বার অনুপ্রেরণায় কুরআনকে জানা ও শেখার জন্য বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। কুরআনের জ্ঞান সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ আমার পিতাই আমায় দিয়েছিলেন।