হরিয়ানা: দুই মুসলিম ট্রাক চালকের উপর গো-রক্ষকদের হামলা
পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক:
হরিয়ানার কেএমপি এক্সপ্রেসওয়েতে দুই মুসলিম ট্রাক চালককে গো-রক্ষকরা আক্রমণ ও লাঞ্ছিত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হামলার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে একজন চালককে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কাতরভাবে আবেদন করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু গো-রক্ষকরা তা অস্বীকার করছে।
ভিডিওতে রাজ্য পুলিশের একটি গাড়ির আলো জ্বলতে দেখা যায়। ঘটনার বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য কেএমপি এক্সপ্রেসওয়েতে কাছাকাছি থানা কোন কিছু জানাতে পারেনি বলে সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে।
উল্লেখ্য,কেন্দ্রে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যে রাজ্যে হঠাৎ গোরক্ষক বাহিনীর তাণ্ডব শুরু হয় বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করে।
মনু মানেসর ওরফে মোহিত যাদব হরিয়ানার মানেসরে বজরং দলের জেলা সভাপতি।নিজেকে তিনি গো-রক্ষক বলে দাবি করেন। ফেসবুকে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা প্রায় ৮৩ হাজার। ইউটিউবে তাঁর ভক্ত ২ লক্ষের বেশি। মনু ও তাঁর দলবল কী ভাবে গাড়ি-বাইকে চেপে হাইওয়েতে গরু পাচারকারীদের তাড়া করে, কী ভাবে তাঁদের পথ আটকে গরু উদ্ধার করে, তার অসংখ্য রোমহর্ষক দৃশ্য সেই ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যায়।
হরিয়ানার ভিওয়ানিতে একদা একটি পোড়া গাড়ির ভিতর থেকে দু’টি দগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের তদন্তে জানা যায়, পোড়া মৃতদেহ দু’টি ২৫ বছরের নাসির ও ৩৫ বছরের জুনেইদের। বাড়ি রাজস্থানের ভরতপুরে। গরু পাচারকারী সন্দেহে তাঁদের আটক করে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। তার পরে তাঁদের গাড়িতেই মৃতদেহ চাপিয়ে ২০০ কিলোমিটার দূরে ভিওয়ানিতে নিয়ে গিয়ে গাড়িসুদ্ধ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খুনের মামলায় মনু মানেসরের নাম প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসে।
হরিয়ানার এই ঘটনা ওড়িশায় খ্রিস্টান মিশনারি গ্রাহাম স্টেনস ও তাঁর দুই শিশুপুত্রকে পুড়িয়ে মারার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছিল। সেই ঘটনাতেও প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন বজরং দলের নেতা দারা সিংহ।
বেঙ্গালুরু থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে সাথানুর থানার কাছে ৩৫ বছরের ইদ্রিস পাশার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ইদ্রিসকেও গরু পাচারকারী সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়েছিল। মূল অভিযুক্ত পুনীত কেরেহাল্লি সেই বজরং দলের সক্রিয় নেতা। গত বছর জুলাইতে কর্নাটকেরই মেঙ্গালুরুতে ১৯ বছরের মাসুদকে গণধোলাই দেওয়া হয়। দু’দিন পরে প্রাণ হারানো মাসুদের দোষ ছিল, সে একটি বাছুর কিনেছিল পুষবে বলে। ধৃত আট জনের সকলেই গলায় গেরুয়া চাদর ঝোলানো বজরং দলের নেতা। কেউ গোরক্ষা প্রমুখ, কেউ সুরক্ষা প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অবশ্য এ ভাবে গোরক্ষার নামে কারও নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়াটা পছন্দ করেন না। তিনি বলে দিয়েছিলেন, হিংসা কোনও সমস্যার সমাধান নয়। কেন্দ্রে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যে রাজ্যে হঠাৎ গোরক্ষক বাহিনীর তাণ্ডব শুরু হলেও প্রধানমন্ত্রী এ সব নিয়ে নীরব ছিলেন। বছর ছয়েক আগে আমদাবাদে এক অনুষ্ঠানে তিনি আচমকাই জোর গলায় বলেছিলেন, গোরক্ষার নামে কারও হত্যা সঠিক নয়। আইন আইনের কাজ করবে। নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। গোরক্ষা, গোভক্তির আদর্শ উদাহরণ হিসাবে সে দিন মহাত্মা গান্ধি, বিনোবা ভাবেকেও স্মরণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
তার পরে অবশ্য কয়েকবছর কেটে গিয়েছে। বজরং দলের নেতারা হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কথা ভুলে গিয়েছেন! প্রধানমন্ত্রীও বোধ হয় তার জন্য অভিমান করেননি!
নরেন্দ্র মোদি যেমন গোরক্ষার নামে আইন তুলে নিতে মানা করেছিলেন। তাতে কিছুই থেমে যায়নি। বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বজরং দলের সংগঠন ফুলে ফেঁপে উঠেছে। প্রতি সপ্তাহে বজরং দলের বলোপাসনা কেন্দ্র বা কুস্তি শেখার আখড়ায় ভিড় জমেছে। হরিয়ানার মতো যে সব রাজ্য বেকারত্বের হারে শীর্ষে, সেখানে বজরং দলের রমরমা আরও বেড়েছে। ধর্মীয় মেরুকরণের প্রয়োজনে সেই বজরং দলকেই আবার মাঠে নামানো হয়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করে।