পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: সোমবার দুপুর একটা নাগাদ শেষ দেখা গিয়েছিল ভবানীপুরের ওষুধ ব্যবষায়ী ভব্য লাখানিকে। ব্যবসায়িক এক সহযোগীর সঙ্গে মিটিং ছিল তাঁর। অভিযোগ এর পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন ওই ব্যবসায়ী। স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ। অবশেষে বুধবার বিডন স্ট্রীট থেকে ওই ব্যবসায়ীর মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়। সেই ফোনের সূত্র ধরেই পুলিশ জানতে পারে, নিমতার এক বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসায়ীর শেষ কথা হয়। সেই বন্ধুর বাড়িতে হানা দিতেই জলের ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয় ওই ব্যবসায়ীর দেহ। উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা এলাকায় একটি বাড়ির জলের ট্যাঙ্কের পাশে ব্যবসায়ীর দেহ বস্তাবন্দি করে পুঁতে রাখা হয়েছিল বলে জানতে পারে পুলিশ। শুধু তাই নয়, তার উপর তুলে দেওয়া হচ্ছিল পাঁচিল। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ মনে করছে, ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে এই খুন। ব্যবসায়ীকে নিমতায় ডেকে এনে মাথায় উইকেট দিয়ে বাড়ি মেরে খুন করা হয়। পরে জলের ট্যাঙ্কের নীচে দেহ ঢুকিয়ে রাখা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ভবানীপুরের প্রিয়নাথ মল্লিক লেনের বাসিন্দা মৃত ব্যবসায়ী ভব্য লাখানি(৪৪)-র খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই অনির্বাণ গুপ্ত ও সুমন দাস নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে শিলিগুড়ির মিটিং বাতিল করে মৃত ব্যবসায়ীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এই ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শিলিগুড়িতে একটা স্যাড নিউজ পেয়েছিলাম। তাই মিটিং ক্যানসেল করে চলে এসেছি। সিধেসাধা ব্যবসায়ী ছিলেন। ওঁরা পুলিশের কাছে মিসিং ডায়েরি করেন। পুলিশ কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রেফতার করেছে। আমি মনে করি এরা ক্রিমিনাল নয়। ক্রিমিনালের চেয়েও বড় ক্রিমিনাল। নিমতার ঘটনা পরিকল্পিত খুন। এদের ক্রিমিনাল ব্রেন। পুলিশের রিপোর্ট থেকে দেখলাম। তিনি আরও জানান, কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। এক ছেলে কালও পরীক্ষা দিয়ে এসেছে। আর একজন ছেলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। দুটো বাচ্চা ছেলে, মা এবং স্ত্রী রয়েছে পরিবারে। স্বাভাবিকভাবেই পুরো পরিবারটা ভেঙ্গে পড়েছে। তদন্তভার এখন লালবাজারের হোমিসাইড শাখাকে দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে, পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, যে বাড়ি থেকে ভব্যর দেহ পাওয়া যায়, সেটি অনির্বাণ গুপ্ত নামে এক যুবকের। নিমতার বাসিন্দা অনির্বাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ওষুধ সরবরাহের অজুহাতে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। ওই ওষুধ সরবরাহ করেননি এবং টাকাও ফেরত দেননি। ধৃত দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ময়না তদন্ত হয়েছে। এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার ব্যবসায়ীর স্ত্রী নেহা লাখানি থানায় অভিযোগ করেন। তিনি জানান, তাঁর স্বামীকে কেউ অপহরণ করেছেন। সোমবার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড এলাকা থেকে ভব্য বেরনোর পর তাঁর আর কোনও খোঁজ পাননি তিনি। ঘটনার তদন্তে নেমে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। অবশেষে নিমতার রবীন্দ্রপল্লিতে মৃত ভব্য লাখানির ব্যবসায়িক সঙ্গীর বাড়ি থেকে দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একটি জলের ট্যাঙ্কের নীচে দেহ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, দেহ বস্তাবন্দি করে একটি জলের ট্যাঙ্কের নীচে রেখে দেওয়া হয়। পরে পাঁচিলও গেঁথে ফেলা হয় তার উপর। ইতিমধ্যে ওই ব্যবসায়িক সঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত এক জন স্বীকার করেছেন, ভব্য সংজ্ঞা হারিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করতে উইকেট দিয়ে একের পর এক আঘাত করা হয় তাঁর মাথায়। তার পর উইকেটগুলো এক জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীর রক্তমাখা জামাকাপড় ছুঁড়ে ফেলা হয় নিমতার একটি ধাপায়। সেগুলো ইতিমধ্যেই উদ্ধার করেছে পুলিশ। খুনের ঘটনায় ধৃত দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বুধবার বালিগঞ্জ থানায় যান কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা, যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) ওয়াকার রাজা। তাঁরা মূল অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর।