পুবের কলম প্রতিবেদক, বসিরহাট: যে সংকটময় সময়ের মধ্যে এদেশের মুসলমানরা দিন অতিবাহিত করছে তা থেকে মুক্তির পথ মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধতা। আমাদের ঐক্যের অভাবে আজ ৫০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন একটি ঐতিহ্যকে ধুলিস্যাৎ করে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের উপাসনা ক্ষেত্র হিসেবে উদ্বোধন হতে চলেছে। এ বেদনা আমাদের সকলের। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলেই বোঝা যায়, আমাদের অনৈক্য, মতভেদ তাদের এই সাফল্যকে সহজ করে দিয়েছে। আমাদের ভেদাভেদের কারণে আসামের সব সরকারি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হলো। বলতে দ্বিধা নেই, কিছু স্বার্থান্বেষী আলেম নিজেদের স্বার্থে যে ভেদাভেদ করছে তাতে আমাদের শক্তি ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। হানাফি, আহলে হাদিস, ফুরফুরা, তাবলীগ জামাত, জামাতে ইসলাম হিন্দ, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এসব সিলসিলার মধ্যে পারস্পরিক কিছু মতভেদ থাকলেও সেটাকেই বড় করে নিজেদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাকে ডেকে নিয়ে আসছি আমরা। আর এই বিচ্ছিন্নতাবাদীর কারণেই এদেশের মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষা আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট আলেম ও ঐকতান মিল্লি ইত্তেহাদ পরিষদের মুখ মুখ্য আহ্বায়ক মাওলানা আমিনুল আম্বিয়া। রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার ঐতিহ্যবাহী স্বরূপনগর ইসলামিয়া পাঠাগারের ৪২ তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর নবীর সুন্নত ও আদর্শকে সামনে রেখে আমাদের একতাবদ্ধ হতে হবে। আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা একতাবদ্ধ থাকবে’। একতাবদ্ধ থাকা ফরজ। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আলা তাকার রাকু’ তোমরা কখনো বিচ্ছিন্ন হ’য়ো না। আল্লাহর নবী বলেছেন, নামাজ, রোজা, দান অনেক সওয়াবের কাজ কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলে তাদের মধ্যে মৈত্রী তৈরি করে দেওয়া আরো বেশি সওয়াবের কাজ।
আম্বিয়া সাহেব স্বামী বিবেকানন্দের উদ্ধৃতির সূত্র ধরে বলেন , বিশ্বনবী সা. এদেশে কখনো আসেননি। এদেশের মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন ইসলামের ভালবাসার আদর্শের কারণে। তরবারি দিয়ে নয়, ইসলাম প্রচার হয়েছিল ভালোবাসা দিয়ে। আমরা নিজেদের মধ্যে সেই আদর্শ ভুলে গিয়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লড়াইয়ে লিপ্ত হচ্ছি। এ থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের একতাবদ্ধ হতে হবে। আজ গাজায় অল্প মুসলমান দেখিয়ে দিল আল্লাহর পথে দাঁড়ালে আল্লাহর সাহায্য আসবেই ইনশাআল্লাহ। এদিন পাঠাগারের সভা থেকে মুসলমানদের ঐক্যের আহ্বান জানান ঐক্যতান মিললে ইত্তেহাদ পরিষদের সংগঠক ও বিশিষ্ট শিক্ষক শাহনাওয়াজ আলম, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কাসেম আলি, ড. মোস্তফা আব্দুল কাইয়ুম, মাওলানা আব্দুল মোহিত, দাউদ আলী গাজী, পাঠাগারের সহ-সভাপতি, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, সহ সম্পাদক ইসাহাক মন্ডল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সজাগ মঞ্চ মোহাম্মদী মিশনের সম্পাদক শেখ বাহারুল ইসলাম বলেন, পিছিয়ে পড়া জাতির শিক্ষার প্রসারে আমরা একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে চাই। স্বরূপনগর ইসলামিয়া পাঠাগারেরর এই বৃহত্তর আয়োজনের পাশে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বই-পুস্তক পাঠের অভ্যাস বাড়ানোর প্রসঙ্গে বলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ডঃ শক্তিনাথ সাহা, শিক্ষক মাওলানা শামসুদ্দোহা কাসেমী ও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাওলানা শামসুল হুদা প্রমুখ। স্বরূপনগর ইসলামিয়া পাঠাগারের সূচনা ও তার ঐতিহ্য নিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজসেবী রমেন সরদার, ডা. আমির আলি প্রমুখ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পাঠাগারের সভাপতি নুরুল ইসলাম সরদার, সরুপনগর সিনিয়র মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট আজিজুল হক, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোজাম্মেল হক, শহিদ তিতুমীর মিশনের সম্পাদক রবিউল হক, সমাজসেবী নুর ইসলাম বিশ্বাস, মফিজুর রহমান প্রমুখ।
এদিন পাঠাগারের মুখপত্র আল-হামরার ১৫ তম সংখ্যা প্রকাশ করে সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পাঠ করেন মোঃ রওশন আলি। আলোর সন্ধানে পত্রিকা গোষ্ঠীর কবি শরবত আলী মন্ডল এর কবিতা গ্রন্থ- ‘ডাক দিচ্ছে নীল চাতক’ প্রকাশিত হয়। মাওলানা আব্দুর রহমান ও মাসুদ হাসান এর কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। গজল পাঠ করেন শিক্ষক জাহাঙ্গীর মৃধা, কবিতা পাঠ করেন কবি রমজান আলি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইমরান আলি ও ‘আল হামরা’ পত্রিকা সম্পাদক এনামুল হক।