মোল্লা জসিমউদ্দিন: কলকাতা হাইকোর্টের কোর্ট রুমে রাজনৈতিক মজলিস বসানোর অভিযোগ এমনকি আদালত কর্মীদের হুমকি দেওয়ার হুশিয়ারি পর্যন্ত দিয়েছেন বিজেপি সমর্থিত আইনজীবীদের একাংশ। এই অভিযোগ খোদ রাজ্যের প্রধান বিচারপতির! কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এহেন ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন, এর পাশাপাশি বৃহত্তর বেঞ্চে বিষয়টি পাঠানোর হুশিয়ারিও দিয়েছেন। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ওই আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালতের পবিত্রতা নষ্ট করার অভিযোগ এনে তীব্র ভর্ত্সনা করেছেন।
এদিন এজলাসে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, ‘আপনারা যা করেছেন তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা।’ আর তার পরেই তিনি সাফ জানান, ‘আপনারা আদালতের পবিত্রতা নষ্ট করছেন। গত বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিসে সেই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। একদল আইনজীবী গিয়ে ওই দফতরের কর্মীদের হুমকি দিয়ে এসেছেন, কোর্ট রুমের ভিতরে তাঁদের মিটিং করতে দিতে হবে!’ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির মুখে তীব্র ভর্ত্সনা শুনে রীতিমত আতঙ্কে রয়েছেন আইনজীবীরা। শুধু ভর্ত্সনা করেই থেমে যাননি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। তিনি নির্দেশ দেন, ‘এবার থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে কলকাতা হাইকোর্টের কোর্টরুম বন্ধ করে দেওয়া হবে’। এদিন অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জানান, ‘বুধবারও প্রায় ৪০ জন আইনজীবী কোর্টের মধ্যে জড়ো হয়েছিলেন। খবর পেয়েছি একটি রাজনৈতিক মিটিং হচ্ছিল। কিন্তু কোর্টের মধ্যে কেন? যে কোনও জায়গায় মিটিং করতে পারেন। এখানে আদালতের পবিত্রতা বজায় রাখুন! এই সব ঘটনা ক্ষমা করা যায় না। কী ভাবে কেউ কর্মীদের হুমকি দিতে পারে? যদি এখানেই কেউ নিরাপদ বোধ না করেন, তবে আর কোথায় যাবেন? ওই আইনজীবীদের দু’জন অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী সম্পাদক ছিলেন। আমি দু’জনের নাম জানতে পেরেছি। আইনজীবী ফাল্গুনী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজেশ সাহা। এ ছাড়া কারা কারা ছিলেন শুক্রবার রাতের মধ্যে আমি সবার নাম চাই। প্রয়োজনে এই বিষয়টি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠাব।’ এর পাশপাশি তিনি কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘রাজ্যের এজিকে বলে দয়া করে এ বিষয়ে কিছু করুন।’
যে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অবিলম্বে তাঁদের নামও জানতে চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। আদালতের কর্মীদেরই হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রার জেনারেলের ঘরে ঢুকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।শুক্রবার সকালে একটি মামলা চলাকালীন অ্যাসিস্ট্যান্ট সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তীকে দেখে ওই আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, “আইনজীবী হয়ে আদালতের কর্মীদের হুমকি কেন? বাড়াবাড়ি করলে লার্জার বেঞ্চে বিষয়টা জানাব।” আদালত চত্বরে রাজনৈতিক দলের বৈঠক হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি। মূলত বিজেপির লিগাল সেলের আইনজীবীদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রার জেনারেলের ঘরে ঢুকে একদল আইনজীবীর অভব্য আচরণ করেছেন। কোর্টরুমের মধ্যে মিটিং করার দাবি জানিয়েছেন। তাতে বাধা দেওয়াতেই হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বার এসোসিয়েশনের সদস্য হয়ে কীভাবে হুমকি দেওয়া যেতে পারে? তাতেই বিরক্ত প্রধান বিচারপতি। ওই আইনজীবীরা রেজিস্ট্রার জেনারেলের পিএ, ডিএ-কে হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। ইতিমধ্যেই দুই আইনজীবীর নাম জানতে পেরেছেন প্রধান বিচারপতি। তাঁরা হলেন, ফ্লাগুনী বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজেশ শাহ। এর মধ্যে ফ্লাগুনী বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচিত সদস্য। এ কথা শুনে এএসজি অশোক চক্রবর্তী বলেন, “খুব দুর্ভাগ্যজনক। আমি নিজে বিষয়টি দেখব।”
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘কোর্ট চত্বর আরও বেশি সুরক্ষিত হওয়া উচিত। আদালতের ঘরে মিটিং হতে পারে না। কোর্টের কর্মীরা আমাদের জন্য, আইনজীবীদের জন্য কাজ করেন। তাঁরাই যদি অসুরক্ষিত বোধ করেন, তাহলে আমরা কোথায় যাব? আইনজীবীদের সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি বলেন, “যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের সবার নাম চাই রাতের মধ্যে। নাহলে লার্জার বেঞ্চে এই ধরনের একটা মামলা চলছে সেখানে পাঠিয়ে দেব।” এজিকেও নোটিস দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।