দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন : দীর্ঘ চার বছর বিশ্বভারতী তার স্বাভাবিক ঐতিহ্যে ফিরে এল। কুড়ি সালের আট ই জানুয়ারি বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত এন আর সি এবং সি এ এ নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে এসে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন। সেই বছরই ফেব্রুয়ারি মাসে অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়েকের আলোচনা অজ্ঞাত কারণে হতে দেন নি তদানীন্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
এবার লোকসভার মুখে দেশকে সঠিক দিশা দেখাতে খুবই মূল্যবান ‘অশোক রুদ্র মেমোরিয়াল লেকচার’- আলোচনা হলো বিশ্বভারতীর অর্থনীতি বিভাগের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে। এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে বিদেশ থেকে একটি ভিডিও বার্তা পাঠান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ৷ কারণ যেহেতু এই মুহূর্তে পৃথিবীর অন্য গোলার্ধে আছেন, সরাসরি তিনি অংশ গ্রহণ করতে পারেননি তিনি। তবে বার্তায় জানান, নব্বই বছর আগে যেখানে অর্থাৎ শান্তিনিকেতনে আমি জন্মেছিলাম। সেখানে বসে আলোচনায় অংশগ্রহণ আনন্দের। খুবই মূল্যবান আলোচনা।
প্রভাত পট্টনায়েক সদয় হয়ে তিনি শান্তিনিকেতনে এসেছেন। এজন্য তাঁকে ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে শান্তিনিকেতন নিয়ে অমর্ত্য সেনের আবেগ আরেকবার প্রকাশ পেল। যা মাঝখানে কয়েক বছর অহেতুক বিতর্ক তুলে একটা ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছিল বিজেপির ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ দণ্ডমুণ্ড কর্তারা।
এদিনের আলোচনায় অনেকেই ভার্চুয়াল মোডে যোগদান করেন। এই আলোচনায় সারা বিশ্বের সাথে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে ভারতের কথা উঠে আসে। বলা হয় “আমাদের দেশে নাটকীয় জিডিপির” কথা। যেটা বুদবুদ ছাড়া কিছু নয়। ধনী লোকের কাছ থেকে ট্যাক্স নিয়ে যে জিডিপি পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দেশের শ্রমিক শ্রেণির যোগদান বা তাদের কর্মনিযুক্তির ফল সেটা চিরস্থায়ী হিসেবে দেখতে হবে। এটা মৌলিক কিন্তু জিডিপির সাময়িক বৃদ্ধি হলেও কর্মসংস্থান না হওয়া, দেশের পক্ষে কতটা বিপদজনক। আমেরিকার কথা তুলে বলা হয় বাইশ থেকে চব্বিশে আমেরিকার জিডিপি এক জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সেখানেও কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ ‘নব্য উদারবাদী পুঁজিবাদের অধীনে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য’ আলোচনায় উঠে আসে পুঁজিবাদের মানবিক মুখের অভাব।
অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়ক বলেন, দেশের কৃষিক্ষেত্রে জিডিপি, কর্মসংস্থানের অভাব, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার খাতে বেসরকারীকরণ বৃদ্ধি, নূন্যতম রোজগার, অর্থনৈতিক মৌলিক অধিকারের মতো বিষয়গুলি ৷ তিনি বলেন, “আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের অভাব ও দারিদ্র্যের অনেক অনেক কারণ আছে ৷ তার মধ্যে অন্যতম শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বেসরকারীকরণ। এই বেসরকারীকরণ খুব ক্ষতিকর। মানুষের নূন্যতম রোজগারে নজর দিতে হবে। এর জন্য চাই ফান্ডামেন্টাল ইকোনমিক রাইট।”
প্রযুক্তিগত বিষয় কৃষি ক্ষেত্রে আসবে। কিন্তু সরকারকে কোয়ালিটি এডুকেশন দিতে হবে। অধিক উৎপাদন দেখানো যে আসল উন্নয়ন নয়, দরিদ্র শ্রেণির আর্থিক উন্নয়ন এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সে কথাও উঠে আসে।। পাশাপাশি, প্রশ্নোত্তর পর্ব সহ মূল আলোচনায় উঠে আসে সংবিধানপ্রদত্ত মৌলিক অধিকার যা সংখ্যালঘু সহ অন্যান্যদের প্রাপ্য কোনভাবেই খণ্ডিত হওয়া ঠিক নয়। সংবিধানের উভয় কক্ষে শুধু সংখ্যাধিক্যের বলে হলেই চলবে না। সেটা হতে হবে সবার সহমতের ভিত্তিতে।