দেবশ্রী মজুমদার, বোলপুর ও রামপুরহাট: লাল সতর্কতা জারি অজয় ও হিংলো লাগোয়া চারটি ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে। পুজোর আগেই এই বন্যা পরিস্থিতিতে সমূহ ক্ষতির মুখে বীরভূম। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই কার্যত নদীর বাঁধ ভেঙে জলবন্দী জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এদিকে টানা বৃষ্টিতে রামপুরহাট, নলহাটি, মুরারই ও দুবরাজপুর এলাকার চাষের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান চাষিরা।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বীরভূমের নানুর থানার থুপসরা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিঁদুরপুর গ্রামের কাছে অজয় নদের বাঁধ ভেঙে গেলে এখনও পর্যন্ত কুড়ি থেকে বাইশটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সব থেকে খারাপ অবস্থা সিঁদুরপুর গ্রামে। জেলা প্রশাসনের আশঙ্কা ওই গ্রাম প্লাবিত হয়ে বহু গৃহপালিত পশুর মৃত্যু হয়েছে, বেশকিছু মানুষ এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন বলে গ্রামবাসীদের দাবি। পুরো গ্রাম জলের নীচে চলে যাওয়ায় এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি, বলে জানা গেছে।
বুধবার মাঝ রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের ম্যাসানজোর ও শিকাটিয়া ব্যারেজ থেকে অজয়ে প্রায় ২ লক্ষ কিউসেক আর হিংলো থেকে প্রায় ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। নিম্নচাপের প্রভাবে ঝাড়খণ্ড ও লাগোয়া এলাকায় প্রবল বৃষ্টির জেরে এই পরিমাণ জল ছাড়ায় জেলার চারটি ব্লকের অজয় ও হিংলো লাগোয়া বেশ কিছু গ্রামে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এদিকে জল ছাড়ার ফলে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সিঁদুরপুর গ্রামের কাছে অজয় নদের বাঁধ ভেঙে গিয়ে হু হু করে জল ঢুকতে থাকে এলাকায়। শুধুমাত্র সিঁদুরপুর গ্রামের ১২০টি পরিবারের বাস। চার-পাঁচটি পাকা বাড়ি ছাড়া সবই মাটির বাড়ি। অজয়ের বাঁধ ভাঙার ফলে বেশ কিছু গ্রামবাসী এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও জেলা পরিষদ পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কেরিম খান বলেন, এখনও পর্যন্ত ২২টি গ্রাম প্লাবিত। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাণহানির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।” বাসাপাড়া বাজারে জল ঢুকেছে। সেখানে থাকা পুলিশের ব্যারাকে হাঁটু জল।
প্লাবনের বিপদের মধ্যেই স্থানীয় ভাবে উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখনও প্রশাসনের কেউ সেখানে পৌঁছতে পারেনি বলে খবর।
জেলাশাসক বিধান রায় জানিয়েছেন, “অজয় ইতিমধ্যে বিপদসীমা ছুঁয়েছে। নানুরের সিঁদুরপুরের কাছে নদী বাঁধ ভেঙেছে। হিংলো নদীও বিপজ্জনক অবস্থায়। খয়রাশোল ও দুবরাজপুরের বেশ কয়েকটি গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ম্যাসানজোর ছাড়াও সেচের সুবিধার জন্য ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের শিকাটিয়ায় অজয়ের উপরে ব্যারেজ গড়ে তোলা হয়েছে। এমনিতেই অজয় বর্ষায় ফুলে ফেঁপে ওঠে। অতীতে বীরভূমের একাধিক গ্রামকে প্লাবিত করার ইতিহাস রয়েছে। ব্যারাজ গড়ে ওঠার পরে ঝাড়খণ্ডে অতিরিক্ত বৃষ্টির পরে বিপুল জল ছাড়া হলে সেটাও বীরভূম প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ বারে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিংলোর জল।
অন্যদিকে, বীরভূমের নলহাটির ব্রাহ্মণী নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় নলহাটি দেবগ্রাম ঘাটে বিপদসীমার উপর দিয়ে জল বইছে। আজ সকালে প্রশাসনের তরফ থেকে মাইকিং করে জানানো হচ্ছে জনসাধারণকে নৌকায় পারাপার করা হচ্ছে। অল্প সংখ্যক লোক বাইক নিয়ে। এছাড়া প্রশাসনের তরফ থেকে পাশ দিয়ে দেব গ্রামের রাস্তা ঘিরে দেওয়া হয়েছে এবং প্রশাসন নিজে গিয়েও দেখভাল করছেন ওই নদীর ঘাট। বিপাকে পড়েছে যাত্রীরা তার কারণ এদিকে জাতীয় সড়ক বেহাল অবস্থায় রয়েছে। যার ফলে মানুষের এখন যাতায়াতের প্রধান রাস্তা ছিল এই দেবগ্রামের ঘাট। জলে ডুবে যাওয়ার ফলে মানুষ বিপাকে পড়েছে। সরকারের কাছে এলাকাবাসীদের দাবি, এই ঘাটে একটি ব্রীজ করা হোক। তাতে মানুষের রামপুরহাটের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো হবে।