কিবরিয়া আনসারী: বয়স মাত্র আড়াই বছর। যে কোনও উচ্চশিক্ষিত মানুষকে হারিয়ে দিতে পারেন ক্ষুদে আবির ইসলাম। আড়াই বছর বয়সে ঠোঁটস্থ দেশ-বিদেশের জাতীয় প্রতীক, বিভিন্ন দেশের রাজধানী। প্রশ্ন করলেই অকপটে বলে দিতে পারেন, ইংরেজিতে ২৫টি ভারতের জাতীয় প্রতিকের নাম। দেশ ছাড়িয়ে পৃথিবীর মোট ৩১টি দেশের জাতীয় পশুর নামও বলে দিতে পারেন অকপটে। এছাড়াও ইংরেজি মাস, দিন, ফুল, ফল সবজি সহ একাধিক বিষয়ে দখল রয়েছে ক্ষুদের। তার অসামান্য প্রতিভার জেরে ইতিমধ্যেই সাড়া পড়েছে এলাকায়। সেসব শুনতে কৌতুহলীদের ভিড় জমছে বাড়ির উঠোনে। এইটুকু বয়সেই ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস জায়গা করে নিয়েছে ক্ষুদে আবির।
মুর্শিদাবাদের ডোমকলের জুড়ানপুর পঞ্চায়েতের ডুবাপাড়ার বাসিন্দা আসামকুল ইসলামের একমাত্র সন্তান এ জে আবির ইসলাম। তাঁদের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে। সে চতুর্থ শ্রেনীতে পাঠরত। ছেলের বয়স পূর্ণ না হওয়ায় এখনও কোনও স্কুলে ভর্তি করেননি। বাবা আসামকুল ইসলাম গ্রামে একটি ছোট্ট মুদির দোকান চালান। মা জেসমিনা খাতুন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। অল্প বয়স থেকেই খুব সহজেই বিভিন্ন ফল-ফুল চিনিয়ে দিতে পারত। আর তা দেখে অবাক হতেন মা-বাবা। তাদের ছেলে আবির কেমন করে এতো কিছু মনে রাখেন, তা জানা নেই পরিবারের। এখনও ঠিকভাবে কথা বলাও শেখেনি সে। এমন বিস্ময়কর কাণ্ড দেখে অবাক হয়েছেন পরিবারসহ গ্রামবাসীরা।
ছোট থেকেই অজানাকে জানার ও অচেনাকে চেনার আগ্রহ তার। স্মৃতিশক্তিও তীর্ক্ষ। যে কোনও জিনিস একবার দেখেই সে মনে রাখতে পারে। আবার নতুন কোনও জিনিস চেনার পর পুরোনো জিনিস সে ভুলেও যায় না। এভাবেই তাকে বিভিন্ন জিনিস শেখাতে থাকেন মা জেসমিনা খাতুন। দেশ বিদেশের জাতীয় প্রতীক, মানব শরীরের ১৭টি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও প্রায় ৮০০টি ইংরেজি শব্দের বাংলা সবকিছুই অনায়াসে শিখে ফেলেছে আবির। বিভিন্ন প্রাণী থেকে শুরু করে পাখি, ফুল ও ফল সবই তার ঠোঁটস্থ। আবার খুব সহজেই কঠিন কঠিন জিনিসের নামও বলে দিতে পারে সে।
মা জেসমিনা খাতুন বলেন, “একবার কোনও কিছু শুনলেই সঙ্গে সঙ্গে মনে গেঁথে নেয় আবির। আমি সেভাবে ছেলে-মেয়েকে পড়ানোর সময় পাই না। চতুর্থ শ্রেনীতে পাঠরত মেয়ে পড়তে বসলেই তাকে জ্বালাতে শুরু করে। ওর দিদির সঙ্গে পড়ার বাইনা করে। হাতে বই দেওয়ার পর সে শান্ত হয়। নিজে নিজেই বই নিয়ে পড়তে থাকে। মাঝে মাঝে একটু একটু দেখিয়ে দিই।” জেসমিনার কথায়, ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডে যোগাযোগ করেছিলেন পরিবার। এরপর সেখানে আবিরের ভিডিয়ো ও ছবি পাঠান তাঁরা। চলতি বছরেই তার এই কৃতিত্বকে রেকর্ড করা হয় ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডে। কিছু নিয়ম পূরণ করলেই সকলের মতো আবিরের ঘরে এসে পৌঁছাবে ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস’-এর মেমেন্টো, মেডেল এবং শংসাপত্র। আবিরের বাবা আসামকুল ইসলাম জানান, “শংসাপত্র নিতে যে অর্থের প্রয়োজন তা জোগাড় করার সামর্থ নেই। কর্তৃপক্ষ টাকা জমার জন্য সময় দিয়েছেন। দেখি টাকা জোগাড় করতে পারি কি।”
ছেলের প্রতিভা দেখে উচ্ছ্বসিত তার বাবা মা ও পরিবারের সদস্যরা। তার এই বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ যাতে ঘটে তার জন্য আরও সচেষ্ট আসামকুল-জেসমিনা দম্পতি। এখনও স্কুলে যায়নি ছোট্ট আবির। কিন্তু, তাঁরা চান ছেলে যেন ভবিষ্যতে বড় আমলা হয়। পরিবারের সবাই চান, সে বড় হয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করুক।