পুবের কলম প্রতিবেদক: ২০ ফেব্রুয়ারি, শুভেন্দু অধিকারী এবং অগ্নিমিত্রা পাল সহ কয়েকজন বিজেপি বিধায়ককে যখন সন্দেশখালি যাওয়ার পথে ধামাখালিতে পুলিশ বাধা দেয়। অভিযোগ, বিশেষ পুলিশ সুপার ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ আইপিএস অফিসার জসপ্রীত সিংকে বিজেপি বিধায়করা খালিস্তানি বলেছেন। ‘আওয়াজ’-এর তরফে এধরণের শব্দের ব্যবহারকে কুরুচি পূর্ণ সংবিধান বিরোধী মন্তব্য আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ‘আওয়াজ’।
শনিবার প্রেস ক্লাবে এই প্রসঙ্গে আয়োজিত একটি সাংবাদিক বৈঠকে আওয়াজের সভাপতি সাইদুল হক শাহজাহান ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারির দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা একজন পুলিশ অফিসারকে খলিস্তানি বলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এটা শিখ ধর্মের অপমান। বিজেপির কাছে হিন্দু ধর্মই একমাত্র ধর্ম। ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করে এমন অপব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ করছে ‘আওয়াজ’। একইসঙ্গে, তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী ও কাউন্সিলর অনন্যা ব্যানার্জীর সম্প্রতি করা মন্তব্যেরও বিরোধিতা করেছেন সাইদুল হক।
ইরান সোসাইটির সভাপতি কাওয়াল সিং ওয়ালিয়া বলেন, খালিস্তানি এই শব্দবন্ধের বিরোধিতা করছি। এই শব্দবন্ধ ইংরেজ আমলে শুরু হয়েছিল। খালিস্তানি বলা একটা গালি। এধরনের শব্দ গালির আকারে একজন অফিসারকে বলা শুধু অপমানজনক নয়, এটা ভয়ংকর। কেউ খালিস্তান চায় না এখানে। সবাই এখানে একটা শান্তিপূর্ন দেশ চায়। এটা খুবই ভয়ংকর কারণ এটা পুরনো ক্ষতকে মনে করিয়ে দেয়। এটা বিভাজন সৃষ্টি করে।
সমাজ কর্মী ও খ্রিষ্টান সমাজের জন্য কর্মরত অঞ্জলী রোজারিও জানান, আপনারা সবাই দেখছেন সন্দেশখালিকে নিয়ে কি হচ্ছে। বিজেপি অন্যদিকে মোড় ঘোরাতে চাইছে। ওরা শুধু ধর্ম নিয়ে লড়াই করছে। আমাদের সর্দারজিকে যেটা বলা হয়েছে সেটা খুব খারাপ কথা। এগুলো মেনে নেওয়া যায় না। এখন শুনলাম আমাদের ফাদারের কথা বলছে। আমাদের ফাদারের বিষয়ে ওরা কি জানে? সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক অশোক সিং বলেন, সন্দেশখালির মত ঘটনা বাংলায় এর আগে কখনো দেখা যায়নি। একই দেশে যেন দুই সংবিধান। সন্দেশখালি একটা সন্দেশ পুরো দেশের জন্য।
অবসর প্রাপ্ত ইন্সপেক্টর অফ কলেজেস নিসার আহমেদ জানান, কাউকে জিহাদী, কাউকে খালিস্তানী, কাউকে বিহারী বলা হচ্ছে। বিভাজনের রাজনীতি করা হচ্ছে। এধরনের মন্তব্য যারা এই দেশের জন্য রক্ত দিয়ে লড়াই করেছে তাদের অপমান। প্রায় একই মন্তব্য করেন সমাজকর্মী নাসির আহমেদ। সন্দেশখালি ঘটনা এবং খালিস্তানির মত মানহানিকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে ‘আওয়াজ’-এর দৃষ্টিভঙ্গি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন নাসির আহমেদ।
প্রসঙ্গত, এদিনের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে ‘আওয়াজ’ পক্ষ থেকে মোট সাতটি দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এগুলি হল, ১) সন্দেশখালি ঘটনা নিয়ে আওয়াজের উদ্বেগ, ২) শাহজাহান ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের গ্রেফতাবের দাবি, ৩)জমি সংক্রান্ত সমস্যা এবং গ্রামবাসীদের জমি ফেরত দেওয়া, ৪) একজন বিজেপি বিধায়কের খালিস্তানি মন্তব্যের নিন্দা, ৫) কোন অবস্থাতেই মানহানিকর এবং ঘৃণ্য বক্তব্য নয়, ৬) গ্রামবাসীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা এবং ৭) প্রাক্তন বিধায়ক এবং অন্যান্য নিরপরাধ ব্যক্তি যারা যুক্ত ছিলেন না তাদের মুক্তি।