মোল্লা জসিমউদ্দিনঃ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে উঠে সন্দেশখালি মামলা।সন্দেশখালি কাণ্ডে ধৃত শেখ শাহজাহান কার হেফাজতে থাকবে? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার সেই মামলায় রায়দান স্থগিত রাখল আদালত। কবে এই রায়দান হবে?সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। অপরদিকে এই মামলার শুনানি পর্বে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান , -‘সিবিআই শাহজাহানকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চায়’। এই প্রসঙ্গে অবশ্য অবশ্য ইডির আইনজীবী জানান, -‘শাহজাহান সহ বাকি অভিযুক্তদের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তদন্তের ওপর অন্তর্বতী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। তারপরও কেন পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে’।
এরপরই শাহজাহানকে জেল হেফাজতে পাঠানোর পক্ষে জোর সওয়াল করে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম রাজ্যের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তোলে বলেন, -‘ ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলার ঘটনার তদন্তে যদি স্থগিতাদেশ থাকে, তাহলে কীভাবে শেখ শাহজাহানকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হল? কেন জেল হেফাজতে নেওয়া হল না। আদালত তো শুধু জানিয়েছিল শাহজাহানের গ্রেফতারিতে কোনও বাধা নেই’।
যদিও শেষ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ এই মামলায় কোনও রায়দান করেনি। অপরদিকে শাহজাহানের আইনজীবী এদিন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কে জানায়, -‘ গোটা বিষয়ের ওপর তদন্তে যদি স্থগিতাদেশ থাকে, তাহলে তাঁর মক্কেলকে কেন হেফাজতে রাখা হবে। সেই কারণেই আগাম জামিনের আবেদন জানানো হয়েছে জানান। এদিন আদালতে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে তদন্ত চালাতে চায় না বলে ইডির আইনজীবী আদালতকে জানিয়েছে। ইডির আইনজীবী বলেন , -‘ গোটা তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করছে রাজ্য পুলিশ। রাজ্য পুলিশের হাতে তদন্তভার গেলে তথ্য বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের গত ৫ জানুয়ারি তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছিল ইডি আধিকারিকদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁদের। বেশ কয়েকজন ইডি আধিকারিক আহত হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সন্দেশখালির ঘটনার ৫৫ দিন পর গ্রেফতার করা হয়েছিল শাহজাহানকে। ইডির অভিযোগ, -‘অভিযুক্তকে পুলিশ নিজের হেফাজতে রেখে তদন্তের অগ্রগতিকে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে’। এদিকে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আদালতে বলেন, -‘এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন’।গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে সিবিআই বা সিট গঠন করে তদন্ত করার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
এই বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলেই আর্জি খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। এবার কলকাতা হাইকোর্টেই ফের সিবিআই তদন্ত চেয়ে আবেদন করা হল।সন্দেশখালির ধৃত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী হিসেবে ইডির ডেপুটি ডিরেক্টরকে সিআইডির অফিসে ডাকা হয়েছিল। সোমবারই ভবানী ভবনে আসতে বলা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু সেই তলবে সাড়া দেননি ইডির ডেপুটি ডিরেক্টর। বরং হাইকোর্টে যাওয়ার কথা বলেছিল ইডি। আদালতে গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করল তাঁরা।ইডি আধিকারিকরা সন্দেশখালিতে তল্লাশি অভিযানে গিয়ে গ্রামবাসীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
সেই ঘটনায় বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত সিট গঠন করার নির্দেশ দেন। বলা হয়, সিবিআই এবং রাজ্যের আধিকারিকরা যৌথভাবে তদন্ত করবে। তবে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। আগামী ৬ মার্চ সেই মামলার শুনানি রয়েছে ।শেখ শাহাজাহানের আইনজীবী গত সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁর আর্জি , -‘নিম্ন আদালতের পেন্ডিং জামিনের আবেদনগুলি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ শুনুক’। কিন্তু প্রধান বিচারপতি তাঁকে স্পষ্ট জানান, -‘শাহজাহানের প্রতি তাঁর কোনও সমবেদনা নেই’। প্রধান বিচারপতি শাহজাহানের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ”আগামী ১০ বছর আমরা আপনাকে ব্যস্ত রাখব। আপনি ভালো করে একটি লিগাল টিম তৈরি করুন। আগামী ১০ বছর আপনাকে অন্য কাজ করতে হবে না। এই মামলা চালাতেই কেটে যাবে।” এখন দেখার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সন্দেশখালি নিয়ে কবে রায়দান করে?