সেখ কুতুবউদ্দিন: একজন বড় সরকারি অফিসার হয়েও চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি ‘দায়িত্ব’ ভোলেননি অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা শামিম সরকার। চাকরিপ্রার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন শামিম। তাঁর প্রচেষ্টায় বহু ছাত্রছাত্রী কোচিং নিয়ে চাকরি পাচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম আয়োজিত কোচিংয়ের সহযোগী হিসেবে ছিল অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩০-এরও বেশি তরুণ-তরুণী চাকরি পেয়েছেন। অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় ১৫০০ চাকরিপ্রার্থী বিভিন্ন দফতর, পুলিশ এবং শিক্ষক পদে নিযুক্ত হয়েছেন। সাধারণ, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পড়ুয়াদের প্রতিষ্ঠিত করে তোলাই লক্ষ্য অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনের।
২০০৭ সালে অ্যাসোসিয়েশনের পথ চলা শুরু হলেও হিন্দু- মুসলিমসহ সব সম্প্রদায়ের বহু পড়ুয়া এই প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়ে সাফল্য পাচ্ছেন।
সদ্য প্রকাশিত হয়েছে পুলিশ ও প্রাথমিকের নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকা। তাতে এ বছর ১১ জন পুলিশে এবং ২০ জন প্রাথমিকে চাকরি পেয়েছেন অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনে কোচিং নিয়ে। রবিবার ছিল পুলিশ ও প্রাথমিকে সফলদের সংবর্ধনা জানানোর বিশেষ অনুষ্ঠান।
এদিন ২৯/১ নম্বর কলেজ স্ট্রিটের ‘হোয়াইট হাউস’-এ সফলদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রাক্তন জয়েন্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ মহসীন, কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এসিপি সৈয়দ বদরুদ্দোজা, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার কাফিল আহমেদ হাসমি, কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন আধিকারিক নজরুল ইসলাম, পুলিশ অফিসার আফসার আলি, মুহাম্মদ কাদির, ডিএসপি দেবাশিস কুমার রক্ষিত, ডব্লিউবিসিএস এক্সিকিউটিভ মারুফা সুলতানা, ডিএসপি শাহরোজ রেজা, ডিএসপি আতিয়া রহমান, ডব্লিউবিসিএস এক্সিকিউটিভ নবিরুল ইসলাম সহ অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে উত্তীর্ণ পুলিশ কনস্টেবল ও প্রাথমিকের টেটে নিয়োগপ্রাপ্তরা।
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা শামিম সরকার একজন বড় আধিকারিক হয়েও ছাত্রছাত্রীদের অফিসার, শিক্ষক, পুলিশ তৈরিতে নিবেদিত-প্রাণ। ইমরান আরও বলেন, পুলিশ নিয়োগের পরীক্ষায় মুসলিম মহিলা আবেদনকারীদের বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছিল। গত পুলিশ নিয়োগের পরীক্ষায় মহিলারা হিজাব পরে আবেদনপত্রে ছবি দেওয়ার ফলে বহু পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট বাতিল করা হয়েছিল। আবেদন করেও পরীক্ষায় বসতে পারেননি অনেক মহিলা প্রার্থী। এই নিয়ে আদালতে মামলাও হয়। তাঁর বক্তব্য, পুলিশ-নিয়োগ কর্তাদের এই সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক।
কারণ শিখরা পাগড়ি পরেন। রাষ্ট্রপতি ভবনেও বিশেষ অনুষ্ঠানে পুলিশরা টুপি পরেন। বহু হিন্দু পরিবারের মহিলারাও মাথায় কাপড় দিয়ে থাকেন। চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশে ইমরানের পরামর্শ, কখনও পরিবার ও শিকড়কে ভুলো না। আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো।
কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার কাফিল আহমেদ হাসমি বলেন, চাকরি জীবনে সত্য ও কর্মনিষ্ঠাকেই অবলম্বন করতে হবে। কারণ, অসততা বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক সৈয়দ বদরুদ্দোজা বলেন, সরকারি চাকরিটা পেয়ে গেছি, আমার জীবন সুরক্ষিত— এ কথা অনেককে বলতে শোনা যায়। কিন্তু সব সময় মাথায় রাখতে হবে, আগামী প্রজন্মের জীবন সুরক্ষিত ও এগিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের মুখে শোনা যায়, কে পড়লো, কে পড়লো না, আমার বয়ে গেল! আসি, যাই, মাইনে পাই—এই মানসিকতা থাকলে তাঁরা পড়ুয়াদের ভালো চান না। শিক্ষকদের মূল কাজ পড়ুয়াদের শিক্ষাদান করা।
সফল চাকরীপ্রার্থীদের উদ্দেশে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা শামিম সরকার বলেন, এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। কীভাবে আরও উপরে ওঠা যায়, তার জন্য একাগ্রতার সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, ভালো গাইডের পাশাপাশি ধৈর্য্য, পরিশ্রম ও নিয়মানুবর্তিতাকে আঁকড়ে ধরলেই সাফল্যের পথ সহজ হবে।