পুবের কলম প্রতিবেদক: ইমার্জেন্সি, আইসিইউ-তে নেই আরএমও (রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার)। সব জায়গায় নার্সিং স্টাফ-ও ঠিক মতো নেই। স্বাস্থ্যসাথী-র অধীনে ভর্তি রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে টাকা। বহরমপুরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আচমকা পরিদর্শনের জেরে এমনই বিভিন্ন খামতি রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনের নজরে এসেছে। এই সব খামতির বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। আচমকা পরিদর্শনের এই রিপোর্ট পেশ করা হবে রাজ্য সরকারের কাছে। একই সঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন ওই বেসরকারি হাসপাতালগুলির উদ্দেশ্যে সতর্ক করে জানিয়েছে, খামতিগুলি পূরণ করা না হলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে, হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।
মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের বেসরকারি একটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন তথা, ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন-এ অভিযোগ জানানো হয়েছিল। কিছু দিন আগে ওই অভিযোগের শুনানি শেষে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান, বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, বহরমপুরের বেসরকারি হাসপাতালগুলির উপর এ বার নজর রাখবে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন। এর জন্য খুব শীঘ্রই পদক্ষেপও করা হবে। এর কারণ হিসাবে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, বহরমপুরে এখন বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল একের পর এক উঠে আসছে। স্বাস্থ্য কমিশন মনে করছে, এই শহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে মানুষ ঠিক মতো পরিষেবা পাচ্ছেন কি না, সেই সব বিষয়ে নজরে রাখার জন্য এটাই ঠিক সময়।
অবশেষে গত বৃহস্পতিবার বহরমপুরের পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালে আচমকা পরিদর্শন করে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের বেশ কিছু অভিযোগ আসছিল। এই জন্য আচমকা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাকি হাসপাতালগুলিতেও প্রয়োজনে পরিদর্শন করা হবে। আচমকা এই পরিদর্শনে অনেক খামতি আমরা দেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘এই পাঁচটি হাসপাতালে কম-বেশি আমরা দেখলাম, বিএসসি নার্সিং ছেড়ে দিলাম, জিএনএম নার্স-ও সব জায়গায় ঠিক মতো নেই। এএনএম-দের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। ইমারজেন্সি বিভাগে আরএমও নেই, আইসিইউ-তে আরএমও নেই। এই ধরনের গাফিলতি আমরা দেখেছি।’
এই আচমকা পরিদর্শনে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও সঙ্গে ছিলেন। স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওনাকে আমরা বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেছি। আমরাও রিপোর্ট তৈরি করব, সরকারকে জানাব।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিষেবা স্বাস্থ্যসাথী। আচমকা এই পরিদর্শনে হাসপাতালের অ্যাডমিশন ডেস্ক থেকে চারটি কেস আমরা ধরেছি। একটি কেসে রোগী ভর্তি আছেন, তাঁকে বলা হয়েছে স্বাস্থ্যসাথীতে অপারেশন হবে না। বাধ্য হয়ে তাঁকে টাকা দিয়ে অপারেশন করাতে হয়েছে। একটি কেসে দেখেছি বাড়ির লোকের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যসাথীর অধীনে রোগী ভর্তি, তা হলে কেন টাকা চাওয়া হবে।’
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘যারা বেসরকারি চিকিৎসা ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকের কাছে একটি বার্তা দেওয়ার যে, আমরা আছি, আপনারা কাজ করুন। কাজের খামতি হলে আমরা সুযোগ দেব খামতিগুলিকে ঠিক করার জন্য। কিন্তু তার পরে আর নয়। সেখানে কিন্তু আমরা কড়া পদক্ষেপ নেব। হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব।’
বেসরকারি হাসপাতালগুলির উদ্দেশ্যে এমন সতর্কবার্তা দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অবশ্য বলেন, ‘এই সব হাসপাতাল বন্ধ করার পক্ষে আমরা নই, এই সব হাসপাতাল সংস্কারের পক্ষে আমরা। তাদেরকে আমরা সময় দেব যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খামতিগুলি পূরণ করে, যাতে জেলার সব মানুষ ঠিক মতো পরিষেবা পান।’