পুবের কলম প্রতিবেদক: চাকরি জীবনে তাঁদের বেতন বৃদ্ধি হয় বটে। তবে, হয় না সেই অর্থে পদোন্নতি। ফলে, একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে কাজে যোগদান করার পর, অবসর-ও নিতে হয় তাঁদের একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবেই। অথচ, তাঁদের মধ্যে মেধার অভাবও নেই।
কিন্তু, উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই বলে, ইচ্ছে থাকলেও তাঁদের কেউ যেমন ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য হতে পারেন না শিক্ষক, তেমনই তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও পদেও আসতে পারেন না। এমনই তাঁদের দাবি। তবে, শুধুমাত্র তাঁদের জন্য এই সব সুযোগ-সুবিধার বিষয়ও নয়। তাঁরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেলে রোগীদের জন্য তখন পরিষেবার মান আরও বাড়বে বলেও তাঁরা মনে করেন। এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে, চাকরিরত অবস্থায় তাদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে বলে আশায় রয়েছে এই স্বাস্থ্যকর্মীদের বিভিন্ন অংশ।
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নামে পরিচিত এই স্বাস্থ্যকর্মীরা। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজে তাঁরা পরিষেবা দেন। রোগনির্ণয় থেকে শুরু করে চিকিৎসা প্রদানের পরিষেবা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে তাঁদের উপস্থিতি। যেমন, তাঁদের কেউ হয়তো ল্যাবরেটরিতে পরিষেবা দেন। এ ক্ষেত্রে হয়তো রক্তের কোনও পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট রোগীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করলেন তিনি। কিংবা, তিনি হয়তো কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট রোগীর সোয়াবের নমুনা সংগ্রহ করলেন। তেমনই, ইসিজি-এক্সরে সহ অন্য বিভিন্ন পরীক্ষার পাশাপাশি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট-এর পরিষেবা প্রদানেও রয়েছে তাঁদের উপস্থিতি।
রাজ্যের এই স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর রাজ্য সম্পাদক সমিত মণ্ডল বলেন, ‘ইনক্রিমেন্ট হয় আমাদের, তবে প্রোমোশন হয় না। ফলে, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হিসাবে চাকরিজীবন শুরু করতে হয়, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হিসাবেই চাকরিজীবন শেষ করতে হয় আমাদের।’ যদিও, সরকারি কর্মী হিসাবে চাকরিজীবন শুরুর পর থেকে সাধারণত ১০ বছর অন্তর এই স্বাস্থ্যকর্মীদের গ্রেডেশনে পরিবর্তন হয়। সমিত মণ্ডল বলেন, ‘১০ বছর পর কেউ হয়তো গ্রেড থ্রি থেকে গ্রেড টু-তে উন্নীত হলেন। তার পর আরও ১০ বছর পর গ্রেড টু থেকে গ্রেড ওয়ান-এ উন্নীত হলেন। তবে, এটা পদোন্নতি নয়। আর, এই ক্ষেত্রে খুব সামান্য ইনক্রিমেন্ট হয়।’
ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘সরকারি চাকরি করতে করতে ডাক্তার, নার্সরা যেমন বেতন সহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ পান, আমাদের ক্ষেত্রে তেমন সুযোগ এখনও চালু হয়নি।’ অথচ, এই ধরনের সুযোগ তাঁদের জন্য থাকলে, তাঁরা যে পরিষেবা দেন, তার মান-ও আরও বাড়ত এবং আখেরে রোগীরাই উপকৃত হতেন বলে মনে করেন তাঁরা। সমিত মণ্ডল বলেন, ‘মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা সকলে তো বিজ্ঞান নিয়েই পড়াশোনা করেছেন। তার উপর উচ্চমাধ্যমিকে ফিজিক্স কেমিস্ট্রি বায়োলজি না থাকলে ল্যাবরেটরি টেকনোলজি পড়া যায় না।’
সরকারি ডাক্তার, নার্সদের মতো তাঁরাও যাতে চাকরি করতে করতে বেতন সহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেতে পারেন, তার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে তাঁরা দাবি জানাচ্ছেন। এ কথার পাশাপাশি সমিত মণ্ডল বলেন, ‘চাকরিজীবন শুরু করার পর ডাক্তার, নার্সদের মতো উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেলে আমাদের পদোন্নতির সুযোগও তৈরি হতো। আমাদের কেউ হয়তো তখন শিক্ষক হতে পারতেন, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের পড়াতে পারতেন। কেউ হয়তো ল্যাবরেটরির কোনও পদের দায়িত্বে থাকতেন।’ তিনি বলেন, ‘চাকরিরত চিকিৎসক এবং নার্সদের মতো চাকরিরত স্বাস্থ্যকর্মীরাও আগামী দিনে উচ্চশিক্ষার জন্য সুযোগ পাবেন বলে আমরা আশায় রয়েছি।’