পুবের কলম প্রতিবেদক: বেসরকারি কোনও হাসপাতালে অন্তত ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে এই অপারেশনের জন্য। তার উপর, আদৌ সেখানে অপারেশন হবে কি না, এমন আশঙ্কাও থেকে যায়। এর কারণ, এই অপারেশন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, রোগীর প্রাণহানির শঙ্কাও থেকে যায়। এই অবস্থায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে একটানা আট ঘণ্টা ধরে মস্তিষ্কের এক জটিল এবং বিরল অপারেশন করে চল্লিশোর্ধ এক ব্যক্তিকে নবজীবন দিলেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
কলকাতার সরকারি এই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ঘুরছিলেন অত্যন্ত গরিব এই রোগী। সমস্যা বলতে ছিল তাঁর মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা, মাঝে মধ্যে আচমকা খিঁচুনি শুরু হতো তাঁর, এর পর তিনি অজ্ঞান হয়ে যেতেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়েছিল, বড় মাপের এক টিউমার রয়েছে এই রোগীর ব্রেনের কেন্দ্রস্থলে। চিকিৎসক দীনেশ জালুকার কথায়, ‘এই ধরনের ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল ধরে অজ্ঞান অবস্থায় থেকে যেতে পারেন রোগী, এমনকী তাঁর মৃত্যুর আশঙ্কাও থেকে যায়।’ এই অবস্থায় বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ঘোরার পর অবশেষে এই রোগীকে নিয়ে আসা হয় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।
এই রোগীর ক্ষেত্রে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল অপারেশন? আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক দীনেশ জালুকার অধীনে অপারেশন হয়েছে এই রোগীর। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা বিরল। তার উপর এই রোগীর শারীরিক অবস্থাও ভালো ছিল না। এ দিকে, এই রোগীর ব্রেনের কেন্দ্রস্থলে রক্তের শিরার সঙ্গে ছিল বিশাল মাপের ওই টিউমার। সব মিলিয়ে এই অপারেশন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এই অপারেশনের সময় একটু এদিক-ওদিক হলেই অপারেশন টেবিলেই রোগীর মৃত্যু হয়ে যেতে পারে।’ তবে, শুধুমাত্র এমন আশঙ্কার বিষয়টিও নয়। এই চিকিৎসকের কথায়, ‘এই অপারেশনের সময় একটু ইনজুরি হয়ে গেলেই দেখা গেল রোগীর মৃত্যু হয়তো হলো না কিন্তু দিনের পর দিন ধরে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরেও রোগীকে ভেন্টিলেশনে রেখে দিতে হতে পারে।’
তবে কথায় বলে, সব ভালো যার শেষ ভালো। এ ক্ষেত্রে সেই কথাই সত্যি হল। কারণ, যাবতীয় ঝুঁকি সত্ত্বেও এই রোগীর মস্তিষ্কে টানা আট ঘন্টার অপারেশনের সময় কোনও বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়নি চিকিৎসকদের। রোগীর শরীরে রক্ত কম থাকার পুরনো সমস্যা ছিল। এই জন্য অপারেশনের সময় রক্ত দিতে হয়েছিল। চিকিৎসক দীনেশ জালুকা বলেন, ‘অপারেশনের পর এই রোগীকে আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম। তিনি এখন ভালো আছেন। হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।’ আর এ ভাবেই এই সরকারি হাসপাতালে নবজীবন পেলেন এই রোগী।