পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় তাদের সঙ্গে দেখা করলেন আফগানিস্তানের কনস্যুল জেনারেল জাকিয়া ওয়ার্দাক। কনস্যুল জেনারেল আফগানিস্তান এবং অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্থ করেন। কনস্যুল জেনারেল ওয়ার্দাক বলেন, ‘আমি মনে করি না আন্তর্জাতিক ছাত্ররা লড়াই শুরু করেছে। পুলিশ জানে এবং ঘটনাটি ঘটার সময় আরও অনেক লোক ছিল। নিরাপত্তারক্ষী বারণ করলেও জোরপূর্বক ভিতরে প্রবেশ করলে হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পিছনে কারণ যাই হোক না কেন, আমি এটি গুজরাত পুলিশ এবং সরকারের উপর ছেড়ে দিচ্ছি কারণ অনুসন্ধানের জন্য’।
ওয়ার্দাক বলেন, চিন্তার কিছু নেই। আমাদের ছাত্ররা বিগত ২০-২৫ বছর ধরে গুজরাতে আসছে, তারা নিরাপদে ছিল ও নিরাপদে থাকবে। আমি এখানে ছাত্রদের বলতে এসেছি যে তারা নিরাপদ এবং চিন্তা করার কিছু নেই।
একদিনের সফরে আফগানিস্তানের কনস্যুল জেনারেল জাকিয়া ওয়ার্দাক গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নীরজা গুপ্তা এবং পুলিশ কমিশনারের সঙ্গেও দেখা করেন’। ঘটনায় পুলিশ কমিশনারও তাঁকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও তিনি জানান। পাশাপাশি ভিসি এবং আইসিসিআর-এর কর্মকর্তারাও একই মত পোষণ করেছেন।
কনসাল জেনারেল দাবি করেন, ভারতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা এই দেশকে তাদের দ্বিতীয় বাড়ি বলে মনে করে। ঘটনাটিকে রাজনৈতিক রং দেওয়া উচিত নয়। আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তারা বলেছে যে এখানকার সকল শিক্ষার্থী তাদের ভাই ও বোনের মতো’।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের আমিষভোজী খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জিইউ ভিসির পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে কনস্যুল জেনারেল ওয়ার্দাক জানান, “আমাদের শিক্ষার্থীদের সম্মান করা উচিত এবং তারা যে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে থাকে, তারা নির্ধারিত নিয়ম ও প্রবিধানকে তারা সম্মান করে। আমি মনে করি না নিরামিষ-বা আমিশ খাবারের অভ্যাস সম্পর্কে কথা বলা উচিত। আমরা এখানে খাবার এবং ধর্ম নিয়ে কথা বলার পরিবর্তে একে অপরকে এবং মানবতাকে সম্মান করতে এসেছি। আমাদের বন্ধুত্ব সম্পর্কে কথা বলতে হবে, কীভাবে দুটি দেশকে একত্রিত করা যায় এবং কীভাবে একে অপরকে সম্মান করা যায়’। কনসাল জেনারেল আরও জানান, ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করে এবং হোস্টেলের নানা ধরনের সুবিধা দেখে তিনি খুশি ও সন্তুষ্ট।
ভাইস চ্যান্সেলর নীরজা গুপ্তা জানান, আফগানিস্তানের কনস্যুল জেনারেল জাকিয়া ওয়ার্দাকের এটি ছিল একটি আনুষ্ঠানিক সফর, অন্য দেশের দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের মতো এবং তিনি নিরাপত্তা এবং হোস্টেল ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ গুজরাতের এক হোস্টেলে ঢুকে ভাঙচুর ও হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। সেই হামলায় পাঁচজন বিদেশি শিক্ষার্থী আহত হন। আহত শিক্ষার্থীরা আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তুর্কমেনিস্তান ও আফ্রিকার বলে জানা যায়। যেহেতু হোস্টেল চত্বরে কোনও মসজিদ নেই, তাই তারাবির নামায পড়তে রুমের ভেতরেই একত্রিত হয়েছিলেন তারা। অভিযোগ, সেই সময়ই সেখানে উপস্থিত হয় উত্তেজিত জনতা। তাদের হাতে ছিল লাঠি ও ছোরা। আক্রান্তদের পড়ুয়াদের অন্যতম হলেন তুর্কমেনিস্তানের ব্যাচেলর অফ আর্টস বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র।
সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে কয়েকজন বিদেশি পড়ুয়ার গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে দেখা যাচ্ছে কিছু ব্যক্তিকে। ধর্মীয় স্লোগানও দিতে দেখা গিয়েছে। এই ভিডিওটি গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বিদেশি পড়ুয়াদের উপর আক্রমণের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে দাবিও করা হয়েছে।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর নিন্দায় সরব হয়েছেন অনেকেই। বিরোধীরাও তোপ দেগেছে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। সরব হয়েছেন এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এবং গুজরাতের কংগ্রেস নেতা গিয়াসুদ্দিন শেখও। ঘটনায় বিদেশ মন্ত্রক দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।