কৌশিক সালুই, সিউড়ি: সাবধান। আবার এনআরসি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কা.কা.. করতে শুরু করেছে আবার। এমনকী আধার কার্ডের লিংক অনেকের কেটে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবার বীরভূমের সিউড়ি চাঁদমারি ময়দানে সরকারি পরিষেবা প্রদান এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস কর্মসূচি ছিল। সেখান থেকেই কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে এভাবে তোপ দাগেন তিনি।
নির্বাচন এলেই এনআরসি নিয়ে জুজু দেখাতে শুরু করে বিজেপি শাসিত কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আর এক মাসের মধ্যে বা আগে লোকসভা ভোট ঘোষণা হবে। তার আগে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যারা ভোটের কাজে যুক্ত আছেন তাদেরকে বলছি সাধারণ মানুষের নাম যাতে কোনওভাবেই কাটা না পরে সেটা দেখতে হবে। ইতিমধ্যেই অনেকের আধার কার্ডের লিঙ্ক কেটে দেওয়া হয়েছে বলে আমার কাছে খবর আছে। উত্তর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় করা হয়েছে। বীরভূমে কাটা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গেও কাটা হচ্ছে। বর্ধমানের জামালপুরে ৫০ জনের লিঙ্ক কাটা হয়েছে। আধার না থাকলে কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে না। ব্যাংক এও অ্যাকাউন্ট হবে না। মানুষকে জিজ্ঞাসা না করেই তার আধার কার্ডের লিঙ্ক কেটে দিচ্ছ, লজ্জা করে না তোমাদের!
নির্বাচনের সময় যাতে ব্যাঙ্কের টাকা না পায়, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধা না পায়, রেশন যাতে না পায় তারজন্য তোমাদের চক্রান্ত। আমি আমার চিফ সেক্রেটারিকে বলে যাচ্ছি আধার কার্ডের জন্য আমাদের বাংলায় কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না, সেটা দেখতে হবে। এরজন্য আলাদা হেল্পলাইন পোর্টালও খোলা হবে।
কেন্দ্র সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে, সরকারি আবাস প্রকল্পে টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। যারা ১০০ দিনের কাজে টাকা পাননি সেই ২৪ লক্ষ ৫০ হাজার জবকার্ড হোল্ডারকে ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে টাকা দেওয়া শুরু করব। যাদের নাম বাদ গিয়েছে তাদের জন্য ক্যাম্প করে নাম জমা নেওয়া হবে। আমি কৃষক আন্দোলনকে স্যালুট জানাই। বিজেপি চেষ্টা করে কোনও একটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করে। পঞ্জাব জ্বলছে, দিল্লি জ্বলছে, হরিয়ানা জ্বলছে। কৃষকরা যাতে তাদের দাবি নিয়ে দিল্লি পৌঁছাতে না পারে তারজন্য সব চেষ্টা করছে। আমি তাদের সমবেদনা জানাই।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন নিয়ে খেলা হচ্ছে। হিন্দুদের যে নিয়মে বিয়ে হয় সেটা কি মুসলিমদের হয়? আদিবাসীদের যে নিয়মের বিয়ে হয় সেই নিয়মে কি খ্রিস্টানদের হয়? তপশিলিদের যেভাবে বিয়ে হয় সেটা কি অন্যান্যদের হয়? সব জাতির নিজস্ব শাসন এবং নিজস্ব পদ্ধতি আছে। সব কেড়ে নেবে! কাপড় জামা পড়বেন, সেটাও ঠিক করে দেবে! এক জাতি এক ভোট তাহলে কি রাষ্ট্রপতি শাসন? আমরা দেখে নেব এবং বুঝে নেব, আমরা খেলতেও জানি এবং দেখাতেও জানি। কেন্দ্রের কাছে মাথা নত করবো না। ভিক্ষাও চাইবো না। অন্যায়ভাবে বিনা বিচারে এবং সিবিআইকে দিয়ে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর জেলে ভরে রেখে ভোট করবে, সেটা কিন্তু আমরা মেনে নেব না।
ভারতের জরুরি অবস্থা জারি করে বহু মানুষকে জেলে ভরে ইন্দিরা গান্ধি ভেবেছিলেন ভোট করবে, কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন। আজও যদি মনে করে কথায় কথায় ইডি দিয়ে, সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে, জেলে পুড়ে দিয়ে নির্বাচনটা বিজেপি কমিশনকে নিয়ে করবে, তাহলে আমাদেরও অধিকার আছে মানুষের হয়ে কথা বলার। আমরা কারও দয়ায় বেঁচে নেই। এক সময় সিপিএমের অত্যাচার সহ্য করেছি, এখন বিজেপির। রাম-বাম-কংগ্রেস এখন সব এক হয়ে গিয়েছে। যে সিপিএম নর মুন্ডু নিয়ে খেলা করেছে সেই সিপিএমের মুখে বড় বড় কথা শোভা পায় না। কেষ্টকে কতদিন ধরে জেলে ভরে রেখে দিয়েছে। কিন্তু মানুষের মন থেকে ওকে দূর করতে পারেনি। মানুষের মুখোমুখি ওর কথা শুনতে পাচ্ছি এখানে। বিএসএফকে লেলিয়ে দিয়েছেন চোপড়াতে, চারটি শিশুর মৃত্যু হল। ক’জন গিয়েছিলেন? কটা টিম নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন আপনারা? বাংলায় বিজেপি জট পাকানোর চেষ্টা করে, আর আমরা জট খোলার চেষ্টা করি।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সন্দেশখালি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলেছি, কোনও মহিলা এখনও পর্যন্ত কেস বা মামলা কেউ করেননি। যদি নির্যাতিত হয়ে থাকেন তাহলে পুলিশ সুয়োমোটো মামলা করুক, আমি বলেছি।’