আবদুল ওদুদঃ বাংলায় বিজেপির বিদ্বেষবার্তাকে ফের নিশানা বানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তিনি দাবি করেন, তাঁর আন্দোলনের জন্য আধার নিষ্ক্রিয় ইস্যু বন্ধ করা গিয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের মঞ্চে এই দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দেশপ্রিয় পার্কে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে এই দাবি করলেন তিনি। এ দিন আধার কার্ড ডি-অ্যাক্টিভেট করা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ফের একহাত নিলেন মমতা।
পাশাপাশি, পাঞ্জাবি অফিসারের বিরুদ্ধে ‘খালিস্তানি’ মন্তব্য নিয়েও প্রতিবাদে সরব হলেন তিনি। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পাঞ্জাবি অফিসার কী দোষ করল, তুমি একটা পাঞ্জাবি অফিসার আছে বলে তুমি তাকে খালিস্তানি বলে দেবে? পাগড়ি দেখলেই খলিস্তানি, মুসলিম দেখলেই পাকিস্তানি। কে বলার অধিকার দিয়েছে? সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, তুমি যখন খুশি যা খুশি যাকে খুশি বলে দেবে।
কত মুসলিম আইএএস আইপিএস ডব্লিউসিএস আছে। তুমি তাঁদের দেখলেই পাকিস্তানি বলে দেবে। সেনাবাহিনীতে তো কত পাঞ্জাবি আছে, গোর্খা আছে, এদের রেজিমেন্ট আছে, তুমি কি তাঁদের খালিস্তানি বলে দেবে? কেউ যদি ভাবেন চ্যানেলে বসে বাংলা ভাষাকে অপমান করবেন, তো জানবেন ভুল করছেন। বাংলা এত সহজে মাথা নত করে না। সূর্য যখন উদিত হয়, তখন আমাদের মানবিকতাও জাগ্রত হয়। সে তো ডিউটি করছিল।’
এ দিন আধার বাতিল করা নিয়ে সরব হন মমতা। তিনি বলেন, ‘আধার নিয়ে যা হল, আমরা এটা রুখে দিয়েছি। বাংলাই পারে। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। সব মতুয়াদের আধার কার্ড ডি-অ্যাক্টিভেট করে দিয়েছে। কেন কাটল, কারণ ওরা বলে (ওঁরা) বিদেশি। ৫ বছর বাদে শুনতে হবে বিদেশি। আমি ভোটের অঙ্কে বিশ্বাস করি না, মানবিকতায় বিশ্বাস করি।’
তারপরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি ভাবেন চ্যানেলে বসে বাংলা ভাষাকে অপমান করবেন, পাঞ্জাবি অফিসার কী দোষ করল, তুমি একটা পাঞ্জাবি অফিসার আছে বলে তুমি তাকে খালিস্তানি বলে দেবে? ভাষাদিবসের অনুষ্ঠানে শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে বলেন, ‘দু-একজন গজিয়ে উঠছে যাঁরা বাংলাকে লাঞ্ছনা করছে, আমি তাঁদের বলে রাখি আগামী দিনে আপনারা ভালো থাকুন। আমরা মাথা নত করতে জানি না।’
মমতা বলেন, বাংলা সকল সংস্কৃতিকে সম্মান করে। বাংলায় অপসংস্কৃতিকে চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। সব ভাষা সু¨র, জৈন, ক্ষত্রিয়, নমঃশূদ্র তাদের ও আলাদা ভাষা আছে। তাদের ভাষাও খুব সুন্দর। আমরা সকলকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষা নিয়েও বিশেষ বার্তা দিতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে প্রতুলদা অসুস্থ ছিলেন। সব ভাষার তার নিজস্বতা আছে। সব ভাষাকে আমরা সম্মান করি। সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। আমি অলচিকি ভাষায় লিখেছি। আজ একটা প্রবণতা চলছে বাংলার সংস্কৃতিকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে। যে ভরসা জোগায়, বিশ্বাস জোগায়, সেই সংস্কৃতিকে লাঞ্ছনা করে কোনও কিছু একটা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাই আমি বলব আজ শপথ নিন বাংলার এই চক্রান্তকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করতে দেব না।’
এরপরে মমতা বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে অনুরোধ করব ইংলিশ শিখুন। অনেক অফিসার ইংলিশে ড্রাফট করতে হলে ভুল হয়ে যায়, ওদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’ আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রতুল মুখোপাধ্যায় ‘আমি বাংলায় গান গাই’ পরিবেশন করেন। কবি সুবোধ সরকার কবিতা আবৃত্তি করেন। আবুল বাশার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, কবি জয় গোস্বামী, শিল্পী জোগেন চৌধুরি, সাংসদ নাদিমুল হক, সাংসদ সামিরুল ইসলাম, রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন বীরবাহা হাঁসদা।