নঈম সাহেবের স্মৃতিচারণায় পুবের কলম পত্রিকার বর্ষীয়ান সাংবাদিক মুহাম্মদ আলাউদ্দিন
প্রতিদিনই সম্পাদকীয় বিভাগ থেকে কপি, বিষয় ও সংবাদ লিংক বণ্টন করা হত বিভাগীয় সম্পাদক ও প্রতিবেদকদের কাছে। এসাইনমেন্ট দেওয়া হয় সাংবাদিকদের। কিন্তু দেখা যে প্রায় দিনই দুপুরের আগেই নইম সাহেব নিজে থেকে বেছে নিতেন হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের মুসলিম ও মিল্লাত বিষয়ক মামলার কপি।
জ্ঞানভাপী নিয়ে প্রায় প্রতিটি কপিই আগাম বেছে নিতেন তিনি। আমরা তাঁকে ‘জ্ঞানভাপী এক্সপার্ট’ আখ্যা দিতাম। জ্ঞানভাপী এখনও রয়ে গেল সংবাদ শিরোনামে আর মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের ডাকে চলে গেলেন আমাদের সবার প্রিয় সদর নইম সাহেব। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি পুবের কলমের জন্য কলম ধরেছেন। দু’দিন আগে সকালে আমার মোবাইলে নাম দেখলাম নইম সাহেবের। সাধারণত অত সকালে তিনি আমাকে ফোন করেন না। ফোনে জানালেন আজ কোনও কপি করতে পারব না।
শরীরটা পারমিট করছে না। অফিসে শুনলাম ভেন্টিলেশনের আছেন তিনি। তিনি দৈনিক স্টেটসম্যানের সম্পাদক ছিলেন। ইংরেজি কাগজে তাঁর অনেক প্রতিবেদন বের হয়েছে। তাই তাঁর লেখাএডিট করার কোনও প্রয়োজন হত না সাধারণত। কিন্তু ইদানিং তাঁর লেখা আমাকে দেখে দিতে হত। আমরা বুঝতে পারতাম ওঁনার অসুস্থতার কথা, কিন্তু বলা সত্বেও তিনি কলমের জন্য লেখা ছাড়তে রাজি হচ্ছিলেন না। সাধারণত কাগজে লিখে পাঠাতেন বাড়ি থেকে। কিন্তু ইদানিং তাঁর হাতের লেখায় বিস্তর পরিবর্তন দেখে আমরা অফিসে আলোচনা করতাম।
ওঁনার অতি লেখার আগ্রহ দেখে আমরা অবাক হয়ে যেতাম। অসুস্থতা নিয়েও তিনি বেশি বেশি কপি দাবি করতেন। একটা লেখা শেষ হয়ে গেলে বলতেন, সুমনা হাত খালি রয়েছে কপি পাঠাতে পার। সন্ধ্যায় সুমনা ডাক দেওয়ার লোকটা চলে গেলেন লেখার জগৎ ছেড়ে অনন্তের পথে।
অফিসে আসতেন নিয়মিত। সকলের সঙ্গে হাসি মেজাজে কথা বলতেন এমনভাবে যেন তিনি রেগুলার অফিসে না এসেও অফিসের সকলের কত প্রিয়। নইম সাহেবের বিদায় পুবের কলমের সম্পাদকীয় বিভাগের অপূরণীয় ক্ষতি।
একজন বন্ধু, সাংবাদিক, সম্পাদক ও প্রতিবেদককে হারাল বাংলা সংবাদপত্র। তাঁর উপসম্পাদকীয় নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ছিল পাঠক সমাজে। কাগজ ছেপে প্রকাশ হওয়ার আগেই আমরা ক’জন আগে পড়ে ফেলতাম। তাই সকালে তিনি কাগজ হাতে পাওয়ার আগেই আমরা কমপ্লিমেন্টস পাঠিয়ে দিতাম। উনি বলতেন, কলমে লেখা দিয়ে আমি তৃপ্ত হই। বাকি জীবনটাকে এভাবেই কাটিয়ে দিতে চাই। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর ইচ্ছা পূরণ করলেন। ভেন্টিলেশনে যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত তিনি কলমে লিখলেন।